পেঁয়াজের ‘ঝাঁঝ’ বেড়েছে, খানিক স্বস্তি শাকসবজিতে

নতুন ধান উঠতে শুরু করলেও চালের দাম পড়ছে না; তেল, চিনির দামও অপরিবর্তিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2022, 02:11 PM
Updated : 9 Dec 2022, 02:11 PM

কাঁচাবাজারে ক্রেতাদের পকেট খালি হওয়া যেন থামছেই না; একটি শেষ হতে না হতেই আরেক পণ্যের দাম বাড়ছে সেই ‘অজুহাত’ তুলে ধরেই। এবার পেঁয়াজের ঝাঁঝ টের পাচ্ছেন ছুটির দিনে ঢাকার বাজারে আসা ক্রেতারা।

মাঝে কিছুদিন স্থিতিশীল থাকার পর বাজারভেদে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে রান্নার অত্যাবশীয় এ পণ্যের। আগের মত বাড়তি দাম রসুনেরও, তবে ঝাঁঝ কিছুটা কমেছে আদার। মাঝে ২০০ টাকা পর্যন্ত ওঠা আদার কেজি এখন ১২০-১৩০ টাকা।

অন্যসব নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মধ্যে নতুন ধান উঠতে শুরু করলেও এখনও আগের মতই চালের দর বেশিই; আটা-ময়দা, চিনি, ডাল ও মাছ-মাংসের দামেও হেরফের নেই। বিভিন্ন জাতের মুরগির দামও অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে সরবরাহ ভালো থাকায় নাগালের মধ্যে এসেছে শীতের নানা শাকসবজির দাম; আগের চেয়ে ব্যাগ ভরে ওঠায় এটাই সামান্য কিছু স্বস্তি দিচ্ছে সদাই করতে আসা রাজধানীবাসীকে।

Also Read: চিনির খোঁজে দোকান থেকে দোকানে ক্রেতা

Also Read: ‘শুধু পেট বাঁচাতেই কেনাকাটা’

শুক্রবার ঢাকার মিরপুর, আগারগাঁও ও মহাখালী এলাকার চারটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

মিরপুর ২ নম্বর বাজারে আসা ক্রেতারা জানান, গত সপ্তাহে তারা ৩২-৩৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছেন। কিন্তু এ সপ্তাহে এসে ৪৫-৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে।

কাঁচাবাজারে এমন দরে বিক্রি হলেও মুদি দোকানে পেঁয়াজের দাম বিশেষ করে দেশি পেঁয়াজের আরও কিছুটা বেশি, প্রতি কেজি ৫৫ টাকা। কারওয়ান বাজারের এক কিলোমিটারের মধ্যে থাকা দিলু রোডের দোকানগুলোতে এ দরেই কিনতে হয়েছে এদিন।

পেঁয়াজের দাম আবার বেড়ে যাওয়ার জন্য বরাবরের মত সরবরাহ কম থাকার পুরনো অজুহাতই বিক্রেতাদের।

মিরপুর ২ নম্বর বাজারের দোকানি সালেহ আহম্মেদ বলেন, “আড়তে সরবরাহ কম, বিধায় আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। কেনা দাম বেশি হলে তো দাম বাড়বেই।”

একই সুরে কথা বলছেন আড়ৎদাররাও। মিরপুরের শাহ আলী বাজারের পেঁয়াজ-রসুন ও আদার পাইকারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ফারুক বলেন, “পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪ টাকা বেড়েছে। এজন্য খুচরা দোকানে দাম বেশি। তবে আদার দাম কম আছে। দেশি আদা ১২০ টাকা, আমদানি করাটা ১৬০ টাকা। রসুন আগের রেইটেই চলতেছে। দেশি রসুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, আর আমদানি করাটা ১২০ টাকা।“

দাম কমেনি চাল-ডাল-আটা ও ভোজ্য তেলের। মিনিকেট চাল মানভেদে আগের সপ্তাহের মতই ৬৮-৭২ টাকা, পাইজাম চাল ৬২-৬৫ টাকা এবং মোটা চাল ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।

আগারগাঁও তালতলা বাজারে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা বলেন, “নতুন ধান উঠেছে, তাও দাম বেশি। চাল ছাড়া তো এক বেলাও চলে না। এইটার দামও না কমলে পরিবার নিয়ে চলা মুশকিল।”

মিরপুরের শাহ আলী বাজারের চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে নতুন চালের সরবরাহ আরও বাড়লে শিগগির দাম কমে আসবে।

খোলা আটার কেজি আগের মতই ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং প্যাকেটজাত আটা কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সংকট কাটেনি চিনির বাজারেও। দোকানগুলোতে প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া মুশকিল, খোলা চিনি মিললেও তা ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। সয়াবিন তেলের দাম আগের মতই ১৯০ টাকা লিটার আর মসুর ডাল মানভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

তবে সপ্তাহের ব্যবধানে আরও কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গেছে শীতের সবজির বাজারে। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ বাড়ায় কমে এসেছে শীতের সব ধরনের সবজির দাম।

মিরপুর দুই নম্বর কাঁচাবাজের সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, শীতের শুরুর সপ্তাহে নতুন আলু যেখানে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে সেখানে কেজিপ্রতি তা এখন নেমে এসেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। শিমের বেলাতেও তাই। টমেটোর দাম কেজিতে কমেছে প্রায় ২০ টাকা। কমেছে বাঁধাকপি- ফুলকপি ও মূলার দামও।

মহাখালী কাঁচাবাজারে আসা ক্রেতা হাসনাঈন বলেন, “সবজির দাম বেশ কমেছে। ব্যাগভর্তি সবজি কেনা যাচ্ছে।“

গত সপ্তাহে কমে আসা নানা জাতের মুরগি ও ডিমের দাম এ সপ্তাহে স্থিতিশীল আছে, যা স্বস্তি দিচ্ছে ক্রেতাদের। প্রতি ডজন ডিম মিলছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। অন্যদিকে সোনালি মুরগির কেজি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা।

বাজারভেদে গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ৯০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

চাষের মাছের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা কমে আসলেও তার প্রভাব বাজারে খুব বেশি পড়ছে না। তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়; পাঙাস ১৯০ টাকায়; সিলভার কার্প ২৪০ থেকে ২৭০ টাকায়; রুই ২৭০ থেকে ৩০০ টাকায়; পাবদা ৩২০০ থেকে ৪০০ টাকায়; চাষের কই ২২০ টাকা; আর চিংড়ি আগের মতই আকারভেদে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা বলছেন, মাছের খাদ্যের দাম বেশি থাকায় চাষিরা কম দামে মাছ বিক্রি করছেন না। ফলে দাম বেশিই থাকছে।