প্রথম রোজায় ছুটি থাকায় ‘নতুন কিছু আসছে কি না’ দেখতে অনেকেই ঢু মেরেছেন বিপণিবিতানে; তবে ঈদে কেনাকাটা জমবে ‘স্যালারি’র পর, বলছেন দোকানিরা।
Published : 24 Mar 2023, 08:50 PM
“আজকে বন্ধ, হাতে একটু সময় আছে দুপুর অবধি। বাসায় ভাল্লাগছিল না। তাই ভাবলাম, গিয়ে দেখি নতুন কিছু আসছে কি না।“
শুক্রবার দিনের প্রথমভাগে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে কলাবাগান থেকে আসা উম্মে হাবিবা ‘যদি কিছু পছন্দ হয়’ আশা নিয়ে দোকান থেকে দোকানে ঢু দিচ্ছেন।
বিপণিবিতানের চতুর্থ তলায় দেখা মিলল তার। ঈদের কেনাকাটা শুরু করেছেন কি না এমন আলাপে বললেন, “আজকে ওইভাবে কিছু কেনার প্ল্যান নিয়ে আসিনি। তাছাড়া স্যালারি পেতে তো এখনও ৬-৭ দিন বাকি, তাই সেভাবে কেনাকাটা করা এমনিতেও সম্ভব হবে না আজ।”
তার মতো আরেক ক্রেতা ফারজানা মিলি ছিলেন ‘দেশি দশে’। বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে পছন্দের পোশাক দেখছেন তিনি। কাছে গিয়ে কথা বলতেই তিনি জানান, তারা মূলত সিনেমা দেখতে এসেছেন।
“শো শুরু হতে এখনও অনেকটা সময় বাকি। তাই ভাবলাম ঈদের কালেকশনগুলো একটু দেখি। টাকা হাতে আসলে নেক্সট উইক থেকে কেনা শুরু করব।”
এরকম চিত্র দেখা গেছে আজিজ সুপার মার্কেটেও। এ বিপণিবিতানে অনেকক্ষণ ধরে অলস ভঙ্গিতে একা একা বিভিন্ন দোকান-পাট ঘুরে পোশাক দেখছিলেন আজিমপুরের বাসিন্দা সুমি।
ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি হেসে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঠিক তা না, এই জাস্ট এমনি এলাম। দেখছি, কিছু পাওয়া-টাওয়া যায় কি না।”
তবে বসুন্ধরা এবং আজিজে অতটা ভিড় আজ না থাকলেও সায়েন্সল্যাবের পাঞ্জাবির দোকানগুলো এবং নিউ মার্কেট এলাকার মার্কেটগুলোতে ছিল লক্ষণীয় মাত্রার ভিড়।
শুক্রবার সবে শুরু হয়েছে রোজা। ঈদ আসতে এখনও ঢের বাকি। তবে রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোতে এখন থেকেই ঘুরে-ফিরে বেড়াতে দেখা গেছে উৎসুক ক্রেতা-দর্শনার্থীদের। তাদের মধ্যে সবাই যে কিনতে এসেছেন, বিষয়টা তেমন নয়।
দোকান থেকে দোকানে ঘুরছেন তারা, পছন্দ হচ্ছে হলে দামও জেনে নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পরের ভিড় ভাট্টায় ঝুট ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই কিনে ফেলছেন। তবে এ ক্রেতা-দর্শনার্থীদের অধিকাংশই এখন তাদের ‘স্যালারি ডে’ এর দিন গুণছেন।
অপরদিকে বছরের সবচেয়ে বড় এ কেনাকাটার উৎসবকে সামনে রেখে দোকানিরা ঈদের পোশাক সংগ্রহের কাজ মোটামুটি গুছিয়ে নিয়েছেন। তারা জানালেন, মোটামুটি সংগ্রহের বড় অংশ এসে গেছে দোকানে। কেনাবেচা জমে উঠতে থাকলে সপ্তাহে সপ্তাহে নতুন আরও কিছু আসতে থাকবে।
শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর অবধি রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, আজিজ সুপার মার্কেট, সায়েন্স ল্যাব, নূর জাহান মার্কেট ও চাঁদনী চক ঘুরে দেখা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির সুযোগ কাজে লাগিয়ে রোজার প্রথম দিনেই মানুষজন দোকানপাট ঘুরে ঘুরে ‘ঈদ কালেকশন’ দেখছেন।
দুপুরের আগেভাগে সায়েন্স ল্যাবের ‘চাঁদ সনস্’ নামের দোকানে পা রাখতেই দেখা যায় অনেকগুলো মানুষ একসঙ্গে পাঞ্জাবি দেখছেন। তাদের একজন নীলিমা আহমেদ জানান, “ঈদের পরেই আমার দেবরের বিয়ে, তাই ভিড় বাড়ার আগেই যতটা পারি কিনে রাখছি। তাছাড়া ২০ রোজার পর আমরা ঢাকায় থাকবও না।”
চাঁদনী চক মার্কেটের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। মাকে সঙ্গে নিয়ে এখানে সালোয়ার-কামিজ দেখতে এসেছেন সামিহা।
তিনি বলেন, “আজকে রমজানের প্রথম উইকেন্ড। এরপর তো দেখতে দেখতে সময় চলে যাবে। ভিড়ের জন্য কিছু দেখে-শুনে কিনতেও পারবো না। সেজন্য আজই চলে আসছি।”
কী বলছেন দোকানদাররা?
সামিহার উদ্দেশ্য কেনাকাটা হলেও এসময়ে দোকানে ভিড় করা বেশির ভাগ ক্রেতাই ‘জিনিসপত্র দেখা আর দাম-টাম সমন্ধে’ ধারণা নিতে এসেছেন বলে মনে করেন চাঁদনী চকের ফয়সাল টেক্সটাইলের বিক্রেতা আশিক।
তিনি বলেন, “যা ভিড় দেখতেছেন, এইডা হুদাই। এমনি ঘুরতে আসছে। আমাগো কেনাকাটা অহনো শুরু হয় না। আর দুই তিনদিন পর কেনাবেচা পুরাদমে শুরু হইবো।“
তবে ঈদের জন্য পোশাকের বিশেষ সংগ্রহ তারা দোকানে তুলে ফেলেছেন জানিয়ে বলেন, “বাকিগুলাও আইবো সপ্তায় সপ্তায়।”
শফিক টেক্সটাইলের স্টাফ মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, “ঈদের কালেকশন উইঠা গেছে সেই কবে। এইটা তো শবে বরাতের রাত থেকেই আসা শুরু করে। কিন্তু বিক্রি শুরু হয় নাই এখনও। আরও সাত দিন গেলে পরে শুরু হবে। আর টাকা-পয়সাও তো থাকা লাগবে মানুষের হাতে।”
সায়েন্স ল্যাবের ‘চাঁদ সনস্’ এর জুয়েল মাহমুদও একই কথা বললেন। তার মতে, “রমজান শুরুই তো হইলো আজকে। আজকে যাদেরকে দেখতেছেন, এরা এমনি আসছে। অনেকের আবার ইমার্জেন্সি পাঞ্জাবি কেনা দরকার। কিন্তু ঈদের বেচাকেনা বলতে যা বুঝায়, ওইটা আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হবে।”
তবে ঈদের অধিকাংশ পোশাক সংগ্রহের কাজ সেরে ফেলেছেন বলে জানান তিনি।
প্রস্তুতিতে বেশির ভাগ দোকানি এগিয়ে থাকলেও অনেকে ঈদের পোশাক তুলতে আরও সময় নেওয়ার কথা জানালেন।
সায়েন্সল্যাবের এমক্রাফট ৩ এ বিক্রয় কর্মী কাওসার আহমেদ মাসের শেষভাগে রোজা শুরুকে এর কারণ হিসেবে তুলে ধরে বলেন, “এত আগে তুলে কি করব? কেনাকাটা শুরু তো আরও দুই চার রোজা পর। আর এবার রোজাটা শুরুও হইছে মাসের শেষের দিকে। চার-পাঁচদিন পর সবাই স্যালারি পাবে। তখন তারাও হাসিমুখে কিনবে, আমরাও বেচব।”
আজিজ সুপারমার্কেটের ‘দেশীয়’তে দুই বছর ধরে কাজ করছেন লাবনী আক্তার। এ সময়কার বেচাবিক্রি খুব সুবিধার না হলেও দোকানে ‘ঈদের নতুন কালেকশন’ তোলা হয়েছে বলে জানান। পরের সপ্তাহ থেকে ক্রেতার দেখা পাবার আশা তাদের।
তবে একই বিপণিবিতানের লাম্মিক্রাফট এর বিক্রেতা পূর্ণিমা এখনই বিক্রি বাড়ার তথ্য দিলেন।
তিনি বলেন, “আজকে একটু কম মানুষ। কারণ ছুটির দিন, তারপর রোজার প্রথম দিন। আজকে অনেকেই বাসায় থাকছেন। পরিবারের সবার সঙ্গে ইফতার করবেন, তাই।”
বসুন্ধরা সিটির কে ক্রাফটের বিক্রয় কর্মী সাজ্জাদুল ইসলামও এবার কেনাকাটা আগেভাগে শুরু হওয়ার কথা জানালেন।
তার মতে, “এবার স্কুল কলেজ আগে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঈদের কেনাকাটাটা সম্ভবত একটু আগে থেকে শুরু হয়েছে। সেজন্য গত এক সপ্তাহ ধরেই আমাদের বিক্রি মোটামুটি ভালো চলছে। আশা করছি, ১০ রমজান থেকে আমাদের বিক্রি পুরোদমে শুরু হবে। আর ততদিনে আমাদের কালেকশন আরও বাড়বে।"