কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বাজারে অর্থপ্রবাহ কমিয়ে রাখার যে নীতি ঠিক করেছে, ঋণপ্রবাহের এ প্রবৃদ্ধি সেটিরও নিচে নেমে গেল।
Published : 03 Jan 2025, 12:34 AM
সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি আর অর্থনীতিতে ধীর গতির জেরে বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের নিম্নমুখী প্রবণতা আগে থেকেই ছিল, যা আরও কমে ৪২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমেছে; নভেম্বরে এ হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
এর আগে ২০২১ সালের মে মাসে কোভিড মহামারীর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছিল।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশ করা বেসরকারি খাতের ঋণের পরিসংখ্যান বলছে, মূলত জুলাই-অগাস্ট আন্দোলন শুরুর পর থেকে এ খাতে প্রবৃদ্ধি আরও কমতে থাকে।
গত জুলাইয়ে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও সরকার পতনের মাসে (অগাস্ট) তা নামে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে।
পরের মাস সেপ্টেম্বরে তা আরও কমে হয় ৯ দশমিক ২০ শতাংশ; যেটি ছিল তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। নিম্নমুখী এ হার পরের মাসে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে।
সরকার পতনের পর নতুন নতুন নীতিমালা, শ্রমিক অসন্তোষ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনীতিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন মামলায় আসামি করা, মূল্যস্ফীতি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতিসহ নানা কারণে বিনিয়োগে নিম্নমুখী প্রবণতা প্রকাশ পাচ্ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বাজারে অর্থপ্রবাহ কমিয়ে রাখার যে নীতি ঠিক করেছে, ঋণপ্রবাহের এই প্রবৃদ্ধি তারও নিচে নেমে গেল।
সংকোচনমূলক নীতি বজায় রাখার ধারায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে এই লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন না অনেক ব্যবসায়ী। এ কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কমিয়ে দিয়েছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীরা ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ অবস্থানে রয়েছেন। রাজনীতি ও অর্থনীতি কোন দিকে যাচ্ছে, সে বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষণ করছেন।
“অনেক জায়গায় গ্যাস সংকট রয়েছে। তাতে উৎপাদনে ব্যাহত হচ্ছে। তাই নতুন বিনিয়োগে অনেকটা শ্লথ এসেছে।”
ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ মনে করেন, ব্যাংক ঋণে সুদের হার বেড়েছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা ঋণ নিলে খরচও বেড়ে যায়। আবার ব্যবসা করার জন্য পরিবেশ উপযুক্ত মনেও করছেন না তারা। যে কারণে ব্যাংক ঋণ নেওয়া আগের চেয়ে কমেছে।
তার মতে, এখন ঋণ প্রবৃদ্ধি কম হলেও সামনে বাড়বে।
অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এবিসিসিআই) সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করছেন কম। তারা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চান।
“ব্যাংক ঋণে সুদের হার ১৫ শতাংশের বেশি। তাতে কস্ট অব ফান্ড বেড়ে যায়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে বিষয়গুলো বিবেচনায় নেন ব্যবসায়ীরা।”
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেলে ব্যবসার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমে যাবে। সেই সঙ্গে কমবে নতুন শিল্প স্থাপন বা শিল্প সম্প্রসারণের গতি। অবধারিতভাবে তার প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানে।