ডিমের দাম ডজনে ১৫ টাকা, সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। শীতের সবজির সরবরাহ সামনে বাড়লে দাম আরও কমবে, বলছেন বিক্রেতারা।
Published : 18 Oct 2024, 10:09 PM
সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমতে শুরু করেছে ডিম ও সবজির দর, সামনে দাম আরও কমে আসবে, এমন আশা করছেন বিক্রেতারাই। তবে চড়তে শুরু করেছে মুরগির দাম।
বিক্রেতারা বলছেন, ডিম আর সবজির সরবরাহ বেড়েছে, অন্যদিকে মুরগির সরবরাহ কিছুটা কমেছে। এতেই প্রভাব পড়েছে বাজারে।
শুক্রবার কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণির কলমিলতা কাঁচা বাজার ও গুদারাঘাট কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের সপ্তাহের তুলনায় সবজিতে কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। ডিমের দাম ডজনে কমেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
কলমিলতা কাঁচা বাজারের বিক্রেতা মো. রিয়াজুল হক বলেন, “নতুন নতুন মাল আসতেছে আর দাম কমতেছে। দাম আরও কমবে।”
এই তিন বাজারে আর ডিমের ডজন কমে ১৪৫ টাকায় আর হালি ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সাদা ও লাল ডিমে হালিতে কমেছে ৫ টাকা, আর ডজনে কমেছে ১৫ টাকা।
হাঁসের ডিমের দাম আগের মতোই ৭৫ টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে, তাতে প্রতি ডজনের দাম পড়ছে ২২০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “গতকাল থেকে আমরা কমে কিনতে পারতেছি, তাই কম দামেই বিক্রি করতে পারতেছি।”
তবে পাড়া মহল্লায় সব জায়গায় এখনও দাম অতটা কমেনি।
কল্যাণপুর থেকে কারওয়ান বাজারে এসে দাম কম জেনে ডিম কিনে নিলেন নাজমুল হক।
তিনি বলেন, “এলাকার বাজারে এখনও ৬০ টাকা হালি। তবে কারওয়ান বাজারে ১৪৫ টাকা ডজনে পেলাম। ডিমের দাম কমলেও এলাকায় সেটা এখনও প্রভাব পড়েনি।”
তবে ডিমের দাম কমলেও এই তিন বাজারে মুরগির দাম বেড়ে যেতে দেখা গেছে।
আগের সপ্তাহে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগি ১০ টাকা বেড়ে ২১০ টাকা কেজি আর সোনালি মুরগিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়।
পাড়া মহল্লায় মুরগির দাম এই তিন বাজার থেকে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা করে বেশি।
কারওয়ান বাজারের ফারুক চিকেন ব্রয়লারের বিক্রেতা দুলাল আহমেদ বলেন, “দুইবার দুই এলাকায় বন্যা হইলো। শেষে উত্তরবঙ্গের বন্যায় বেশি সমস্যা হয়েছে। এতে ছোট খামারি যারা ছিল, তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্যই দাম বাড়ছে। তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাচ্ছে।”
গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়, খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা দরে।
মাছ বাজারে বড় ধরনের উত্থান পতন নেই।
আকারভেদে চাষের পাবদা মাছ বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়, মাঝারি আকারের রুই ৩২০ থেকে ৪২০ টাকায়, কাতলের কেজি ২৮০ থেকে ৩২০ আর ‘গরিবের’ পাঙাস ২০০ টাকায়।
গুদারাঘাট কাঁচা বাজারের মাছ বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, “কিছু মাছের দাম কমেছে, কিছু মাছের বেড়েছে।”
তবে হঠাৎ লাফ দিয়ে চাষের কৈ ছুঁয়েছে ৩০০ টাকা, মাঝারি আকারের তেলাপিয়ার দাম বেড়ে হয়েছে ২২০ টাকা।
সবজির দাম পড়ছে
দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ভোগানোর পর সবজির দাম কমে আসতে দেখা গেল।
সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে ঢ্যাঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, ২০ টাকা কমে করলার নাম নেমেছে ৮০তে;, বরবটির কেজিও কমেছে ২০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
১০ টাকা কমে চিচিঙ্গা ৭০ টাকায় ও লাউ পাওয়া যাচ্ছে আকার ভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। ক্রেতারা গত সপ্তাহের তুলনায় ৩০ টাকা কমে ধুন্দল কিনতে পারছে ৭০ টাকায়।
উচ্ছে ও কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে আগের মতই চড়া দামেই ১০০ টাকায়, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
ঝিঙা ৮০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও পটল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এসব বাজারে।
শীতের আগাম শিমের দাম নেমেছে ২০০ টাকায়।
সপ্তাহের ব্যবধানে টম্যাটোর দাম কমেছে কেজিতে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। ১৮০ টাকা দরে কিনতে পেরেছেন ক্রেতারা।
আরেক আলোচিত পণ্য মরিচের দামও কমে এসেছে। গত শুক্রবার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও সেটি এখন পাওয়া যাচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা আব্দুল বাছের বলেন, “ভারত থেকে সরবরাহ বাড়তেছে, তাই দাম কমতেছে।”
এই বাজারে মরিচের প্রায় সবই ভারতীয় বলে তথ্য দিলেন বিক্রেতারা। তাদের একজন আব্দুল বাছের বললেন, “পূজার ছুটির কারণে কয়েকদিন আমদানি বন্ধ থাকায় দাম বেড়েছিল। এখন আমদানি স্বাভাবিক, তাই সামনে মরিচের দাম আরও কমবে।”
তবে বেগুনের দাম বেড়েছে। কারওয়ান বাজারে গোল বেগুন ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা ও লম্বা বেগুন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে হতে দেখা গেছে, যা গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা বেশি।
গুদারাঘাট বাজারে দাম একটু বেশি।
সবজি বিক্রেতা মো. সুজন মিয়া বলেন, “আমরা মালামাল কারওয়ান বাজার থেকে কিনে আনি। তাই কিছু লাভ রেখে তো বেচতে হয়।”
এই বাজারে লাল শাক ও ডাটা শাকের প্রতি আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায় আর পুঁই শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে।
আলু-পেঁয়াজেন যে চিত্র
কারওয়ান বাজারে পাবনার পেঁয়াজ পাইকারিতে কেজিতে ২ টাকা কমে ১১৫ থেকে ১১৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেলেও ফরিদপুরের পেঁয়াজ আগের মতো বিক্রি হচ্ছে ১০৪ থেকে ১০৬ টাকা দরেই।
খুচরায় ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
ভারতীয় পেঁয়াজের দামে কোনো পরিবর্তন নেই, প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯২ থেকে ৯৫ টাকায়।
ভারতীয় পেঁয়াজের দর কম থাকার পরও দেশি পেঁয়াজের দর কমছে না কেন- প্রশ্নে কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা বাবু শেখ বলেন, “ভারতীয় পেঁয়াজের দর কম হলেও দেশি পেঁয়াজে মানুষের চাহিদা বেশি। দেশিগুলো মানুষ বেশি কিনে। তাই পেঁয়াজের দাম কমতেছে না।”
বাজারে খুচরায় আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়।
তবে পাড়া মহল্লায় পেঁয়াজের কেজি ১২৫ টাকা, আর আলু ৬০ টাকায় বিক্রি হওয়ার তথ্য জানা গেছে।
ক্রেতা মাজেদ বলেন, “বাজারে দাম কমলেও এলাকার মুদি দোকানিরা দাম কমায় না খুব একটা।”