ভুটানের ঐতিহ্যবাহী পণ্য নিয়ে ২৫টি কোম্পানি গুলশান শুটিং ক্লাবে বাণিজ্য মেলায় অংশ নিচ্ছে।
Published : 23 Jun 2023, 03:03 PM
বাংলাদেশের ট্রানজিট সুবিধা ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভুটানকে আঞ্চলিক বাণিজ্যে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
শুক্রবার ঢাকায় প্রথমবারের মত শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী ‘ভুটান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মেলা’র উদ্বোধনী পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
ভুটানের ঐতিহ্যবাহী পণ্য নিয়ে ২৫টি কোম্পানি গুলশান শুটিং ক্লাবে এ মেলায় অংশ নিচ্ছে। পাশপাশি মেলা প্রাঙ্গণে বিনিয়োগ বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
ভুটানের বাণিজ্য, শিল্প ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের ভুটান কান্ট্রি অফিস এ মেলার আয়োজন করে।
আয়োজকদের এক বার্তায় বলা হয়, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি বা পিটিএ স্বাক্ষরিত হলেও মহামারী ও অন্যান্য বাধার কারণে এই চুক্তি কাজে লাগিয়ে বাণিজ্য বাড়ানো যায়নি। সে কারণে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সম্মিলন ঘটিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের সম্ভাবনার দ্বারগুলো উন্মুক্ত করের লক্ষ্যে মেলার এই আয়োজন।
বাণিজ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, “ভূমিবেষ্টিত দেশ ভুটানের জন্য ট্রানজিট সুবিধা দিতে আমরা চলতি বছর মুভমেন্ট অব ট্রাফিক ইন ট্রানজিট অ্যান্ড প্রটোকল স্বাক্ষর করেছি। এই চুক্তি বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি আঞ্চলিক কানেক্টিভিটিও জোরদার করবে।
“বাংলাদেশকে এ অঞ্চলের কানেক্টিভিটি হাব বলা চলে। আমাদের বিশেষায়িত রেললাইন কানেক্টিভিটি ও ট্রানজিট সুবিধা দুই অঞ্চলকে একত্রিত করেছে। এর বাইরে রয়েছে উত্তরবঙ্গে সৈয়দপুর বিমানবন্দর, যার সুবিধা কাজে লাগাতে পারে ভুটানও।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ভুটানের সঙ্গে পর্যটন যোগাযোগও বাড়াতে আগ্রহী। ভুটানের টুরিস্টদের জন্য আমরা ভিসা প্রক্রিয়া অনেক সহজ করেছি।”
ভুটানকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটানকেও বাংলাদেশে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্ন রপ্তানিমুখী খাতে আমাদের প্রচুর দক্ষ শ্রমিক রয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে স্বস্তায় শ্রমিক পাওয়া যায়।”
কোভিড ও ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীর অনেক দেশের মত বাংলাদেশের অর্থনীতিও যে সঙ্কুচিত হয়েছে, সে কথাও বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এই পিছিয়ে পড়া দশা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রতিবেশীসহ সব দেশের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যের দিকে নজর দিচ্ছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে আঞ্চলিক সমন্বয়ের দিকে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে অর্থনৈতিক অঞ্চল দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তাব করেছেন।
ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা ও বিনিয়োগ এগোচ্ছে শ্লথ গাতিতে। ২০২১-২০২২ সালে দুই দেশের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪৫ দশমিক ০৬ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ভুটানে ওষুধ, সিরামিক ও পোশাক পণ্য বিক্রি করে। আর ভুটান থেকে আসে ক্যালশিয়াম কার্বাইট, সিমেন্ট ফেরোসিলিকন ও বিভিন্ন রকম খাদ্যপণ্য।
শুটিং ক্লাবের মেলাতেও বিভিন্ন রকম চা, সুগন্ধি, সুপারি, পানীয়, মসলা ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক নিয়ে সাজানো হয়েছে স্টলগুলো।
বাংলাদেশে ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েনশিল, ভুটানের বাণিজ্য দপ্তরের মহাপরিচালক সোনাম তানজিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।