ডিসেম্বর শেষে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১৯২ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৪৯২ কোটি ২০ লাখ ডলার।
Published : 12 Feb 2024, 09:37 PM
চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে চার দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের অর্থবছরের এই সময়ের তুলনায় ৬২ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল এক হাজার ২৩১ কোটি ডলার। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বের সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল চার দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার।
সোমবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের হালানাগদ তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ ২৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি করেছে।
তার বিপরীতে আমদানি করেছে ৩০ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা। সব মিলিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে চার দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার।
চলতি হিসাবে বড় উদ্বৃত্ত
গত ডিসেম্বর শেষে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১৯২ কোটি ৭০ লাখ ডলারে, এক মাসে আগেও যা ছিল মাত্র ৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর শেষে এ হিসাবে ঘাটতি ছিল ৪৯২ কোটি ২০ লাখ ডলার।
চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা মানে নিয়মিত লেনদেনে কোনো ঋণ করতে হয় না দেশকে। আর ঘাটতি থাকলে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
নানামুখী চাপে পড়ে ২০২২ সালের জুন শেষেও এ হিসাবে বড় ঘাটতি ছিল। আমদানি কমানোসহ বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমিয়ে আনার পর ২০২৩ সালের জুলাইতে এ হিসাব ইতিবাচক ধারায় ফেরে।
আর্থিক হিসাবের ঘাটতিও কমল
গত ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশের আর্থিক হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস শেষে উদ্বৃত্ত ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে অনেক পিছিয়ে থাকলেও ঘাটতি কমতে শুরু করেছে। নভেম্বরে যেখানে ঘটতি ছিল পাঁচ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার, ডিসেম্বরে তা পাঁচ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
এই সময়ে সার্বিক ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালেন্স) ঘাটতিও কিছুটা কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-ডিসেম্বরে এ হিসাবে ঘাটতি দেখা রয়েছে তিন দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ ডিসেম্বর শেষে ঘাটতি ছিল ছয় দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার।
এক বছরের ব্যবধানে সার্বিক ভারসাম্যর ঘাটতি কমেছে দুই দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার বা ৪৩ শতাংশ।
কিছুটা স্বস্তি
চাপে থাকা অর্থনীতিতে চলতি হিসাবের এই চিত্র অর্থনীতিকে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে গত ছয় মাস ধরে। চলতি হিসাবের এ উদ্বৃত্তের পেছনে রেমিটেন্সের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনোমিস্ট জাহিদ হোসেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “রেমিটেন্স প্রবাহ আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে আমাদের। বিনিময় হারকে যদি আরো বাজারমুখী করা যায়, তাহলে ভালো হয়। এখন যদি রপ্তানি আয় বাড়ানো যায়, তাহলে বৈদেশিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত বাকি সূচকগুলো যেভাবে মন্দায় আছে তা ইতিবাচক অবস্থানের দিকে যেতে শক্তি পাবে।’’
বাণিজ্য ঘাটতি ও সার্বিক ভারসাম্যের ঘাটতি কমে আসা ‘আশা জাগাচ্ছে’ মন্তব্য করে জাহিদ হোসেন বলেন, “আমাদের অর্থনীতিতে কিন্তু চ্যালেঞ্জগুলো রয়ে গেছে। এ থেকে স্থিতিশীল পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত কার্যকর উদ্যোগগুলো নিতে হবে।’’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, রেমিটেন্স বৃদ্ধি ও আমদানি খরচ কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক লেনদেনের তিন সূচকের ঘাটতি দিন দিন কমছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ডিসেম্বর শেষে অর্থনীতি আরো মন্দ হয়নি এটাই সান্ত্বনা। এখন উঠে দাঁড়াতে প্রয়োজন বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে জোড়ালো পদক্ষেপ, পাইপলাইনে থাকা বৈদেশিক সহায়তা দ্রুত ছাড় করা।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রেমিটেন্স বেড়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দুই দশমিক ৯১ শতাংশ বা ৩০ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
গত জুলাই-ডিসেম্বরে রেমিটেন্স এসেছে দেশে ১০ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার; আর আগের ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার।
তবে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বৃদ্ধির বিপরীতে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) এবার কমে যাওয়ায় আর্থিক হিসাব এখনো চাপের মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আবু ইউসুফ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ হয়েছে ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার, আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৭৯ কোটি ২০ লাখ ডলার।
এবার বৈদেশিক দায় পরিশোধ বেড়েছে ২০ শতাংশ বেশি বা ১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে এক দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের তুলনায় যা ২৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ বা ৬৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার কম।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এফডিআই এসেছিল দুই দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।
অধ্যাপক আবু ইউসুফ বলেন, “নির্বাচন ঘিরে বিনিয়োগ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল, তা কেটে গেছে। এখন বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করছি। আগামী ছয় মাসে অর্থনীতি শক্ত অবস্থানে যেতে পারবে। এখন শুধু নিট রিজার্ভ যদি ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে রাখা যায়, তাহলে চিন্তা থাকবে না।’’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ এর বিপিএম সিক্স অনুযায়ী বাংলাদেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার।
হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ নেমে আসে ১৯ দশমিক ৯৫ বিলিয়নে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস হিসাবে তা ২৫ বিলিয়ন।