কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে চালিভাঙ্গায় প্রায় ১৬১ একর এলাকা নিয়ে হবে ‘তিতাস ইকোনমিক জোন’, যা পরবর্তীতে ৪০০ একরে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
Published : 20 Dec 2023, 09:31 PM
প্রায় দেড় বছর পর আরেকটি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে প্রাক যোগ্যতা সনদ দিল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেজা।
বুধবার আগারগাঁওয়ে বেজা কার্যালয়ে মেঘনা গ্রুপের মালিকানায় ‘তিতাস ইকোনমিক জোন’কে প্রাক যোগ্যতা সনদ দেওয়া হয়।
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে চালিভাঙ্গায় প্রায় ১৬১ একর এলাকা নিয়ে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলকে পরবর্তীতে ৪০০ একরে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সর্বশেষ ২০২২ সালের জুনে সিটি গ্রুপকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯৪ একর জমির উপর ‘পূর্বগাঁও ইকোনমিক জোন’ গড়ে তোলার প্রাক যোগ্যতা সনদ দেওয়া হয়েছিল।
সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মিশনে থাকা বেজা এ নিয়ে ২২টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে সনদ দিতে পেরেছে।
সব মিলিয়ে ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে, যার মধ্যে সরকারি ৬৮টি এবং বেসরকারি ২৯টি। ইতোমধ্যে ৩০টির বেশি সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল চূড়ান্ত ও নির্মাণের পর্যায়ে রয়েছে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, মেঘনা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বেজা জানায়, প্রস্তাবিত জোনে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদনের জন্য শিল্প স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলটিকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জোন হিসেবে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কারখানা ও প্রশাসনিক ভবন, পণ্যাগার, লজিস্টিকস এলাকা, পানি ও বর্জ্য শোধনাগার, সড়ক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা গড়ে তোলা হবে। এছাড়া সবুজায়ন, স্বাস্থ্য সেবা এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা হবে।
এই জোনে তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে বলে আশা করছে মেঘনা গ্রুপ। এর সফল বাস্তবায়ন হলে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বলে মেঘনা গ্রুপ বেজাকে জানিয়েছে।
জোনে বিভিন্ন ভারী শিল্প, পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি, পেপার ও বোর্ড, ফার্মাসিউটিক্যালস, তথ্য প্রযুক্তি পণ্য, পিভিসি, গার্মেন্টস, কেমিকেল, প্লাস্টিক পণ্য, প্যাকেজিং ও স্টিলসহ বৈচিত্র্যময় পণ্য প্রস্তুত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
মেঘনা গ্রুপ ইতোমধ্যে তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ গুছিয়ে এনেছে। এগুলো হচ্ছে- মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকনোমিক জোন (৮০% জমি বরাদ্দ সম্পন্ন), মেঘনা ইকনমিক জোন (১০০% জমি বরাদ্দ সম্পন্ন) এবং কুমিল্লা ইকনমিক জোন (২৫% জমি বরাদ্দ সম্পন্ন)।
এসব জোনে সর্বমোট ২৭টি শিল্প কারখানা হয়েছে এবং প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। আরও কিছু শিল্প কারখানা নির্মাণ ও সম্প্রসারণের কাজ চলমান। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে সাতটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করেছে।
অনুষ্ঠানে বেজার পক্ষ থেকে জানান হয়, বেজার চূড়ান্ত লাইসেন্স পাওয়া বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে ৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। এসব অঞ্চলে মোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬২টি। এর মধ্যে ৩৮টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে রয়েছে এবং ২৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এবং ৪২ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
মোটর সাইকেল, সিমেন্ট, ভোজ্য তেল, ব্যাগ, পেপার, টিস্যু, খেলনা, বেভারেজ এবং খাদ্য দ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্য এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান হতে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন অনুষ্ঠানে বলেন, “ঢাকার নিকটবর্তী স্থানে হওয়ায় তিতাস ইকোনমিক জোন দেশ-বিদেশি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাবে। আগের অভিজ্ঞতা ও সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে তিতাস ইকোনমিক জোনেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জমি বরাদ্দে প্রাধান্য পাবে।”
মেঘনা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল অনুষ্ঠানে বলেন, “দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে এবং রপ্তানিযোগ্য পণ্য প্রস্তুতিতে মেঘনা গ্রুপ সুনামের সাথে কাজ করে এসেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের মাধ্যমে তার প্রতিষ্ঠান দেশ এবং দেশের বাইরের বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে আগ্রহী।”