১৩ ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে ‘মৌখিক’ এ নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
Published : 24 Dec 2024, 11:21 PM
নতুন করে আবার ডলারের দাম বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে রেমিটেন্সে ডলারের মূল্য ১২৩ টাকার বেশি না দিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এ বৈঠক হয়, যাতে ১৩টি ব্যাংকের ট্রেজিারি বিভাগের প্রধানদের ডাকা হয়েছিল।
এ বৈঠকে রেমিটেন্সের ডলার কেনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা পরিশোধের ‘মৌখিক’ এ নির্দেশনা আসে বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এগুলো ব্যাংকের গোপনীয় তথ্য; সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে এই বিষয়ে কোনো কিছু জানাচ্ছে না।”
দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। তিনি ব্যাংকগুলোকে ১২৩ টাকার সীমা বেঁধে দেন বলে ট্রেজারিপ্রধানরা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে জাকির হোসেন চৌধুরীকে একাধিকবার মোবাইলে ফোন করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।
গত মে মাসে ক্রলিং পেগ চালুর পর বেশ কিছুদিন ডলারের দর ১২০ টাকার আশপাশে থাকলেও দুই সপ্তাহ থেকে আবার দর বাড়তে শুরু করে। ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার কেনা শুরু করে।
এ অবস্থায় গত সপ্তাহে কয়েকটি ব্যাংকের কাছে পৃথক চিঠি দিয়ে বেশি দামে ডলার কেনার ব্যাখ্যা চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এসব চিঠিতে বলা হয়, এসব ব্যাংক রেমিটেন্স কেনার সময় বিনিময় হারের চেয়ে বেশি দর দেওয়ায় ডলার বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।
এজন্য এসব ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সেই বিষয়ে ২২ ডিসেম্বরেরে মধ্যে ব্যাখ্যা চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলো ব্যাখ্যা পাঠায়। এরপর মঙ্গলবার ১৩ ট্রেজারি প্রধানকে বৈঠকে ডাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৈঠকে উপস্থিত একটি ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধান বলেন, “২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে মোবাইলে ফোন করে বলেছে, ১২৩ টাকার বেশি যেন রেমিটেন্সের ডলার না দেওয়া হয়।
“আর মঙ্গলবার ১৩ ব্যাংকের ট্রেজারিকে ডেকে আলোচনা করে একই নির্দেশনাই দেওয়া হয়েছে। এটা মৌখিকভাবে বলা হয়েছে।”
‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বেশি দামে ডলার কেনার ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বর্তমানে ডলারের চাহিদা বাড়ছে। ব্যাংকখাতে এটা খুবই স্বাভাবিক যে অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে পেমেন্ট বেশি করতে হয়।
“কারণ এই সময় সারের এলসি খোলার চাহিদা থাকে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক সারের এলসি খোলায় প্রাধান্য দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। এর বাইরে নিয়মিত যেসব পেমেন্ট, সেটা তো থাকেই।”
ওই কর্মকর্তা বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। উল্টো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনছে। তাতে ডলার বাজারে এক রকমের চাপ তৈরি হয়েছে।
“এখন সরকারি অনেক এলসি বেসরকারি ব্যাংকে খোলা হচ্ছে। তাই বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে সেই পেমেন্টগুলো পরিশোধ করতে হচ্ছে।”
আরেকটি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বলেন, “বেশি রেমিটেন্স পাওয়ার জন্য ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট থেকে আমাদের চাপ দেওয়া হয়। আবার দাম বেশি দেওয়া হলে আমাদের কাছে জবাবও চাওয়া হয়।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে দেশে ২ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স আসে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি।
ব্যাংকাররা বলছেন, আড়াই শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি প্রবাসীরা ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠালে প্রতি ডলারে ১২০ টাকার বেশি পাচ্ছেন। মূলত এ কারণেই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স বাড়ছে।
গত মে মাসে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে ডলারের দর এক লাফে ১১০ থেকে ১১৭ টাকায় উঠে যায়। পরে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্সের দর নির্ধারণ করা হয় সর্বোচ্চ ১২০ টাকা।