”আমি যেটা বলি কক্সবাজার কিন্তু আমাদের প্রধান বিনোদনকেন্দ্র। এটার উন্নয়ন কিন্তু হবেই, হতে হবেই। এই জায়গাটাকে (বিমানবন্দর) ডেভেলপ করলে অবশ্যই আমরা বেনিফিটেড হব, বলেন বেবিচক চেয়ারম্যান।
Published : 17 Jan 2025, 01:35 AM
প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের সবচেয়ে লম্বা রানওয়ে নির্মাণ নিয়ে ওঠা সমালোচনার জবাবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক সম্ভাবনাই দেখছে।
এ রানওয়ের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নকারী দেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বলছে, নির্মাণের আগে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সম্ভাবনা যাচাই ও সমীক্ষা করেই কক্সবাজার বিমানবন্দরে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। আগের সরকার ’যা খরচ করার করেছে’, এখন তারা প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করে এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়।
বৃহস্পতিবার দেশের এভিয়েশন খাতের চলমান প্রকল্পগুলো নিয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে এমন বক্তব্য দেন বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া।
তিনি যশোর ও সিলেট বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের ত্রুটি নিয়ে ওঠা অভিযোগ এবং বগুড়া বিমানবন্দরের রানওয়ে উন্নয়নের বিষয়েও কথা বলেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে এই মতবিনিময়ে প্রথমেই ওঠে কক্সবাজার বিমানবন্দরের কথা। সেখানে কবে নাগাদ বোয়িং ৭৭৭ এর মত সুপরিসর উড়োজাহাজ নামবে বলে আশা করছেন- এমন প্রশ্নে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, “এখানে ৭৭৭ নামতে গেলে আরও কিছু বিষয় আছে। এটা করতে গেলে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর ডিক্লেয়ার করতে হবে, যার জন্য আমাদের প্রসেসগুলো অন আছে।
”জমি অধিগ্রহণ প্রসেস চলছে। পাশে কিছু বিল্ডিং হয়েছে। প্রত্যেকটা প্রসেস অন আছে…ওয়ার্কিং অন ইট। এগুলো হয়ে গেলে আমরা আন্তর্জাতিক ঘোষণা করতে পারবে।”
২০১৫ সালে দেশের পর্যটন নগরীতে স্থাপিত এ বিমানবন্দরকে আন্তজার্তিক মানে উন্নীত করার কাজ উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরনো ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট রানওয়েকে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করতে ব্যয় হয় এক হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
বর্তমানে সেখানে দেশি এয়ারলাইন্সগুলো মূলত ড্যাশ বা এটিআর ৭২ সিরিজের ছোট উড়োজাহাজ চলাচল করছে। সম্প্রতি ইউএস বাংলা ও বিমান মাঝে মধ্যে ওই রুটে বোয়িং ৭৩৭ চালাচ্ছে। দিনে সব মিলিয়ে কক্সবাজারে ১৬ থেকে ২০টি ফ্লাইট ওঠানামা করে।
বর্তমান এমন প্রেক্ষাপটে সেখানে এত ব্যয়ের রানওয়ে নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে এক প্রশ্নে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, “কক্সবাজার একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বানানোর জন্য আমরা সমস্ত পরিকল্পনা নিয়েছি। কিন্তু এখন এটা ডোমেস্টিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কারণ এটা হল দেশের পর্যটনের মেইন স্পট। আমরা আশা করছি অনেক রকম এয়ারক্র্যাফট এখানে আসবে।
”প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমরা ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছি আমরা। প্রত্যেকটা সীমাক্ষার পার্টে থাকে ফিউচারে আমাদের এয়ারক্যাফট এক্সপ্যানশন কত হবে, যাত্রী কত বাড়তে পারে। এবং এই সম্ভাবনাগুলো নিয়েই সমীক্ষাগুলো করা হয়। ভবিষ্যতে এখানে বড় এয়ারক্রাফট ল্যান্ড করবে এজন্য ১০ হাজার ফুট রানওয়ে হচ্ছে রিকোয়ারমেন্ট। যেহেতু ওদিকে আর বাড়ানোর জায়গা নেই সেজন্য একমাত্র বাড়ানোর জায়গা ছিল উত্তর দিকে।
”পৃথিবীর অনেক এয়ারপোর্টই সাগরের দিকে জায়গা নিয়ে করা হয়েছে সেখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সমীক্ষা অনুযায়ী সেখানে মেজর কোনো সমস্যা তৈরি হবে না “
ঝড়-জলোচ্ছাসপ্রবণ কক্সবাজারের এ বিমানবন্দর প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়বে এমন শঙ্কা বিষয়ক প্রশ্নে তিনি বলেন, “কক্সবাজারের সমুদ্র অনেক রাফ এবং সেখানে প্রায়ই ঝড়-বৃষ্টি আসে। সমীক্ষায় এসব কিছু বিবেচনায় নিয়েই কিন্তু এটা স্টাবলিশ করা হয়েছে। যদি বড় ভূমিকম্প হয় তাহলে তো সব উল্টে-পাল্টে যেতে পারে। এখানে বাঁকখালীতে (চ্যানেলে) কোনো সমস্যা হবে না।
”দুবাই বা অন্যান্য জায়গায় পাম বিচ করা হয়েছে সাগরের ওপরে। ওখানে ওইভাবে স্ট্রাকচারটা নিচে থেকে আনা হয়েছে।”
কক্সবাজার বিমানবন্দর আগের সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফল, এর বাণিজ্যিক কোনো যৌক্তিকতা নেই এমন সমালোচনার জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, “যেকোন বড় প্রজেক্ট নেওয়ার আগে একটা সমীক্ষা হয়। ওই সমীক্ষায় প্রতিটা জিনিস আসে। এটাও আসে যে কতজন যাত্রী আসবে, কয়টা এয়ারক্রাফট ল্যান্ড করতে পারে, এখনকার ট্রেন্ড কী, পাঁচ বছর পরে কী হবে এসব। ১০ বছর পর কতজন যাত্রী হবে, পারিপার্শ্বিকতা কী হবে, পরিবেশগত প্রভাব কী হবে এসবকিছুই বিবেচনায় নেওয়া হয়। এখানে সব কিছুই করা হয়েছে।”
আপনি সেই সমীক্ষায় সন্তুষ্ট বা আপনার কাছে যৌক্তিক মনে হয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এভাবে তো প্রশ্ন করলে হবে না। আইন-আদালতে যেভাবে জানতে চায় হ্যাঁ কিংবা না, সব কথা এভাবে বলা যায় না।
”আমি যেটা বলি কক্সবাজার কিন্তু আমাদের প্রধান বিনোদনকেন্দ্র। এটার উন্নয়ন কিন্তু হবেই, হতে হবেই। এই জায়গাটাকে (বিমানবন্দর) ডেভেলপ করলে অবশ্যই আমরা বেনিফিটেড হব। এ জায়গাটাতে আমাদের কারও ডাউট নেই। এখানে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর হলে ট্যুরিস্টরা এসে সেখানে ডাইরেক্ট নামবে। তারা ঢাকায় নামবে, সেখান থেকে আবার কক্সবাজার যাবে…।”
এত খরচের পর এটাকে আর শোধরানোর সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আরেকটা বিষয় হচ্ছে যে জিনিসটা হয়ে গেছে সেটাকে আপনি আনডু করতে পারবেন? আমি পারব? তাহলে কী করতে হবে আমাকে?
”বেস্ট অ্যান্ড বেটার ইউটিলাইজেশন করে কী করে রেভিনিউ আর্ন করা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। আমরা সেটাই করছি। আমরা এখন ওনাদের গালি দিতে পারি, বকা দিতে পারি। তারা এই করছে, সেই করছে। আমার দেশে টাকা খরচ হয়েছে, এটা আমাদের টাকা। আমরা এটা বেস্ট ইউজ করতে চাই। আমি কাউকে ব্লেম দিতে যাব না।”
যশোর-সিলেটে ‘নির্মাণ ত্রুটি’?
বেবিচকের চলমান বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে যশোরের বিমানবন্দর টার্মিনালের কাজ দেড় বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে।
সেখানকার নকশায় এয়ারলাইন্সগুলোর অফিস না থাকার বিষয়ে মঞ্জুর কবীর বলেন, “যশোর বিমানবন্দরে স্ট্যান্ডার্ড অনেক উঁচু করে করা হয়েছে। ডিজাইনের কোনো হেরফের হয়নি। হাউএভার ওখানে এয়ারলাইনের অফিস-টফিসগুলো আরও সুন্দর করে করা হত তাহলে ভাল হত। এখন আমরা চেস্টা করছি যে কীভাবে সেটা সেটেল করে করে দেওয়া যায়। বাট ডিজাইনের কোনো ফল্টের অভিযোগ আসেনি।”
নির্মাণ ত্রুটির কারণে সিলেটে বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পই পিছিয়ে গেছে বলে তুলে ধরেন তিনি।
থার্ড টার্মিনাল চালু কবে?
মতবিনিময় সভায় শাহজালাল বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল চালুর বিষয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান বলেন, “এটা নিয়ে আপনাদের মনেও প্রশ্ন আছে আমাদের মনেও প্রশ্ন আছে। এখন আমি কোনো সাফাই গাচ্ছি না। কারণ আমি তখন ছিলাম না। আমি এখানে এসে ওটা মোটামুটি রেডিমেড অবস্থায় পেয়েছি। এটাকে এত টাকা খরচ হয়েছে (২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার) আমরা এখন এটাকে তাড়াতাড়ি অপারেশনে আনার চেষ্টা করছি।”
‘রানওয়ে নষ্ট ঠেকাতে’ বগুড়া বিমানবন্দরের উন্নয়ন
চলতি সপ্তাহে বেবিচক চেয়ারম্যান বগুড়া বিমানবন্দরে গিয়ে সেটির উন্নয়ন কাজ শুরুর কথা বলেছেন।
ঢাকা থেকে সোয়া দুইশ কিলোমিটারের মত দূরত্বের বগুড়ায় বিমানবন্দর কতখানি দরকারি এমন প্রশ্নে এদিন বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা বগুড়া বিমানবন্দরটা অনেক পয়সা খরচ করে বানিয়েছিলাম। ছোট একটা স্টল (শর্ট টেক অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং) এয়ারপোর্ট। ৪ হাজার ৭ ফিট রানওয়ে। এখানে এয়ারফোর্সের এয়ারক্রাফট উড়ছে। এই রানওয়েটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটা আমরা এখনি যদি না করি… পরে করলে তিন থেকে চারগুণ অর্থ খরচ হবে। আমরা জাস্ট এখন রিপেয়ার করে রেখে দেব।
”যেকোন প্রয়োজনে, ডিজাসটারে প্রয়োজনে উত্তরাঞ্চলে কোনো সমস্যা হলে ওই ফিল্ডটা থেকে অপারেট করতে পারব। ভবিষ্যতে আরও দেড় হাজার ফিট রানওয়ে বাড়ালে আমরা এটাকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে পারবো।”
তার ভাষ্য, “আমাদের দেশের অনেকগুলো এয়ারপোর্ট রয়েছে। যেগুলো বেদখল হয়ে যাচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে। এটা যেন না হয় সেজন্য আমরা একটা একটা করে এয়ারপোর্ট ধরছি। যাতে ভবিষ্যতে ব্যবহার করতে পারি।”
আরও পড়ুন: