অর্থনীতি ও বাণিজ্যকে যেভাবে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে পৃথিবী আবার ‘স্তালিন যুগের কমান্ড অর্থনীতিতে’ ফিরছে বলে তার মনে হচ্ছে রেহমান সোবহানের কাছে।
Published : 09 Apr 2025, 12:37 AM
যুক্তরাষ্ট্রের ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত নতুন শুল্কনীতি বাজার অর্থনীতির বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে ‘ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান।
তিনি বলেছেন, “এতদিন বিশ্ব ব্যবস্থা একভাবে চলেছে, এখন আরেকভাবে চলবে। বাণিজ্য ইস্যুতে যারা সবচেয়ে ভালো আলোচনা করতে পারবে, চুক্তি করতে পারবে, তারাই টিকে থাকবে।”
মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীতে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন রেহমান সোবহান।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বিশ্বের শতাধিক দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় বাড়তি ৩৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের মুখোমুখি হবে।
এতদিন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ, যা এখন বেড়ে হল মোট ৫২ শতাংশ।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এদেশে আসে ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। আমদানি রপ্তানির ব্যবধান ঘোচাতে চাপ দেওয়ার জন্যই বড় অংকের এই শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। নতুন করে সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বড় ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে পিআরআই।
সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে বাণিজ্যঘাটতি মোকাবিলার চেষ্টা করছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে তা ‘বিরল’ ঘটনা।
“এমন ঘটনা আগে কখনো দেখা যায়নি। এর মধ্য দিয়ে বাজার অর্থনীতি ছুঁড়ে ফেলে দিলেন ট্রাম্প।”
যে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বায়নের সূচনা করেছিল, তারাই এখন সেটা বাদ দিচ্ছে মন্তব্য করে রেহমান সোবহান বলেন, “এখন আর সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট নয়, সেরা মানুষেরা টিকে থাকবে এই নীতি নয়, বরং যারা সবচেয়ে ভালো আলোচনা বা চুক্তি করতে পারবে, তারাই টিকে থাকবে।”
প্রবীণ এ অর্থনীতিবিদ বলেন, অর্থনীতি ও বাণিজ্যকে যেভাবে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে পৃথিবী আবার ‘স্তালিন যুগের কমান্ড অর্থনীতিতে’ ফিরছে বলে তার মনে হচ্ছে।
তার পর্যবেক্ষণ হল, অর্থনীতির সমস্যা অর্থনীতির নিয়মে সমাধান করা হচ্ছে না, বরং অন্যান্য বিবেচনায় তা করা হচ্ছে।
কোনো দেশের বাণিজ্য ঘাটতি এভাবে কমানো ‘সম্ভব নয়’ মন্তব্য করে রেহমান সোবহান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তৈরি পোশাক খাতের জন্য তুলা আনা হয় বিনে শুল্কে। সেই সুতা দিয়ে বিভিন্ন দেশে নানা প্রকার পোশাক রপ্তানি করা হয়। বাংলাদেশ চাইলেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে সব তুলা আমদানি করে পোশাক বানানো সম্ভব না।
বাংলাদেশ গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী, বিভিন্ন ধরন ও মানের পোশাক উৎপাদন করে। সেই তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন ধরন, দাম ও বাজারের জন্য পোশাক উৎপাদন করি। ফলে সব পোশাক মার্কিন সুতা দিয়ে তৈরি করা যাবে না; কমান্ড ইকোনমির মত হুকুম দিয়ে তো এই আমদানি বাড়ানো সম্ভব নয়।”
পিআরআই চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার বলেন, “কর হার কমিয়ে দিতে পারলেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। করের বাইরেও অনেক সমস্যা আছে। সেগুলোর সমাধান কীভাবে হবে।”
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কনীতিকে বাংলাদেশ কীভাবে সামাল দেবে, তাও আলোচনায় আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।