“তাকে দায়িত্বে রেখে অডিট প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। কোনো বির্তক যাতে না ওঠে, নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে তাকে তিন মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।”
Published : 05 Jan 2025, 12:26 PM
ঋণ কেলেঙ্কারি ও নানা অনিয়মে তারল্য সংকটে পড়ে খাদের কিনারায় যাওয়া পাঁচ বেসরকারি ব্যাংকে ‘ফরেনসিক অডিট’ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংক খাত সংস্কারে গঠিত টাক্সফোর্স। অডিট চলাকালে এসব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হবে।
প্রথম ধাপে শরিয়াহভিত্তিক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে অডিট শুরু হবে। সেজন্য শনিবার ব্যাংকটির পরিচালক পর্ষদের সভায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তার অবর্তমানে এমডির চলতি দায়িত্ব (সিসি) পালন করবেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া।
পর্ষদ পুনগর্ঠনের পর ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়া আব্দুল মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অডিটকে স্বাগত জানাই। নতুন দিনের একটি অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছি, ব্যাংকটিকে জনগণের স্বার্থে ব্যবহার করা হবে। এজন্য অডিট খুবই কাজে লাগবে।”
এমডিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “এমডি যেহেতু সে সময়ে (আগের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সময়ে) ছিলেন, তাই তাকে দায়িত্বে রেখে অডিট প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। কোনো বির্তক যাতে না ওঠে, নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে তাকে তিন মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।”
একটি নির্দিষ্ট সময়ে হওয়া সবধরনের লেনদেন যাচাই-পর্যালোচনা ও কোনো তথ্য মুছে ফেলা হয়েছি কি না, তা দেখতে এই ফরেনসিক অডিটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে টাক্সফোর্স। সেই সিদ্ধান্তে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকও।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংককেও ফরেনসিক অডিটের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সবগুলো ব্যাংকই বিগত সরকারের আমলে এস আলম গ্রুপের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংকগুলোতে যদি এস আলমের সময়ের কর্মকর্তারা থাকেন, তাহলে অডিটে ম্যানুপুলেশন হওয়ার সম্ভবনা থাকতে পারে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকগুলোর সিদ্ধান্ত এমন যে এস আলমের সময়কার কর্মকর্তাদের প্রভাবমুক্ত রেখে সঠিকভাবে এসব ব্যাংকের নিরীক্ষা করা।”
এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ রোববার জরুরি সভা ডেকেছে। অন্য ব্যাংকগুলোর উচ্চ পদেও শিগগিরই পরিবর্তন আসতে পারে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা ব্যাংক কোম্পানি আইনে ভেঙে নজিরবিহীনভাবে সাতটি ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বড় অঙ্কের শেয়ার দখলে নেয়। সাইফুল আলম তার পরিবারের সদস্য ছাড়াও কিছু আত্মীয়কে একাধিক ব্যাংকের বোর্ডে বসান।
সাইফুল আলম নিজে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ চার ছিলেন বোর্ডে।
তাদের ছেলে আহসানুল আলম, মেয়ে মাইমুনা খানম ও জামাতা বেলাল আহমেদ যথাক্রমে ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন। সাইফুল আলমের ভাই, বোনসহ অন্যান্য আত্মীয়রাও বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদে ছিলেন।
এস আলম গ্রুপ ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ব্যাংক থেকে বিপুল অংকের ঋণ নিয়ে আত্মসাৎকরেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ক্ষমতায় পালাবদলের পর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ১১ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়। একইভাবে বেসরকারি খাতের ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনগর্ঠন করা হয়।
এর মধ্যেই সরকার অনিয়মে জর্জরিত আর্থিক খাতের সংস্কারে শ্বেতপত্র প্রকাশের পাশাপাশি ব্যাংক খাতের সংস্কারে টাক্সফোর্স গঠন করে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ব্যাংক খাতের সমস্যা সমাধানে কারিগরি ও অর্থ সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। বিশ্ব ব্যাংকও ফরেনসিক অডিট করতে সহযোগিতার কথা বলে। এরপরই সবচেয়ে বেশি সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ব্যাংকে ফরেনসিক অডিটের সিদ্ধান্ত হয়।