গ্রাহককে প্রতিশ্রুত পণ্য দিতে না পেরে বিতর্কের মুখে থাকা ইভ্যালিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়ে ব্যবসা পরিচালন সংক্রান্ত ছয়টি বিষয় জানতে চেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
Published : 20 Jul 2021, 12:58 AM
সোমবার মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল থেকে আলোচিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরীন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের কাছে এই নোটিস পাঠানো হয়।
আগামী ১ অগাস্টের মধ্যে বাণিজ্য সচিব বরাবর লিখিতভাবে নোটিসের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
‘ইভ্যালি ডটকমের ব্যবসা পদ্ধতি ও গ্রাহক ভোগান্তি বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস’ শিরোনামের চিঠিতে গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়েও পণ্য না দেওয়া এবং মার্চেন্টদের পাওনা পরিশোধ না করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।
আগের দিন রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক থেকে ইভ্যালিকে এই সংক্রান্ত নোটিস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
নোটিসের উত্তর সন্তোষজনক না হলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে রোববার জানিয়েছিলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান।
রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর বিষয়ে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে অভিযোগ ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নোটিস দেওয়া এবং এগুলো কীভাবে ব্যবসা করছে তা যাচাই বাছাই করতে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তও হয়।
ইভ্যালিসহ আরও কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার ধরন এবং গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়েও দীর্ঘ সময় পরও পণ্য না দেওয়া, অর্থ ফেরত না দেওয়াসহ ক্রেতা ‘ঠকানোর’ বিস্তর অভিযোগ নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা শুরু হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে ইকমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বিরুদ্ধে গ্রাহকদের বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে পর্যালোচনা করতে রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ওই বৈঠক হয়।
সোমবার ইভ্যালিকে দেওয়া নোটিসে বলা হয়, “সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ইভ্যালি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ সংগ্রহ করলেও যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ করছে না। যেসব মার্চেন্টের কাছ থেকে পণ্য গ্রহণ করা হয়েছিল তাদেরও অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে না।
“এসব কার্যকলাপের ফলে বিপুলসংখ্যক ক্রেতা এবং বিক্রেতার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।“
নোটিসে ইভ্যালির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে আসা অনিয়মের বিষয়ে কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তাও উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটির কাছে ছয়টি প্রশ্ন তুলে ধরে এগুলোর উত্তর জানতে চেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের জিজ্ঞাসাগুলো হল-
>> ক. গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে মোট ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা দায়ের বিপরীতে ইভ্যালির কাছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা চলতি সম্পদ থাকার কারণ কী?
অবশিষ্ট টাকা ইভ্যালির কাছে আছে কিনা? থাকলে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে, না থাকলে তার পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে হবে।
>> খ. ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রাহকের কাছে মোট দায়ের পরিমাণ কত, গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের বিনিময়ে যে পণ্য দেওয়ার কথা, তার কতটা দেওয়া হল?
এসবের বর্তমান অবস্থা কী, এ বিষয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
>> গ. ১৫ জুলাই পর্যন্ত মার্চেন্টদের কাছে দায়ের পরিমাণ কত এবং তা পরিশোধের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
>> ঘ. ব্যবসা শুরুর পর থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ইভ্যালি গ্রাহকদের কাছ থেকে কী পরিমাণ টাকা নিয়েছে, মার্চেন্টদের কী পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করেছে এবং প্রশাসনিক ও অন্যান্য খাতে কী পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে, তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ।
>> ঙ. ইভ্যালির ব্যবসা পদ্ধতি কী এবং বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা কী?
>> চ. ডিজিটাল কমার্স পলিসি ২০২০ (সংশোধিত) এবং ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কোনো ব্যবসা পদ্ধতি বা কার্যক্রম ইভ্যালিতে এখনও আছে কিনা, থাকলে কী—এসব বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা।
নোটিসে আরও বলা হয়েছে, “ইভ্যালির আর্থিক ত্রুটির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ১৬ জুনের প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গ্রাহক ও মার্চেন্টের সুরক্ষা ও ডিজিটাল কমার্সের ওপর নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে ইভ্যালির বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা আগামী ১ অগাস্টের মধ্যে বাণিজ্য সচিব বরাবর লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা যাচ্ছে।“
ইভ্যালির রিবুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে তদন্ত চালায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত ১৬ জুন প্রকাশিত ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালি গ্রাহকের কাছে ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫৩৫৪ টাকা দায় দেনা রয়েছে।
এসবের বিরপরীতে ইভ্যালির মোট সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৯১ কেটি ৬৯ লাখ ৪২৮৪৬ টাকা। এরমধ্যে চলতি মূলধন রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩৭৩৬ টাকা।