আবাসিক ব্যবহারকারীদের গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।
Published : 08 Aug 2016, 10:02 PM
এর মধ্যে এক চুলার মাসিক বিল ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১০০ টাকা এবং দুই চুলা ৬৫০ থেকে বাড়িয়ে ১২০০ টাকা করার প্রস্তাব তাদের।
সোমবার সকালে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আয়োজিত গণশুনানিতে এমন প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মীর মসিউর রহমান।
অবশ্য দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে দুর্নীতি কমানোর দাবি জানিয়েছে ভোক্তাদের সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশনের অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
উপস্থিত ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও এক দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, “কিছুদিন আগেও গ্যাসের দাম একদফা বাড়ানো হয়েছে; এখন ফের বাড়ানো অযৌক্তিক। গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে বরং সিস্টেম লস ও দুর্নীতি কমানোর দিকে জোর দেওয়া উচিত তিতাসের।”
আর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্সের অভিযোগ, এতে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন আরো দুর্বিসহ হয়ে উঠবে।
“দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনো গ্যাস পায় না। গ্যাসের দাম বাড়ালে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জীবন আরো দুর্বিসহ হয়ে উঠবে।”
গত বছর ২৭ আগস্ট গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় বিইআরসি। সে সময় এক চুলা ব্যবহারকারীদের ৬০০ টাকা এবং দুই চুলা ব্যবহারকারীদের ৬৫০ টাকা পরিশোধ করার কথা বলা হয়।
আগে এক চুলা ব্যবহারকারীদের ৪০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৪৫০ টাকা পরিশোধ করতে হতো।
‘তিতাস মুনাফার প্রতিষ্ঠান নয়’
এদিকে গণশুনানিতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের বিতরণ মাশুল ২৩ পয়সা থেকে কমিয়ে দুই পয়সা করার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
চলতি বছরের ৩০ মার্চ প্রতি ঘনফুট গ্যাসের বিপণন মাশুল ২৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে এক টাকা তিন পয়সা করার আবেদন জানায় তিতাস।
গত বছরের সেপ্টেম্বরের পর থেকে মুনাফা হ্রাস, কর দায় থেকে প্রদত্ত করের পরিমাণের আধিক্য, সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের আগের মতো লভ্যাংশ প্রদান এবং কোম্পানির ভবিষ্যত উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে অর্থের যোগানের বিষয়গুলো বিবেচনায়ে রেখে মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল তারা।
জবাবে বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব চাহিদা মেটাতে তিতাস গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ প্রয়োজন প্রতি ঘনমিটার দুই পয়সা।
বিইআরসি চেয়ারম্যান এ আর খান শুনানিতে তিতাস কর্তৃপক্ষকে বলেন, “এটা ভোক্তাদের কোম্পানি, মুনাফা করার প্রতিষ্ঠান নয়। যে সেবা দেবেন তার খরচ পাবেন। সিস্টেম লস বন্ধ করেন, শিল্প কারখানায় মিটারের ব্যবস্থা করেন।”
বিইআরসির পরামর্শের প্রেক্ষিতে তিতাসের পরিচালক (অর্থ) শংকর কুমার দে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সম্পূর্ণ বিধিবিধান মেনেই আবেদন করেছি, বিধিবিধান মেনেই এর (প্রস্তাবিত মূল্য) উত্তর দেব।”
গণশুনানিতে হট্টগোল
এদিকে গণশুনানি চলাকালে দুপুরে মোস্তাক নামে এক ব্যক্তি নিজেকে তিতাসের শেয়ারহোল্ডার পরিচয় দিয়ে উপস্থিত তিতাস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “কোম্পানির ২৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের, অথচ কোম্পানির বোর্ডে শেয়ার হোল্ডারদের কোনো প্রতিনিধি নেই। কোম্পানি নীতিনির্ধারণে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের প্রতিফলন নেই।”
এছাড়া সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের সঙ্গে সমন্বয়হীনতারও অভিযোগ করেন মোস্তাক।
চেয়ারম্যানের মন্তব্যবের পরই হট্টগোল শুরু হয় টিসিবি অডিটোরিয়ামে। উপস্থিত বেশ কয়েকজন কথিত শেয়ারহোল্ডার উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।
এসময় তারা চেয়ারম্যানকে বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাতে থাকেন।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বিইআরসি চেয়ারম্যান তাদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “তথাকথিত বলায় আপনারা যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে আমি দুঃখিত। আমি ওই অর্থে কথাটা বলিনি। আমি বলতে চেয়েছি, বিনিয়োগকারীদর নিয়ে আমরা একটা পৃথক মিটিং পরে করতে পারি। আমাদের আজকের গণশুনানি শুধু গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের জন্য।”
১৯৬৪ সালের ২০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ২০০৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত সম্পূর্ণ সরকারি মালিকানাধীন ছিল। পরে পুঁজিবাজারে নিবন্ধনের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৫ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করা হয়।
বর্তমানে তিতাসের অনুমোদিত মূলধন ২০০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৯৮৯.২২ টাকা।