“এটা নিয়ে আরো আলোচনা-পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে দেখব,” বলেন তিনি।
Published : 06 May 2024, 07:25 PM
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ বছরে উন্নীত করার বিষয়টি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয় বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
সোমবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, “আপাতত বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের নেই। আগামীতে বাড়বে কি না বা বাড়ালে ভালো হবে কি না- বিষয়টি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। এ বিষয়ে আরো আলোচনা পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে দেখা হবে।”
এর আগে চাঁদপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন সম্পূরক প্রশ্নে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে সরকারের ভাবনা জানতে চান।
রফিকুল ইসলাম বলেন, “সরকারি চাকরিতে যোগদানের যে বয়সসীমা রয়েছে তা অনেক আগে নির্ধারণ করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে আমাদের দেশের মানুষের আয়ুষ্কাল ৬২ বছর থেকে ৭২ বছরে এসে পৌছেছে। এখন এটা অত্যন্ত যৌক্তিক হবে সরকারি চাকরিতে যোগদানের যে বয়সসীমা শিথিল করে অন্তত ৩৫ বছরের কাছে নিয়ে যান।
“এটা হলে কর্মসংস্থানের অভাবে আমাদের হতাশাগ্রস্ত তরুণ ও যুব সমাজ প্রতিযোগিতায় এসে সরকারি চাকরিতে ঢুকতে পারবে। আমি সরকারকে অনুরোধ করবো বয়সসীমা শিথিল করার সময় এসেছে। সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির সময় হয়েছে। আমাদের যে ‘না’ একটা মনোভাব, এর থেকে বেরিয়ে এসে ‘হ্যাঁ’-তে চলে আসতে হবে।”
জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, গত ১৫ বছরে সরকার অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চাকরির বয়স ছিল ২৭ বছর সেখান থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩২ বছর করা হয়েছে। চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৫৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়েছে।
“আমরা সবসময় যুগের সাথে তাল মিলিয়ে জনবল কাঠামো ও নিয়োগ প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন করে থাকি। যুগের সাথে সম্পর্ক রেখে আমরা পরিবর্তনও করে থাকি।”
চাকরিতে প্রবেশ ও বেরিয়ে যাওয়ার (অবসর) বয়স খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “এখানে একটি শৃঙ্খলা...। সরকারি চাকরিতে এখন বেশ আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত মেধাবীরা ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করছেন।
“সরকারি চাকরির পরিবেশ থেকে শুরু করে বেতন কাঠামো নতুন প্রজন্মের কাছে বড় আকর্ষণ তৈরি করেছে। সরকারের কাজের সাথে সম্পৃক্ততা একটি সম্মানের বিষয়। আবার চাকরির নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বেতন কাঠামো সেটিও অত্যন্ত সুন্দর ও কাজের পরিবেশ ও সুন্দর হয়েছে।”
সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে বেশ কয়েক বছর ধরেই আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। বয়সসীমা ৩৫ বছর করতে গত ১৭ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেনের কাছে চিঠি পাঠান শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তবে তিনি বলছেন, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এটি তার ব্যক্তিগত সুপারিশ; এটি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ নয়।
সংসদে ফরহাদ হোসেন বলেন, “আমাদের এটি (বয়সবৃদ্ধি) নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। আমরা সবসময় বলে আসি, ফ্রেশ গ্রাজুয়েট যারা তাদের রিক্রুট করতে চাই। এটা সরকারের একটা পলিসি।
“আমরা বিসিএসের মাধ্যমে দেখে থাকি, ২২/২৩ বছর বয়স থেকেই তারা বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকেন। তারা ৬/৭ বছর সময় পেয়ে থাকে। এজন্য তারা যোগদানের যথেষ্ট সময় পাচ্ছেন।”
জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেন, “আমরা সব সময় যুগের প্রয়োজনে- নতুন যেটা করলে ভালো হবে, সেটা চিন্তা-ভাবনা করে থাকি। তবে মনে করি, এটা নীতিগত সিদ্ধান্ত। আমরা চাকরির বয়স- আগামীতে বাড়াব কি বাড়াব না- বাড়ালে ভালো হবে কি না- এটা আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। এটা নিয়ে ভবিষ্যতে আরো আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারব।”
সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন তার প্রশ্নে জানতে চান, চাকরির বয়স ৩৫ বছর করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী একটি আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দিয়েছেন। এ বিষয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ বলেন, “শিক্ষামন্ত্রীর থেকে এ ধরনের একটি পত্র আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি। আগেই বলেছি, এটা আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর সাথে আরও আলাপ-আলোচনা করব।
“তবে আপাতত চাকরির প্রবেশের বয়স বাড়ানোর ক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত আমাদের সিদ্ধান্ত নেই। এটা নিয়ে আরো আলোচনা-পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে দেখব।”
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন...
চাকরিতে ঢোকার বয়সসীমা: নওফেলের সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন জন
সরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়সসীমা ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ