চুক্তি করা ব্যাংকগুলো হল- ন্যাশনাল ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
Published : 22 Sep 2024, 08:01 PM
তীব্র তারল্য সংকটে থাকা পাঁচটি ব্যাংকে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে; তুলনামূলকভাবে সবল ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে টাকা ধার নেওয়ার বিষয়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক জামিনদার বা গ্যারান্টর হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। এই সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সামান্য কমিশন যদিও নেয়; তাহলেও ঝিমিয়ে পড়া ব্যাংকগুলোর যে করুণ দশা দেখা যাচ্ছে, তা থেকে উত্তরণের সুযোগ হয়ত তৈরি হবে।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করা পাঁচ ব্যাংক হল- বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার তথ্য দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের আগ পর্যন্ত ব্যাংকগুলো বহুল আলোচিত-সমালোচিত এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সরকার পতনের পর এগুলোর পর্ষদ এস আলম মুক্ত করা হয়; আগের সব পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয় নতুন পরিচালকদের।
ব্যাংকগুলো টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তাদের আন্তঃব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে তারল্য সহায়তা দেওয়ার উপায় বাতলে দিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগ দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
এখন এসব দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে তারল্য সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করবে। সবল ব্যাংক সহায়তা দিতে রাজি হলে তখন তা গ্রহণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কে বলেন, “ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে কবে থেকে তারল্য সহায়তা পেতে পারে, সেটি এখনও ঠিক হয়নি। কারণ যখন ব্যাংকগুলো অর্থ ধার দিতে সম্মত হবে, ঠিক তখনই তারা সহায়তা পাবে।”
রোববার ঢাকার মতিঝিল এলাকায় সোস্যাল, ফার্স্ট সিকিউরিটি, গ্লোবাল ও ইউনিয়ন ব্যাংকের শাখাগুলোয় ঘুরে তীব্র তারল্য সংকটের কথা শোনা যায়।
সৌরভ হাসান একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। ৫০ হাজার টাকা তুলতে এদিন সকালে তিনি সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের শাখায় যান। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর তিনি পেয়েছেন মাত্র ২০ হাজার টাকা।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেশ কয়েকদিন ধরে টাকা তোলার চেষ্টা করছি কিন্তু পাচ্ছিলাম না। আজকে ৫০ হাজার টাকা তুলতে এসে উঠাতে পেরেছি মাত্র ২০ হাজার টাকা।
এই শাখায় টাকা তুলতে আসা আরও কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয়; তবে তারা টাকা উঠাতে পারেননি।
এমন একজন মো. সামির। মাত্র ২০ হাজার টাকার চেক জমা দিয়েছিলেন তিনি। ‘নদগ টাকার অভাব’ এর কথা বলে আরও দুই দিন পর তাকে শাখায় আসতে পরামর্শ দেন সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারে থাকা কর্মকর্তারা।
গত সপ্তাহে তারল্য সহায়তা পাওয়ার জন্য আবেদন করে এসব ব্যাংক। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশ ব্যাংক গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার তারল্য সহায়তা দেওয়ার অনুমোদন দেয়। রোববার এসব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করল বাংলাদেশ ব্যাংক।
৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর ব্যাংক খাতে অস্থিরতা তৈরি হয়; বিশেষ করে এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোতে প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি।
আগের গভর্নরের আমলে টাকা ছাপিয়ে শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে সরবরাহ করার বিষয়টি সামনে আসে। গভর্নর আহসান মনসুর দায়িত্ব পাওয়ার পর মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সেই ‘অবৈধ ব্যবস্থা’ বন্ধ করার ঘোষণা দেন।
সরকার পতনের পর থেকে তারল্য সংকটের চূড়ায় পৌঁছে যায় এসব দুর্বল ব্যাংক; গ্রাহকরা পড়েন ভোগান্তিতে। এখনও ব্যাংকগুলো স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরতে পারেনি।
একসময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাংকগুলোর একটি ছিল ইসলামী ব্যাংক। এস আলম গ্রুপ এর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর মন্দ ঋণ ও বাড়তে থাকা লেখাপি ঋণে জর্জরিত ব্যাংকটিও তারল্য সংকটসহ নানা অব্যবস্থাপনায় ডুবতে থাকে।
তারাও সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে তারল্য সহায়তা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেতে আবেদন করেছে; যা আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে বলে কর্মকর্তারা তথ্য দিয়েছেন।