ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃত্ব যেন শিক্ষিত হয়, এমন প্রত্যাশা তার।
Published : 31 Aug 2022, 08:45 PM
কারখানা মালিক ও শ্রমিকদের সম্পর্ককে বাইসাইকেলের দুই চাকার সঙ্গে তুলনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছন, মালিকপক্ষের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য, শ্রমিক স্বার্থ রক্ষায় ট্রেড ইউনিয়নের বিকল্প নেই।
তবে তার অনুরোধ ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃত্ব যেন শিক্ষিত হয়।
বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ক্রিশ্চিয়ান এইড (সিএ) ও সিপিডি পরিচালিত দেশের ৫১টি কারখানা নিয়ে ‘ডিবেট অন রিসেন্ট এক্সপোর্ট গ্রোথ অ্যান্ড ডিসেন্ট এমপ্লয়মেন্ট ইন আরএমজি ইন্ডাস্ট্রি: এ ইউএনজিপি’স পারস্পেকটিভ’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
টিপু মুনশি বলেন, মালিকপক্ষের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য, দর কষাকষির জন্য ট্রেড ইউনিয়নের বিকল্প নেই। তবে সেক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়নের নেতাকে অবশ্যই শিক্ষিত হতে হবে। আর যারা নেতা হবে, তাদেরকে বিষয়টা বোঝাতে হবে যে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করে যাওয়া যেমন তার দায়িত্ব, একইভাবে কারখানাটিকে টিকিয়ে রাখাও তার দায়িত্ব।
“একটা বাইসাইকেলের যেমন দু’টো চাকা, এই ট্রেডেও মালিক এবং শ্রমিক, বাইসাইকেলের দু’টো চাকা। দু’টোই সচল থাকতে হবে, মিলিতভাবেই এই বাইসাইকেলটা চালাতে হবে,” যোগ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, “আজকে আমরা ৬০ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করেছি এবং তার ৪২ বিলিয়নই এসেছে এই একটা সেক্টর থেকে। তাই এটাকে কোনো অবস্থাতেই গুরুত্বহীন করা যাবে না। এর সাথে এদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন জড়িত।”
কোভিডের ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এখন ভালো করলেও তা ধরে রাখা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেন তিনি।
“রিসেন্ট গ্রোথটা কি টিকে থাকবে? নাকি নীচের দিকে চলে যাবে? কোভিডের কারণে এক্সপোর্ট কমে গেছিল, ফ্যাক্টরি বন্ধ রাখতে হয়েছিল। কোভিডের পরে কাজের চাপ আসলো। আসলে মানুষ দেড় দুই বছর তেমন কিছু কেনেননি, তাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। কিন্তু রিসেন্টলি দেখা যাচ্ছে যে সেই গ্রোথটা কিন্তু নীচের দিকে নেমে যাচ্ছে,” বলেন তিনি।
এসময় তিনি কারখানা মালিকদেরকে জাতিসংঘের নিয়ম নীতি মেনে চলার অনুরোধ করেন।
সম্প্রতি ১ হাজার ২৪৪ জন শ্রমিকের ওপর পরিচালিত এই জরিপের তথ্য তুলে ধরে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জরিপের ৮৮ দশমিক ২ শতাংশ কারখানা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের কিন্তু তাদের মাঝে ৪১ দশমিক ২ শতাংশ কারখানা কোনো নিয়ম মানেনা। সেগুলোর মাঝে ৪৫ শতাংশ কারখানা ভাড়ায় চলে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা রক্ষা করছে না। আর এগুলোর মধ্যে ২৫ শতাংশের কোনো সনদ নেই।
এতে আরও বলা হয়, এখনও পর্যন্ত ৭৪ দশমিক ৩ শতাংশ শ্রমিক কোভিডের প্রথম ডোজ নিলেও মাত্র ২০ শতাংশ শ্রমিক দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন এবং এরা কেউই বুস্টার ডোজ নেননি।
অনুষ্ঠানে বিকেএমইএ এর নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম জানান, টিকার বিষয়ে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন কিন্তু সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
এর কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “টিকার ব্যবস্থা আছে। আমাদের চিকিৎসক আছে। ডে কেয়ার আছে। কিন্তু শ্রমিকরা উৎসাহী না সেসব নিতে। যেমন ধরেন, তাদেরকে যদি বলা হয় বাচ্চা ডে কেয়ারে রাখে না কেন? উত্তরে বলে, এখানে কেন রাখব এভাবে? বাড়িতে নানি দাদি আছে বাচ্চা দেখাশোনা করার জন্য ।”
এছাড়া জরিপে বেতনের ব্যাপারে নারী পুরুষ বৈষম্যের তথ্যও তুলে আনা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীরা পুরুষের তুলনায় কম বেতন পান। যদিও জরিপে অংশ নেওয়াদের মধ্যে ৬০ শতাংশই ছিলেন নারী।
বিজিএমইএ সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, সবাইকে সম্মিলিতভাবে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।