“পাইকারিতে দাম বাড়লেও আমার ব্যবসা তো চালিয়ে যেতে হবে; কাপড় না কিনলে উপায় নাই, তাই কিনছি,” বলেন এক খুচরা ব্যবসায়ী।
Published : 29 Mar 2024, 09:43 PM
ঈদকে সামনে রেখে তৈরি পোশাকের পাইকারি বাজার পুরান ঢাকার ইসলামপুরে দম ফেলার ফুরসত মিলছে না কারও। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খুচরা ব্যবসায়ীদের ক্রয়াদেশ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন পাইকাররা। ব্যস্ততার কমতি নেই তাদের সহযোগীদেরও।
সালোয়ার কামিজ, ফ্রক, শাড়ি, লুঙ্গি, বোরকা, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক সরবরাহ করা হচ্ছে এ পাইকারি বাজার থেকে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, দেশি কাপড়ের চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশই পূরণ করে ইসলামপুর। বিদেশি কাপড়ের ক্ষেত্রে এ হার ৬০ শতাংশ।
নিজের দোকানের জন্য কুমিল্লা থেকে পোশাক কিনতে এসেছেন প্রবীণ ব্যবসায়ী রঞ্জু দেব।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের মূলধন মানেই ব্যাংকের উপর ভরসা করে থাকতে হয়। এবছর ব্যাংক থেকে লোন পেতে দেরি হয়েছে৷ অন্যান্য বছর আরও এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন আগেই কেনাকাটা শেষ করি।
“কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হব বলে আশঙ্কা করছি। তবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেহেতু দেরি হয়ে গেছে, তাই কাপড় কিছু কম নিব। প্রয়োজন আবার আসব।”
ফেনী থেকে দোকানের কর্মচারীকে নিয়ে ঈদের পোশাক কিনতে এসেছেন খুচরা ব্যবসায়ী শিহাব হোসেন৷
তার ভাষ্য, এবার প্রতিটি পোশাক কিনতে গড়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি লেগেছে।
“দোকানিরা বিভিন্ন কারণ দেখাচ্ছেন। কিন্তু দাম বাড়লেও আমার ব্যবসা তো চালিয়ে যেতে হবে। কাপড় না কিনলে উপায় নাই, তাই কিনছি।”
শবে বরাতের পরপরই ইসলামপুর থেকে প্রায় তিন লাখ টাকার পোশাক কেনেন নোয়াখালীর রাসেল মিয়া। সেই চালানের বেশির ভাগ পণ্য বিক্রি করে আরও পোশাক কিনতে শুক্রবার ইসলামপুরে আসেন তিনি।
রাসেল বলেন, “এর আগে যা কাপড় কিনেছিলাম, তার অধিকাংশই বিক্রি করেছি, তাই আবারও কিছু কাপড় কিনতে এসেছি। এবার দুই লক্ষ টাকার মতো কাপড় কিনব।
“বড় দোকান হওয়ায় বিক্রিটা ভালো হচ্ছে। আর ক্রেতাদের চাহিদাসম্পন্ন কাপড় নেওয়াতে খুব সহজেই তাদের আকৃষ্ট করতে পারছি।”
ইসলামপুরের যেসব বিপণিবিতানে ভিড় বেশি-সেগুলোর মধ্যে অন্যতম মুন কমপ্লেক্স, জাহাঙ্গীর টাওয়ার, বাবুলী ইসলামপুর কমপ্লেক্স, সুরমা প্লাজা, দৌলত কমপ্লেক্স, চায়না মার্কেট, লায়ন টাওয়ার, ইসলামপুর প্লাজা, চায়না মার্কেট।
পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শবে বরাতের পর থেকেই মূলত ঈদের বেচাকেনা শুরু হয়। ২০২৩ সালের মত এবারও ক্রেতা সমাগম হচ্ছে। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় গতবছরের তুলনায় পোশাকের দাম কিছুটা বেড়েছে। তার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারেও।
ফেমাস টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সিরাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের এখানে তৈরি কাপড়ের ক্ষেত্রে কারিগরের মজুরির পাশাপাশি রঙের দাম, সুতার দাম বেড়েছে। আবার বিদেশ থেকে আমদানি করার ক্ষেত্রে কাপড়ের উপর ভ্যাট আর ক্যারিং খরচ বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের তুলনায় কাপড়ের দাম বেড়েছে।”
ইসলামপুর প্লাজার ব্যবসায়ী রুদ্র বনিক বলেন, “আমাদের আরও কয়েকটি শাখা রয়েছে। সবগুলোতেই গত বছরের মতোই বিক্রি হচ্ছে। আমাদের এখান থেকে কাপড় ঢাকাসহ ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় যায়।
“অনেক পুরাতন কাস্টমার আছেন, যারা প্রতিবছরই ঈদে আমাদের দোকান থেকে কাপড় কেনেন। সুতি কাপড়ে তাদের চাহিদাটা একটু বেশি থাকে।”
নবাববাড়ি এলাকার আহসান উল্লাহ রোডের দুপাশের ছোট্ট দোকানে পাইকারি বিক্রির পাশাপাশি খুচরাও বিক্রি হতে দেখা গেছে।
পরিবার নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে আসছেন নিপা আক্তার। পাইকারি বাজারে খুচরা পণ্য কিনে কিছুটা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “স্বামীর জন্য পাঞ্জাবি, মেয়ের জন্য থ্রিপিস আর আমি শাড়ি কিনেছি। এখান থেকে কেনায় কিছুটা সাশ্রয় হয়েছে।”
ব্যবসায়ীরা বলেন, এ বছর মানভেদে দেশি সুতি থ্রিপিস ৬৫০ থেকে ৮৫০ টাকায় এবং ভারতীয় সুতি থ্রিপিস ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি করছেন। এবারের ঈদ গরমের মৌসুমে পড়ায় সুতি পোশাকের চাহিদা বেশি। বুটিক থ্রিপিস ৭৫০ থেকে শুরু করে ৯৫০ টাকা পর্যন্ত, জর্জেট ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকায়, অর্গানজা ১৭০০ থেকে ২০০০ টাকা এবং টিস্যু কাপড়ের থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকায়।
ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সহযোগীদেরও ব্যস্ততা দেখা গেছে চোখে পড়ার মতো। খুচরা ব্যবসায়ীরা যেসব পোশাক কিনছেন তা মাথায় নিয়ে কুরিয়ারে পৌঁছে দিচ্ছেন কুলিরা। ওজনভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকা নিচ্ছেন তারা। আবার মালামাল বেশি হলে তা বহন করতে দেখা গেছে ভ্যানে করে।
ভ্যানে বোঝাই করে কাপড় নিয়ে যাচ্ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, “সকাল থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত মালামাল টানি। মাঝে মধ্যে একটু বিশ্রাম নিই। চা নাস্তা করে আবার কাজে লেগে পড়ি। বছরে এই রকম দুইটা সিজনেই আমাদের একটু রোজগার হয়।”
ভিড়ভাট্টা ফুটপাতেও
ইসলামপুরে বিভিন্ন বিপণিবিতানের সামনে ফুটপাতে চাদর কিংবা ত্রিপল বিছিয়ে দোকান বসিয়েছেন ভাসমান বিক্রেতারা। মোটামুটি মানের পোশাক মিলছে এসব দোকানে। বেচাবিক্রি ভালোই বলে জানাচ্ছেন দোকানিরা।
ইসলামপুর প্লাজার বিপরীতে ফুটপাতে থ্রিপিস নিয়ে বসেছেন আরিফ মিয়া৷
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে। তবে কাপড়ের দাম কিছুটা বাড়তি থাকার ফলে কাস্টমাররা দামাদামি বেশি করেন।
“কাস্টমারের চাপ থাকার কারণে একজনকে বেশিক্ষণ সময় দিতে পারি না। তাই একটা চূড়ান্ত দাম বলে দিই। তাদের সেই দামে পছন্দ হলে নেন, না হলে নেন না।”
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও নাজুক ড্রেন ব্যবস্থার কারণে ইসলামপুরে সরু রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে যায় দ্রুতই। মাথার উপরে ছাদ না থাকার কারণে তাড়াহুড়া করে দোকান গোছাতে হয় ফুটপাতের দোকানিদের। আবার দোকানের উপরে পলিথিন দিলেও রাস্তার কাদা ও বৃষ্টির পানির কারণে বেশ বেগ পেতে বলে জানান কয়েকজন।
ফুটপাতের ব্যবসায়ী সুলতান আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুপুরের পর থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত বেচাকেনা ভালোই হয়। তবে বৃষ্টি হলে আমাদের মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। রাস্তার যে বাজে অবস্থা, সামান্য বৃষ্টিতেই ব্যবসা করা মুশকিল হয়ে পড়ে।”