‘দাম কমছে’ বলছেন বিক্রেতা, তবে স্বস্তি ফেরেনি ক্রেতার

সবজি বিক্রেতা কামরুল বলেন, "দাম কমের কারণ হল, বাজারে শীতের সবজি ঢুকতেছে। মাঝে অতিরিক্ত বর্ষার জন্য সবজি আসে নাই, তাই দাম বাইড়া গেছিল।"

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2023, 02:24 PM
Updated : 3 Nov 2023, 02:24 PM

সাপ্তাহিক ছুটিতে দিন বাজার মানেই এই মুহূর্তে মানুষের জিজ্ঞাসা আলু আর পেঁয়াজের দর। লাগাম ছাড়া হয়ে গেছে দুটি পণ্য। কোনো ‘নিয়ন্ত্রণ’ নেই, যার যেখানে যত খুশি, তত দাম চাইছে। 

তবে বিক্রেতাদের তথ্য বলছে, এই দুটি পণ্য ছাড়াও কাঁমাচালের দাম এখন পড়তির দিকে। শীত ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বাড়ছে সবজির প্রবাহ। কমে আসছে দাম। পানি কমে আসায় মাছের দামও পড়তির দিকে। 

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার এবং নিউ ইস্কাটনের সবজির দোকান ঘুরে জানা যায়, প্রায় সব পদের দামেই গত দুই সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি কমেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। মাছের দাম কেজিতে কমেছে ৫০ টাকা পর্যন্ত। 

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে দাম কমেছে, তাই তারাও কম রাখছেন। তবে এখনও যে দর, সেটি স্বল্প আয়ের মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। বিশেষ করে আলু পেঁয়াজের দর তৈরি করছে ক্ষোভ। 

সরকার পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দর বেঁধে দিয়েছে ৬৫ টাকা, আলুর ৩৬। কিন্তু বাজারে পেঁয়াজ বিকোচ্ছে কোথাও ১১০, কোথাও ১২০ কোথাও ১৩০ বা ১৪০; আলু কোথাও ৬০, কোথাও ৬৫, কোথাও ৭০। পেঁয়াজের দর এরচেয়ে বেশি দেখেছে দেশবাসী। কিন্তু আলুর এই উত্থান কারও স্মৃতিতে নেই। বরং সবজির দাম বেশি হলে স্বস্তার আলুতে রান্না করে এসেছে গরিব মানুষ। 

মাসের বাজার কিনতে পান্থপথ থেকে কারওয়ান বাজারে আসা জাহিদুল ইসলাম বলেন, "বেতন পাই ১৫ হাজার। বাসা ভাড়া দেব না খাব? এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে গেলে যদি ১০০ টাকার বেশি লাগে, তাহলে হাতে থাকে কী?" 

শীতের আগাম সবজি এলেও জাহিদুলের মতো মানুষের জন্য বেশিরভাগে হাত দিতে ‘মানা’। তিনি বলেন, “এই সময়টায় তাজা টমেটো, গাজর, শিম খুব মজা। কিন্তু এসবের একটাও আপনি ১০০ টাকার নীচে পাবেন না। এইসব কারণে মেসের মিল চার্জও বেড়ে গেছে। আগে ছিল ৫০, এখন ৭০ টাকা।" 

সবজি বিক্রেতা মামুন বলেন, "পিঁয়াজের দাম যে ১০০-১২০ টাকা, এটা কি আজ নতুন? অনেকদিন ধইরাই তো পিঁয়াজের দাম বাড়তি। যা দাম বাড়ার, আগেই বাড়ছে। নতুন কইরা বাড়ে নাই। বরং সবজির দাম কম এখন। প্রায় সব সবজির দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা কইরা কম এখন। কোনো কোনোটার দাম ২০ টাকাও কমছে। যেমন, বেগুন।" 

আরেক বিক্রেতা কামরুল বলেন, "দাম কমের কারণ হল, বাজারে শীতের সবজি ঢুকতেছে। মাঝে অতিরিক্ত বর্ষার জন্য সবজি আসে নাই, তাই দাম বাইড়া গেছিল।" 

সবজির বাজারে টানা তিন দিনের অবরোধের কোনো প্রভাব পড়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমার হিসাবে পড়ে নাই। কারণ, বাজারে আমদানি প্রচুর। " 

তবে এই দরেও পণ্য কেনা কঠিন হয়ে যাচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে শিউলি আক্তারের জন্য যাকে কাঁচামরিচের দাম নিয়ে দর কষাকষি করতে দেখা গেল কারওয়ানবাজারে। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "সংসারে মানুষ বলতে আমি, আমার বাচ্চা এবং আমার মা। যে বেতন পাই, তার বড় অংশ যায় বাসা ভাড়া, মায়ের ওষুধ আর সন্তানের পেছনে। এতদিন সামলাতে পারলেও এ বছর আমি সংসার চালিয়ে নিতে আসলেই হিমশিম খাচ্ছি। যে হারে সবকিছুর দাম বাড়ছে, সে হারে বেতন বাড়ছে না। জানি না এর শেষ কোথায়।" 

কোন পণ্যের দাম কত 

কারওয়ান বাজারে বড় আকারের ভারতের পেঁয়াজের কেজি এখন ১১০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১২০ টাকা। 

সুপার শপ স্বপ্ন এদিন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছে ১৩৫ টাকা কেজি দরে আবার ডেইলি শপিং বিক্রি করেছে ১৪০ টাকায়, যেখানে দুই দিন আগেই দর ছিল ১৩০ টাকা। 

কারওয়ান বাজারে সবজির মধ্যে নতুন আলুর কেজিপ্রতি ১২০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, শিম ১০০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে শিমের দাম ২০০ টাকার কাছাকাছি ছিল, নতুন আলু কদিন আগেও ছিল ১৬০। 

মরিচের দাম দোকানের স্থান ও প্রকারভেদে ১৪০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে। 

অন্যান্য সবজির মধ্যে কচুমুখী ৮০, বেগুনের ৬০ থেকে ৮০ টাকা। পটল, লাউ ঝিঙ্গার দাম কমে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় নেমেছে। ৫০ টাকায় মিলছে ঢেঁড়স, বাঁধাকপি, মূলা ও শসা। পেপের দাম পড়ছে ৩০ টাকার আশেপাশে। 

যেসব ফুলকপি উঠেছে, সেগুলো এখনও সেভাবে পরিপক্ক হয়নি। দাম আকারভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। 

সব কিছুর দাম ইস্কাটন এলাকার দোকানগুলোতে কেজিতে অন্তত ৫ টাকা করে বেশি। 

মাছের দামও পড়তি 

মাঝারি আকারের রুইয়ের দাম এখন ৩২০ থেকে ৩০ টাকা, যা কিছুদিন আগে ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি হয়ে গিয়েছিল। 

দেড় কেজি ওজনের রুই এদিন ও সুপার শপ স্বপ্নে ছিল ৩১৫, ডেইলি শপিংয়ে ৩২৯ টাকা। আকার দুই কেজি হয়ে গেলে মীনা বাজার বিক্রি করেছে ৪০০ টাকা দরে। 

সুপার শপগুলোতে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে ৫০ টাকার বেশি। 

কাতলের দাম রুইয়ের চেয়ে কিছুটা কম থাকে। তবে এই সময়ে বেশ বড় আকারের চাষের কাতল পাওয়া যাচ্ছে, কেজিপ্রতি দাম ৩৫০ টাকা থেকে শুরু। দুই সপ্তাহ আগে তা ৪০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। 

বড় আকারের বোয়াল ৭০০, কোরাল ৯০০, আইর ১২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। 

শিকারে নিষেধাজ্ঞা শেষে আবার উঠছে ইলিশ। ৯০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের হলে দাম ১৫০০ টাকা এবং ১২০০-১৪০০ গ্রাম হলে বিক্রেতারা দাম হাঁকছেন ১৮০০ টাকা। 

চিংড়ির দাম অনেকটাই কমে এসেছে। দুই সপ্তাহ আগে যে হরিণার দাম ৭০০ টাকার বেশি ছিল, সেটি ইস্কাটনে বিক্রি হয়েছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায়। কমেছে বাগদা ও গলদার দামও। 

সুপার শপে চিংড়ির দাম বাইরের বাজারের চেয়ে বেশি হলেও কেজিতে ২০০ টাকার মতো কমেছে। 

আরেক আলোচিত পণ্য ডিমের দামও কিছুটা কমেছে। কারওয়ানবাজারে লাল ডিমের ডজন দেখা গেছে ১৪৫ টাকা, সাদা ডিমের ১৪০। 

কারওয়ানবাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম দেখা গেছে কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা এবং সোনালি মুরগির দাম ৩০০ টাকা কেজি। এলাকার বাজারে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি।