জানুয়ারিতেও রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে

জানুয়ারিতে পণ্য রপ্তানি করে ৫১৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ; তাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2023, 06:17 AM
Updated : 2 Feb 2023, 06:17 AM

শিল্প মালিকদের আশঙ্কা ভুল প্রমাণ করে গত দুই মাসের ধারাবাহিকতায় জানুয়ারির রপ্তানি আয়ও ৫ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছে।

বৃহস্পতিবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, জানুয়ারিতে পণ্য রপ্তানি করে ৫১৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।

এই আয় আগের বছরের একই মাসের ৪৮৫ কোটি ডলারের চেয়ে ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। তবে এবারের জানুয়ারির ৫২৪ কোটি ৬০ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ১০ শতাংশ কম।

গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসেও ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। সবশেষ ডিসেম্বর মাসে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার আয় হয় রপ্তানি থেকে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

জানুয়ারি মাস শেষে অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে রপ্তানি থেকে ২৯ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল বাংলাদেশের।

ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গত চার মাস ধরেই দেশে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার কথা বলে আসছিলেন প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকের শিল্প মালিকরা। এর সঙ্গে দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট যুক্ত হওয়ায় রপ্তানি খাতের দুরাবস্থা বোঝাতে জানুয়ারি মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক দিকে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তারা। তবে বাস্তবে তা ঘটেনি।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কারখানাগুলোতে এই মুহূর্তে পরিপূর্ণ অর্ডার নেই। আগামী এপ্রিল মাস পর্যন্ত হয়ত এমন পরিস্থিতি বিরাজ করবে, একটা চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাংকের সুদহার বেড়ে যাচ্ছে, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে বাজারে পোশাকের চাহিদা কমে যায়।”

এমন পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ রপ্তানিতে ভালো করার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আমাদের ভাগ্য ভালো যে, আমরা কিছু উচ্চমূল্যের পোশাকের বাজার ধরতে পেরেছি। বিশ্বে এখন আমাদের ইমেজ আগের চেয়ে বেড়েছে। আগে যেখানে ১০ ডলারের বেশি দামের শার্টের অর্ডার এ দেশে আসত না, এখন সেখানে ২০ ডলারের শার্টের অর্ডারও আমরা পাচ্ছি। ১৫ ডলারের জ্যাকেটের পাশাপাশি এখন ২৫/৩০, এমনকি ৩৫ ডলারের জ্যাকেটের অর্ডারও আসছে।

“ভারত, কোরিয়া, জাপানের মত অপ্রচলিত বাজারে আমাদের পণ্য রপ্তানির হার বেড়েছে। এসব কারণেই খারাপ পরিস্থিতির মধ্যেও রপ্তানি আয় শক্তিশালী হচ্ছে।”

Also Read: এক মাসের রেকর্ড রপ্তানি আয় দিয়েছে ডিসেম্বর

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি আছে কিংবা ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি হয়েছে, যাই বলুন না কেন- আমরা কিন্তু ভালো নেই।

“গ্রোথ দেখা যাচ্ছে ভালো, কিন্তু কীভাবে এটা ভালো হচ্ছে আমরা বুঝছি না। আমাদের গ্রোথ ভালো নেই, আমরাও ভালো নেই। একটা শিল্পের যত ধরনের সংকট মোকাবেলা করার আছে, বর্তমানে সব ধরনের সংকটই বিদ্যমান।”

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “গ্যাস নেই, উৎপাদন নেই, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, গ্যাসের দাম বেড়েছে। আনুসঙ্গিক সব কাঁচামালের দাম বেড়েছে, রপ্তানি আদেশ কমেছে। ক্রেতারা পণ্য নিয়ে পয়সা দিচ্ছে না, অনেক সময় ১৮০ দিন ২০০ দিনও বিলম্ব করছে। তৈরি হওয়া পণ্যের শিপমেন্ট নিচ্ছে না। ব্যাংক ব্যাক টু ব্যাক এলসি নিচ্ছে না। কারণ আমাদের অনেকেই আগের এলসির দাম পরিশোধ করতে পারিনি।”

টানা তিন মাস ধরে রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি থাকা প্রসঙ্গে হাতেম বলেন, “কিছু সংখ্যক রপ্তানিকরক হয়ত ভালো করছে, সে কারণে এমন একটা রপ্তানি আয় আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ রপ্তানিকারকের অবস্থা ভালো নেই।” 

জানুয়ারির শেষে রপ্তানি আয়ের মূল চালিকা শক্তি পোশাক খাতও সামগ্রিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধির চেয়ে তুলনামূলক এগিয়ে আছে। সাত মাসে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৭৪১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পোশাক, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রপ্তানি হয়েছিল ২৩৯৮ কোটি ৫২ লাখ ডলারের পোশাক পণ্য।

রপ্তানির অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতগুলোর মধ্যে কৃষিপণ্য গত বছরের চেয়ে ২৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং পাট ও পাটজাত পণ্য ২১ দশমিক ২২ শতাংশ পিছিয়ে গেছে।

বছরের প্রথম সাত মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৫৫ কোটি ৫২ লাখ ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ে ৭৪ কোটি ৮৯ লাখ ডলার ছিল।

এই সাত মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৫৪ কোটি ৮১ লাখ ডলারের যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬৯ কোটি ৫৭ লাখ ডলার।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের খাত এই সাত মাসে এক বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করতে না পারলেও ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৭৩ কোটি ৩০ লাখ ডলারের চামড়া পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৮ কোটি ২৭ লাখ।