Published : 04 Feb 2025, 10:05 PM
রপ্তানির বাণিজ্যে ইতিবাচক ধারায় ভর করে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাণিজ্য ঘাটতি আরো কিছুটা কমে এসেছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশ ২২ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
ছলতি অর্থবছরে এই ছয় মাসে ৩২ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ৩০ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ।
এই হিসাবে ছয় মাসে সার্বিক বাণিজ্য ঘাটতি কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল ১০ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার।
এর সঙ্গে চলতি হিসাব ভারসাম্য, আর্থিক হিসাব, রেমিটেন্স ও ট্রেড ক্রেডিটের মত গুরুত্বপূর্ণ সূচকে উন্নতি হয়েছে।
তবে সার্বিক ব্যালেন্স, এরর অ্যান্ড ওমিশনের মত সূচকে উন্নতি না হওয়ায় অর্থনীতিবিদরা এবারের পরিসংখ্যানকে পুরোপুরি স্বস্তির বলতে পারছেন না।
বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগেও পণ্য রপ্তানি হত, তবে ডলার আসত কম। অর্থাৎ যা আসার দরকার তার চেয়ে কম আসত। তবে চলতি বছর এ হিসাবের ঘাটতি কমে এসেছে। তাতে বুঝা যায় দেশে রপ্তানি আয় আসা বেড়েছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ট্রেড ক্রেডিটের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৪৫ মিলিয়ন ডলারে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার।
বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে ৩৩ মিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত আছে এখন। আগের অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এই হিসাবে ছিল ঘাটতি ৩ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।
নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হল, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
এই ছয় মাসে আর্থিক হিসাবে আছে ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। আর গত অর্থবছরের একই সময় ছিল ৬০৪ মিলিয়ন ডলার।
আর ছয় মাসে সার্বিক ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৯৪ মিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছিল।
জাহিদ হোসেন বলেন, “চলতি ও আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকলেও সার্বিক ব্যালেন্সে এখনো ঘাটতি রয়েছে। তাই স্বস্তির সঙ্গে অস্বস্তি রয়েছে। এটা প্রধান কারণ হচ্ছে এরর অ্যান্ড অমিশনস সূচকে ঘাটতি রয়েছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, এরর অ্যান্ড অমিশনসের সূচকে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ২ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি রয়েছে। আগের অর্থবছর একই সময় ছিল ঘাটতি ৭৫১ মিলিয়ন ডলার।
জাহিদ হোসেন বলেন, “এই সূচক ইন্ডিকেট করে যে ডলার খরচ করা হয়েছে তবে এর কোনো হিসাব নেই। অর্থাৎ দেশের বাইরে এত পরিমাণ (২ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন) ডলার বাইরে গেছে কিন্তু সেটা কোথায় গেছে কিসের জন্য তা জানা নেই। হিসাববিহীন যে আউটফ্লো তা বেড়ে গেছে। এটা উদ্বেগের বিষয়।”
তিনি বলেন, “এই ২০০ কোটি ডলার (২ বিলিয়ন) কোথায় গেল, এটার স্পষ্টতা নেই। এটাতে টাকা পাচারের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া।”