সব দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু দৈনন্দিন কাজ চালাতে পারার মত ন্যূনতম পরিমাণ অর্থ ধার দিচ্ছে ব্যাংকগুলোকে, বলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র।
Published : 01 Jul 2024, 12:44 AM
সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের মধ্যে শরীয়াহভিত্তিক ১০টির মধ্যে ছয়টি ব্যাংকের অবস্থার অবনতি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, ক্রমাগত আমানত ও ঋণের বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারছে না এই ছয় ব্যাংক। এর প্রভাব পড়ছে শরীয়াহভিত্তিক অন্যান্য ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতির উপরও। সংকটের সময় অবশিষ্ট চার ব্যাংক এসব ব্যাংক থেকে ধার নিতে পারত।
আমানত কমে আসায় এখন অন্য ব্যাংকগুলোকে সহযোগিতা করতে পারছে না শরীয়াহভিত্তিক এই ছয় ব্যাংক। এক সময়ে অন্যকে ধার দেয়ার সক্ষমতা থাকা ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেই ধার করে চলছে।
এই ছয় ব্যাংক গত কয়েক বছর ধরেই তারল্য সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা উদ্যোগের মধ্যেও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।
সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিতে বাজার থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসময়ে শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে ধার দেওয়া বন্ধ করলে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট আরও বাড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘এমনিতেই ব্যাংক খাত থেকে তারল্য সংকোচনের পথে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ না আসা পর্যন্ত চলমান উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। তাই তারল্য সহায়তা বন্ধ করলে ব্যাংকগুলো আরও সংকটে পড়ে ব্যাংক খাতে ভিন্ন সমস্যার উদ্ভব হতে পারে।’’
তিনি বলেন, সব দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু দৈনন্দিন কাজ চালাতে পারার মত ন্যূনতম পরিমাণ অর্থ ধার দিচ্ছে ব্যাংকগুলোকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, গত মার্চ শেষে আগের ডিসেম্বরের তুলনায় শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে ১ দশমিক ২১ শতাংশ।
গত ডিসেম্বর শেষে শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানতের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। তা মার্চে হয়েছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে আমানত কমেছে ৪ হাজার ৫৮৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা ১ দশমিক ২১ শতাংশ।
অথচ এ সময়ে প্রচলিত ধারার ব্যাংকে আমানত বেড়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আমানতের স্থিতি ছিল ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা। মার্চ শেষে বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪ হাজার ৫৫ কোটি টাকা।
সেই হিসাবে তিন মাসে আমানত বেড়েছে ১৫ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ২৯ শতাংশ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘প্রথমত দিন দিন ব্যাংকের যে দুরাবস্থা তৈরি হচ্ছে তাতে মানুষের ব্যাংকগুলোর প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে। তার প্রভাব ইসলামী ব্যাংকগুলোতেও পড়েছে। তারা তো এসব ব্যাংকে টাকা রাখে বিশ্বাস করে। সেখানে আগের মত থাকতে পারছেন না।
‘‘এখন ইসলামী ব্যাংকগুলোও টাকা ধার নিয়ে চলছে। সার্বিকভাবে এর একটা প্রভাব পড়ছে আমানতের উপর। পরের কারণটি হল, মানুষ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতেও টাকা তুলছে বেশি। এতে ডিপোজিট যে কমবে, তা স্বাভাবিক।’’