২০০৭ সালের ১ অগাস্ট আবদুল আউয়াল মিন্টু, তার স্ত্রী ও ছেলের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছিল সিআইসি।
Published : 24 Aug 2024, 10:03 PM
ক্ষমতার পালাবদলে ১৭ বছর পর ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়া হলো দেশের অন্যতম ব্যবসায়ী নেতা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর।
একই সঙ্গে তার স্ত্রী নাসরিন ফাতেমা আউয়াল ও ছেলে তাবিথ আউয়ালের ব্যাংক হিসাবও খুলে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি দিয়ে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল-সিআইসি।
সিআইসির মহাপরিচালক মো. খাইরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদের সব অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ই এ-সংক্রান্ত চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।”
২০০৭ সালের ১ অগাস্ট আবদুল আউয়াল মিন্টু, তার স্ত্রী ও ছেলের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছিল সিআইসি।
সিআইসির পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, “সরকারি রাজস্ব-সংক্রান্ত স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১১৭ (৪) ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আবদুল আউয়াল মিন্টু, নাসরিন ফাতেমা আউয়াল ও তাবিথ আউয়ালের একক ও যৌথ নামে সব সক্রিয় ও সুপ্ত ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন ও স্থানান্তর স্থগিত করা হয়েছিল। এখন এই আদেশ প্রত্যাহার করা হলো।”
এর ফলে এই তিনজনের চলতি হিসাব, সঞ্চয়ী হিসাব, মেয়াদি আমানত হিসাব, লোন হিসাব, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, ভল্ট, লকার, সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য সেভিংস ইনস্ট্রুমেন্টসহ সব ধরনের হিসাব খুলে গেল।
এদিকে ক্ষমতার পালাবদলে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ে রদবদলের ধারায় ন্যাশনাল ব্যাংকের নবগঠিত পর্ষদে উদ্যোক্তা পরিচালক আবদুল আউয়াল মিন্টু ফের জায়গা পেয়েছেন।
১৯৮৩ সালে ১৮ জন উদ্যোক্তা পরিচালক মিলে শুরু করেন ন্যাশনাল ব্যাংক, যাদের মধ্যে ছিলেন ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু, একেএম আবু তাহের, আবু তাহের মিয়া, জয়নুল হক সিকদার, খলিলুর রহমান ও মোয়াজ্জেম হোসেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে পরিচালনা পর্ষদে ব্যাপক বদলের মাধ্যমে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের কাছে। তখন থেকে একে একে অন্য পরিবারের পরিচালকরা পর্ষদ থেকে বাদ পড়েন। জয়নুল হক সিকদারের স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা পর্ষদে আসেন।
মিন্টু ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি। তিনি বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন। আর তাবিথ আউয়াল বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হয়ে ২০১৫ ও ২০১৮ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র নির্বাচন করেছিলেন।
১৭ বছর পর গত সোমবার একইভাবে সকল ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়া হয় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পরামর্শের পর এনবিআরের নতুন চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের তরফে এ নির্দেশনা আসে।
আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালে খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। পরে শেখ হাসিনার ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়া হলেও খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাব বন্ধই ছিল।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাব খুলে দিতে বহুবার এনবিআরে আবেদন করা হয়েছে কিন্তু লাভ হয়নি।
কর কর্মকর্তারা বলছেন, আয়কর অধ্যাদেশের ১১৬ (এ) ধারা অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যাংক হিসাব বন্ধ অবস্থায় ছিল।
পুরোনো সে আইনে এক বছর পর আদেশের কার্যকারিতা বাতিল হওয়ার কথা থাকলেও ব্যাংকগুলো হিসাব অবমুক্ত না করায় সোমবার সব ব্যাংকে চিঠি দিয়ে খালেদা জিয়ার হিসাবগুলো খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন