ডিস্ট্রিবিউটররা ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ায় তারা ই-মানি পাচ্ছেন। তাতে সেবা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন এজেন্টরা।
Published : 24 Jul 2024, 10:12 PM
নজিরবিহীন সহিংসতায়র মধ্যে পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হওয়ায় ধীরে ধীরে সচল হচ্ছে বিকাশ, নগদ ও রকেটের মত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসগুলোর (এমএফএস) এজেন্ট কার্যক্রম।
বুধবার রাতে মোবাইল ইন্টারনেট ও বৃহস্পতিবার রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে। তাতে ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা।
বুধবার বিকাশের করপোরেট কমিউনিকেশনের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যাংক খোলায় তাদের এজেন্ট কার্যক্রম সচল হচ্ছে। তারা আশা করছেন, পুরোপুরি এজেন্ট কার্যক্রম দ্রুতই শুরু হবে।
এমএফএস কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে ইলেকট্রনিক মানি (ই-মানি) পাননি এজেন্টরা। এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে ব্যবসাটি পরিচালনা করে। প্রতিটি এলাকায় ডিস্ট্রিবিউটরের অধীনে এজেন্টরা এই সেবা গ্রাহকদের দিয়ে থাকে।
ডিস্ট্রিবিউটররা ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে পরবর্তীতে এজেন্টদের চাহিদামত ই-মানি কিনে নেয়। সেই ই-মানি এজেন্টরা গ্রাহকের হিসাবে টাকা জমা, বা অন্যকে টাকা পাঠানো, কিংবা মোবাইল রিচার্জ, বিল পরিশোধসহ নানা সেবায় ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে কার্যক্রমটি বন্ধ ছিল।
ই-মানি পেলেই এজেন্টরা গ্রাহকদের এমএফএস সুবিধা দিতে পারেন। আগের ই-মানি শেষ হয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার পর্যন্ত গ্রাহকরা এজেন্ট কার্যক্রম থেকেও সেবা পায়নি।
এজেন্টরা ডিস্ট্রিবিউটারের মাধ্যমে ই-মানি কিনলেও গ্রাহকরা নিজেরাই ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহার করে ই-মানি কিনতে পারেন।
ইন্টারনেট ছাড়া ইউএসএসডি কোড পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে এমএফএস সেবা পান গ্রাহকরা। এই সেবার জন্য এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশের গ্রাহকেরা *২৪৭#, নগদের গ্রাহকেরা *১৬৭# ও রকেটের *৩২২# ডায়াল করে সেবা নিতে পারেন। কিন্তু গত দুই দিন সোমবার ও মঙ্গলবার গ্রাহকরা সেবা পেতে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
বুধবার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাংক খোলায় এ সমস্যা সমাধান শুরু করছে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো। ডিস্ট্রিবিউটররা ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ায় তারা ই-মানি পাচ্ছেন। তাতে সেবা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন এজেন্টরা।
কয়েকটি এলাকার এমএফএস এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিকাশ কিংবা নগদের মত এমএফএসে ক্যাশ আউট করা যাচ্ছে।
গ্রাহকরা সাধারণত মোবাইল আর্থিক সেবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিয়ে থাকেন। এসব এমএফএস অ্যাপ মোবাইলেও ডাউনলোড থাকে। প্রয়োজন হলে দ্রুত ক্যাশ আউট কিংবা লেনদেন করেন। কিন্তু ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার কারণে ইউএসএসডি কোড ব্যবহার করছেন গ্রাহকরা। অনেক গ্রাহকের হিসাবে আগে অর্থ জমা ছিল। কেউ কেউ সেখান থেকেও সেবা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিকাশের করপোরেট কমিউনিকেশনের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসলে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে ডিস্ট্রিবিউটাররা ব্যাংকে টাকা জমা দিতে পারেন নাই। ফলে এজেন্টরাও তাদের কাছ থেকে ই-মানি পাননি। এটি না পেলে এমএফএস এজেন্টরা সেবা দিতে পারেন না।
“বুধবার ব্যাংক খুলেছে। আমরা তাদের নির্দেশনা দিয়েছি এই সেবা অব্যাহত রাখার জন্য। যে সংকট তৈরি হয়েছিল, সেটি খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।”
কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকেই আন্দোলন চালিয়ে আসছিল শিক্ষার্থীরা। তারা ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধের কর্মসূচির পর সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করলে আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। এক সপ্তাহে প্রাণ যায় প্রায় দুইশ মানুষের।
গত বৃহস্পতিবার থেকে পরের দুই দিনে সেতু ভবন, বিআরটিএ ভবন, দুর্যোগ ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম, মেট্রোরেলের দুটি স্টেশন, বিটিভি, হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা, মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর স্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের মহাখালী অংশ, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, পুলিশ স্টেশন, বনশ্রী পিবিআই অফিস, উত্তর সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি, উত্তরা ও মোহাম্মদপুর কমিউনিটি, মহাখালীন ডিএনসিসি হাসপাতাল, নরসিংদী কারাগারসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এ অবস্থায় শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কারফিউ জারি করে সরকার। সেই সঙ্গে মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী।
সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, ছাত্রদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত এসব নাশকতা ঘটিয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল সরকারের পতন ঘটানো।