বর্তমানে দুটি ব্লকে অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি। দরপত্র ডাকা হয়েছে বাকি ২৪টি ব্লকের জন্য।
Published : 10 Mar 2024, 10:16 AM
নতুন মডেল পিএসসি অনুমোদনের পর বঙ্গোপসাগরের ২৪টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র ডেকেছে পেট্রোবাংলা।
রোববার পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইট এবং বিভিন্ন ইংরেজি পত্রিকায় দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
অগভীর সমুদ্রের নয়টি ব্লকে এবং গভীর সমুদ্রের ১৫টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য এই দরপত্র ডাকা হয়েছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টার মধ্যে নির্ধারিত ঠিকানায় দরপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। সেদিন একঘণ্টা পর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সামনে দরপত্র উন্মুক্ত করা হবে।
সমুদ্রের বাংলাদেশ অংশকে মোট ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে গভীর সমুদ্রে ১৫টি এবং ১১টি অগভীর সমুদ্রে।
বর্তমানে দুটি ব্লকে অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি। দরপত্র ডাকা হয়েছে বাকি ২৪টি ব্লকের জন্য।
ইতোমধ্যে মার্কিন কোম্পানি শেভরন, এক্সোনমবিলসহ কয়েকটি প্রথম সারির কোম্পানি বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এবার ৫৫টি আন্তর্জাতিক কোম্পানি দরপত্রে অংশ নিতে পারে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।
পেট্রোবাংলার চেয়রম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, “এবারের মডেল পিএসসিকে আগের চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয় ও বিনিয়োগবান্ধব করা হয়েছে। দরপত্র আহ্বানের পর আমরা ব্যাপক প্রচার চালাব। আশা করছি সবচেয়ে যোগ্য ও দক্ষ প্রতিষ্ঠানকেই অনুসন্ধান কাজে যুক্ত করতে পারব।”
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ২০১৬ সালে সর্বশেষ দরপত্র ডেকেছিল পেট্রোবাংলা। এরপর ২০১৯ সালে নতুন উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) করা হয়, কিন্তু দরপত্র ডাকা হয়নি।
সরকার গত জুলাইয়ে নতুন পিএসসির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়, যেখানে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আকর্ষণে আগের চেয়ে সুবিধা বাড়ানো হয়।
২০১৯ সালের পিএসসিতে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছিল গভীর সমুদ্রে ৭.২৫ ডলার এবং অগভীর সমুদ্রে ৫.৫ ডলার। এবারের পিএসসিতে কোনো দাম বেঁধে দেওয়া হয়নি। গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামের ১০ শতাংশ। এই দাম নির্ধারিত হবে আন্তর্জাতিক বাজারের দরের ওপর ভিত্তি করে।
ব্লক ইজারা নেওয়া কোম্পানি পেট্রোবাংলার সঙ্গে কী হারে মুনাফা ভাগাভাগি করবে, সেই অনুপাতও বদলানো হয়েছে নতুন পিএসসিতে।
সাগরে অনুসন্ধান কার্যক্রম
আন্তর্জাতিক আদালতে দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ২০১২ সালে ভারতের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। এরপর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ২০১৬ সালে দরপত্র ডাকা হয়।
তখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেল-গ্যাসের দরপতন ও লাভের হিস্যা আকর্ষণীয় না হওয়ায় কোম্পানিগুলো খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি। এরপর সরকার মডেল পিএসসি নবায়নের কাজে হাত দেয়।
কিন্তু এরপর আসে কোভিড মহামারী, তারপর ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধের ধাক্কা। সব মিলিয়ে তেল-গ্যাসের বাজারও অস্থির হতে থাকে।
সব মিলিয়ে এখন বঙ্গোপসাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০০৮ সালে ডাকা দরপত্রের মাধ্যমে ২০১০ সালে গভীর সমুদ্রে দুটি ব্লকে কাজ নেয় কনোকো ফিলিপস। তারা দ্বিমাত্রিক জরিপ চালালেও পরে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি পূরণ না হওয়ায় কাজ ছেড়ে চলে যায়।
একইভাবে চুক্তির পর কাজ ছেড়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার স্যান্টোস ও দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু। এর মধ্যে দাইয়ু কাজ করে গভীর সমুদ্রের ১২ নম্বর ব্লকে।
বর্তমানে একমাত্র কোম্পানি হিসেবে অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ভারতের কোম্পানি ওএনজিসি।
গভীর বঙ্গোপসাগরে নিজ সীমানায় অনুসন্ধান চালিয়ে এরই মধ্যে বড় সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশে দুই প্রতিবেশি দেশ ভারত ও মিয়ানমার। চলতি বছরের শুরুতে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে গভীর সাগরে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বড় মজুত পেয়েছে ওএনজিসি।
আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমার বাংলাদেশের সীমানার নিকটবর্তী এলাকার মিয়া ও শোয়ে নামে দুটি গ্যাসকূপ থেকে এরই মধ্যে গ্যাস উত্তোলন শুরু করেছে।