মঙ্গলবার দুপুর থেকে ফের নভোএয়ারের টিকেট বুকিং দেওয়া যাচ্ছে।
Published : 15 Apr 2025, 05:14 PM
দেশের তিন বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থার একটি নভোএয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়ার গুঞ্জন চলছে অনেকদিন ধরে। এবার এই তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে।
মূলত, নভোএয়ারের ওয়েবসাইট থেকে এপ্রিলের ১৯ তারিখের পরের কোনো ফ্লাইটের টিকেট বুকিং করা যাচ্ছিল না; এ তথ্য জানাজানি হওয়ার পরই বন্ধ হওয়ার গুঞ্জন আরও ডালপালা মেলে।
তবে এয়ারলাইন্সটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার তথ্য ‘ঠিক নয়’ বলে জানিয়েছেন নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মফিজুর রহমান।
মঙ্গলবার দুপুরে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা একটি কারণে ১৯ এপ্রিলের পর থেকে ফ্লাইটের টিকেট বুকিং বন্ধ রেখেছিলাম। তাতেই এই আলোচনা হচ্ছে। এখন আবার আমরা ফ্লাইট চালু করেছি, টিকেট বুকিং দেওয়া যাচ্ছে।”
মঙ্গলবার সকালে চেষ্টা করেও নভোএয়ারের ওয়েবসাইট থেকে ১৯ এপ্রিলের পরের কোনো ফ্লাইটের টিকেট বুকিং করা না গেলেও দুপুরের পর থেকে আবারও টিকেট বুকিং করা যাচ্ছে।
নভোএয়ার ছাড়াও দেশে আরও দুটি বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা হচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এবং এয়ার অ্যাস্ট্রা।
এদিকে, নভোএয়ারের বন্ধ হয়ে যাওয়ার গুঞ্জন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্নজন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
মাহবুব কবির মিলন নামের একজন ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, “ডমেস্টিক এয়ারলাইন্স নভোএয়ার ১৯/০৪/২০২৫ থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটা তাদের মালিকদের সিদ্ধান্ত। তারা আর এ ব্যব্যসায় করবে না। সব প্লেন বিক্রি করে দিচ্ছে। আকাশ পরিবহনে অবশ্যই একটা খারাপ খবর। কম্পিটিটিভ বিনিয়োগ বা ব্যবসার যুগে একটা ভাল এবং চালু ব্যবসায় বন্ধ হয়ে যাবে, মেনে নেওয়া খুব কঠিন।”
সেই পোস্টে মল্লিকা দাস নামে একজন মন্তব্য করেছেন, “নভোএয়ারের সার্ভিস আমার খুবই ভালো লাগতো। এয়ারলাইন্সটি যে কারণেই বন্ধ হোক না কেন বিষয়টি দুঃখজনক।”
নভোএয়ারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা মূলত আমাদের ছোট এয়ারক্রাফটগুলো বিক্রি করে বড়ো এয়ারক্রাফট কেনার চেষ্টা করছি। কিছুদিন আগে ক্রেতাদের একটি দল এয়ারক্রাফটগুলো কেনার আগ্রহ দেখায়। তারা পরিদর্শনে আসার কথা ছিল। এজন্য আমরা ১৯ তারিখের পর টিকেট বুকিং বন্ধ রেখেছিলাম।
“আজ আমাদের মিটিং ছিল। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে ফ্লাইট চলবে। টিকেটও বুকিং এখন দেওয়া যাচ্ছে।”
নভোএয়ারের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার গুঞ্জন প্রায় বছর দুয়েক ধরেই চালু রয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে নেপালের ইয়েতি এয়ারলাইন্সের কাছে দুটি এটিআর ৭২-৫০০ মডেলের এয়ারক্রাফট বিক্রি করে দেয় নভোএয়ার। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি এয়ারক্রাফট দুটি বুঝে নেয় ইয়েতি এয়ারলাইন্স।
সে সময় বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নভোএয়ারের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, লম্বা রুটের জন্য এয়ারক্রাফট কিনতেই স্বল্প দূরত্বে ওড়ার উপযোগী এটিআরের এয়ারক্রাফটগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা।
সেই দুটি এয়ারক্রাফট বিক্রির পর পাঁচটি এয়ারক্রাফট আছে এখন বেসরকারি এই উড়োজাহাজ সংস্থার বহরে।
২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করেছিল নভোএয়ার। এরপর এক যুগ ধরে এক লাখের বেশি ফ্লাইট চালিয়ে সাড়ে ৭০ লাখের বেশি যাত্রীকে সেবা দিয়েছে তারা।
দেশের ‘প্রথম’ এয়ারলাইন্স হিসেবে নভোএয়ার যাত্রীদের জন্য চালু করেছিল ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লায়ার প্রোগ্রাম–স্মাইলস, কো-ব্রান্ডেড কার্ড, টিকিট কেনার জন্য মোবাইল অ্যাপ এবং ওয়েব চেক-ইন সুবিধা।
ভ্রমণ বিষয়ক পাক্ষিক ম্যাগাজিন ‘দ্য বাংলাদেশ মনিটরের’ বিচারে ২০১৪ সালে বেস্ট ডমেস্টিক এয়ারলাইন্স, ২০১৯ সালে বেস্ট ডমেস্টিক এয়ারলাইন্স, ২০২২ ও ২০২৩ সালে ‘বেস্ট অনটাইম পারফরমেন্স এয়ারলাইন্স’ এর পুরস্কার পায় নভোএয়ার।
বর্তমানে ঢাকা থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহীতে প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা করছে নভোএয়ার।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা-কলকাতা রুটে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করে নভোএয়ার। ২০২০ সালে কোভিড মহামারীর সময়ে এই রুটে কিছুদিন ফ্লাইট বন্ধ রেখেছিল তারা।
পরে ফের চালু হলেও ২০২৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আবারও এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা ‘সাময়িকভাবে’ স্থগিত করে এই উড়োজাহাজ সংস্থা। এখনও সেটি বন্ধই রয়েছে।
বাংলাদেশে এরইমধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, জিএমজি এয়ারলাইন্স, রিজেন্ট এয়ারওয়েজসহ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে।