বাজার ঘুরে দেখা গেছে পেঁয়াজ ও মাছের দাম কিছুটা কমেছে।
Published : 13 Sep 2024, 09:58 PM
ধারাবাহিক তিন সপ্তাহ ধরে বেড়ে চলেছে মুরগির দাম; যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর ক্রমেই চাপ সৃষ্টি করছে।
ঢাকার বিভিন্ন বাজারে এতদিন ১৭০ টাকার মধ্যে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি মিললেও এখন বিক্রেতারা তার দাম হাঁকাচ্ছেন ১৮০ টাকা। তিন সপ্তাহ আগেও এই দাম ছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা।
একইসঙ্গে চড়ছে সেনালি মুরগির দামও।গত সপ্তাহে ২৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া সোনালি শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ২৭০ টাকা কেজিতে। অথচ তিন সপ্তাহ আগেও এর দাম ছিল ২৪০ টাকা।
শুক্রবার ঢাকার কারওয়ান বাজার ও তেজকুনিপাড়া বাজার ঘুরে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লারে ১০ টাকা, আর সোনালিতে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধির তথ্য মিলেছে। আর তিন সপ্তাহের ব্যবধানে এই বৃদ্ধি এসে ঠেকেছে ব্রয়লারে ১৫ টাকা, সোনালিতে ৩০ টাকা।
কোরবানির ঈদের পর মুরগির দাম নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে এলেও সপ্তাহ তিনেক আগে থেকে বাড়তে থাকে গতি, যার আর বৃদ্ধি দেখতে চায় না ভোক্তারা।
অবশ্য ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, বন্যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। তাই সামনে মুরগির দাম আরও বাড়তে পারে।
কারওয়ান বাজারের ফারুক চিকেন ব্রয়লারের বিক্রেতা মো. দুলাল বলেন, “বন্যায় অনেক খামার নষ্ট হইছে। সেটার প্রভাব এতদিন না পড়লেও গত তিন দিন ধরে প্রভাবটা বাজারে শুরু হইছে। তিন দিনে আগে থেকে ব্রয়লারে বাড়ছে ১০ টাকা, আর সোনালিতে বাড়ছে ২০ টাকা। সরবরাহকারীরা বলতেছে, মুরগি নাকি কিছুটা ঘাটতি। “
ঢাকার বাজারগুলোতে দাম বাড়লেও ঢাকার অদূরে টঙ্গীর নতুনবাজার ও মধুমিতা মেগাসিটি কাঁচাবাজারে আগের দামেই মুরগি মিলছে। বাজার দুটি ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা ও সোনালি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা।
ঢাকার তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়া বাজারে সোনালি মুরগি কিনতে আসা রুবেল মজুমদার বলেন, “কয়েক দিন আগে তো দাম ঠিকঠাক ছিল। এখন কেন বাড়তেছে? এখন কি ফিডের দাম হুট করে বেড়ে গেছে? ঠিক কী কারণে মুরগির দাম বাড়ানো হচ্ছে, কারা বাড়াচ্ছে; এটা নিয়ে সরকারের কাজ করা দরকার।”
ব্রয়লার মুরগির দাম ১০ টাকা বাড়লেও হাসি ফুটছে না খামারিদের মুখে। তাদের দাবি, যে দামে তারা খামার থেকে মুরগি বিক্রি করেন, উৎপাদন খরচ এর চেয়ে বেশি।
ময়মনসিংহের ভালুকার আঙ্গারগাড়া বাজারের পাশে মো. শহিদুল ইসলামের ব্রয়লার মুরগির খামার রয়েছে।
তার সঙ্গে কথা হলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রায় চার মাস ধরে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে আমরা ৫০ টাকার মত লস দিচ্ছি। নিজের ব্যবসাটা টিকিয়ে রাখার জন্য খামারিরা লস দিয়েও ব্যবসা ধরে রেখেছে।”
শহিদুলের দেওয়ার তথ্য অনুযায়ী, তার এক কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন খরচ পড়ে ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকা। আর পাইকারিতে খামার থেকে তাকে মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৩৮ টাকা কেজি দরে। সেই মুরগি ঢাকায় ৪০ থেকে ৫০ টাকার মত বেশিতে বিক্রি হয় বলে শুনতে পান তারা।
তিনি বললেন, “ফিড আর বাচ্চার দাম অনেক বেশি। তাই মুরগির উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। এগুলোর দাম কমালে আমরা ক্ষতি থেকে বেঁচে যাব।”
যদিও আগের সপ্তাহের বাড়ন্ত দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম। লাল ডিমের ডজন ১৫৫ টাকা, আর সাদা ডিম ১৫০ টাকা, হাঁসের ডিম ২১০ টাকা ডজনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে। তিন সপ্তাহ আগে এই দাম আরও একটু কম ছিল।
বাজারে মুরগির দাম বাড়লেও প্রভাব নেই গরুর ও খাসির মাংসে। আগের দামেই বিক্রি চলছে। প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজিতে ফিরছে না স্বস্তি
টমেটোর দাম ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি। আর প্রতি কেজি শিমে কমেছে ৬০ টাকা, যেটি শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা কেজিতে।
১৫ টাকা কমে মানভেদে কেজিপ্রতি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে, করলা ১০ টাকা কমে ৫০ টাকা এবং চিচিঙ্গার দামও ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজিতে। ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম কমেছে ১০ টাকা, যার জোড়া বিক্রি হতে দেখা গেছে ৩০ টাকা করে। আর প্রতি কেজি পটলেও ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজিতে।
বাজারে দাম চড়ে থাকা কিছু সবজি শুক্রবার আগের দরেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতিটি লাউ আগের মতই ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে বরবটি, প্রতি কেজি ৬০ টাকা। পেঁপে বিক্রি করতে দেখা গেছে ৩০ টাকা কেজিতে।
ঢাকার বিভিন্ন বাজারে শসায় ১০ টাকা দাম বেড়েছে; শুক্রবার হাইব্রিড শসা ৫০ ও দেশি শসা ৬০ টাকা দরে কিনেছেন ক্রেতারা।
কিছু পণ্যের দাম কমতি বা বাড়তি দেখা গেলেও সবজি বিক্রেতা জাকির হোসেনের দাবি, দাম বাড়ে নাই; আবার কমেও নাই, একই দাম আছে।
কারওয়ান বাজারের চেয়ে টঙ্গীতে চড়া দাম
টঙ্গীর নতুন বাজার ও মধুমিতা মেগা সিটি কাঁচাবাজারে গোল বেগুনের দাম ৮০ টাকা ও লম্বা বেগুন ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি পটল ও ঢেঁড়স ৪০ টাকা, প্রতিটি লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শসা ৬০ টাকা, বরবটি ও কচুর লতি ৮০ টাকা কেজি, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা ও কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ টাকা দরে।
টঙ্গীর মধুমিতা মেগাসিটি কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. নূরে আলম বলেন, “গত সপ্তাহের চেয়ে আজকে (শুক্রবার) তরিতরকারির দাম খুব বেশি একটা বাড়া-কমা নাই। বাজারে নতুন কিছু সবজি আসা শুরু করেছে। কিছু দিনের মধ্যে দাম কিছু কমতে পারে “
টঙ্গী নতুন বাজারে তরিতরকারি বিক্রেতা আব্দুল্লাহ সাগর বলেন, কিছু দিন ধরে সবজি ও তরিতরকারির দাম প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে নতুন সবজি না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নাই।
ফরিদা পারভীন নামে এক নারী ক্রেতা বলেন, “কাঁচা বাজারের দর-দাম নিয়ে নতুন করে বলার কিছু দেখি না। আমরা দাম বৃদ্ধি দেখতে চাই না।” উল্টো ক্ষোভের সুরে প্রশ্ন ছোড়েন তিনি, “এমন কী তরকারি আছে, যেটা ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যায়?”
কমে আবার বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম
গত শুক্রবার খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতে দেখা গেছে ২০০ টাকা কেজি পর্যন্ত। আর পাইকারিতে ১৮০ টাকা। এরপর রোববার পাইকারি দর ১৫০ টাকায় নেমে আসে রান্নায় ব্যবহৃত জরুরি এই পণ্যটির দাম।
বুধ ও বৃহস্পতিবারও পাইকারিতে কাঁচমরি কেনা গেছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। কিন্তু এখন দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি দরে। আর খুচরায় ২০০ টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি করতে দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারের কাঁচামরিচ বিক্রেতা মো. ঈমান আলী বলেন, ইন্ডিয়া থেকে মরিচ আমদানি শুক্রবার বন্ধ থাকে। আর বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়া থেকে আসা মরিচ বাজারে নাই। তাই দামটা বেশি। এখন দেশি মরিচ কম। বর্তমানে দেশি মরিচ বলতে কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা থেকে যা আসছে।
বাংলামোটরে ভূতের গলিতে খুচরায় সবজি বিক্রি করেন মো. আল আমিন। তিনি পূর্ব পরিচিত ঈমান আলীর কাছ থেকে পাইকারিতে ১৭০ টাকা দর হিসেবে ৬ কেজি মরিচ কিনলেন ১০২০ টাকায়।
তিনি বলেন, এই মরিচটা গত শুক্রবারের তুলনায় এই শুক্রবারে একটু কম। মাঝে কয়েক দিন ১৫০ টাকায়ও পাওয়া গেছে। তবে আবার বেড়েছে; শুক্রবারে ১৭০ টাকার বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজে কমল ৫ টাকা
সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে অন্তত ৫ থেকে ৬ টাকা। সপ্তাহখানেক আগে পাইকারিতে পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০৮ টাকা কেজি দরে, আর ফরিদপুরের পেঁয়াজ ১০২ টাকা। এখন এই পণ্যটি পাইকারিতে পাওয়া যাচ্ছে ৯৬ থেকে ১০৫ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি দোকান মেসার্স মাতৃভাণ্ডারের বিক্রেতা মো. ফরিদ বলেন, “ফরিদপুরের পেঁয়াজ বেচতেছি ৯৬ টাকা কেজি, আর পাবনার পেঁয়াজ ১০৫ টাকায়। গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কমছে কেজিতে পাঁচ-ছয় টাকার মত।”
এই বাজারে খুচরায় ফরিদপুরের পেঁয়াজের কেজি ১০৬ টাকা ও পাবনার পেঁয়াজ ১১০ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা ও ১১৫ টাকা কেজি দরে।
বিক্রেতা মো. এরশাদ বলেন, “পেঁয়াজে ৩-৪ টাকা কমছে। খুব বেশি কমে নাই। এখন পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো, দামটা একটু কমের দিকে।”
খুচরায় আলুর কেজি ৫০ টাকা
কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকান বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়ের বিক্রেতা মো. হালিম বলেন, এক সপ্তাহ আগে আলুর দাম ছিল ৪৯-৫০ টাকা, এই শুক্রবারে তা সামান্য কমে বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায়।
তিনি বলেন, মুন্সিগঞ্জ, রাজশাহী ও বগুড়া থেকে বর্তমানে ঢাকায় বেশি আলু আসছে। এর মধ্যে রাজশাহীর আলুর দাম তুলনামূলক বেশি।
খুচরা বিক্রেতা আব্দুল আজিজ বলেন, এক সপ্তাহে আলুর দাম কমছে ২ টাকার মত।
বাজারে ১০ টাকা বেড়েছে আদা ও রসুনের দাম, আদা বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা দরে আর রসুন ২৩০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে আসা মো. সজীব কিবরিয়া নামে এক ব্যক্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দাম আসলে আগের মতই আছে, কমে নাই। বরং কিছু কিছু পণ্যের দাম দেখলাম বেড়েছেও। দিন যত গড়ায় দাম তত বাড়ে, আমাদের কেনার সামর্থের ওপর তা চাপও সৃষ্টি করে।”
মাছের বাজার
বাজারে তেলাপিয়ার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা কম দেখা গেছে, শুক্রবার প্রতি কেজি ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কৈ বিক্রি হচ্ছে ২২০ ও পাঙাস ১৮০ টাকায়।
বাজারে ২০ টাকা দাম বেড়েছে রুই মাছের, শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৪২০ টাকা কেজি দরে। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের রুইয়ের দাম সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা।
টেংরা ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা এবং শিং ও মাগুর ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।