বাজারদরের প্রতিবেদনে সুপারশপের তথ্যও চান বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

“কালকে আমার এলাকায় নাগরপুর বাজারে বেগুনের দাম পেয়েছে কেজি ১০ টাকা করে। তাহলে চিন্তা করেন সেই বেগুন ঢাকায় এনে আমরা কত টাকায় খাচ্ছি।“

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2024, 11:20 AM
Updated : 14 March 2024, 11:20 AM

শুধু একটি কাঁচাবাজার বা প্রচলিত বাজারের চিত্র দিয়ে বাজার পরিস্থিতি মূল্যায়ন না করে প্রতিবেদনে সুপারশপ বা নির্দিষ্ট দামের দোকানগুলোর চিত্রও তুলে আনতে সংবাদমাধ্যম কর্মীদের প্রতি আহ্বান রেখেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বাজার পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন। সরবরাহ ব্যবস্থা, পরিবহন, হাত বদলের মত পুরনো বিষয়গুলোই পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ বলে তিনি মনে করছেন।

ব্রিফিংকালে টিটু বাজারদরের প্রতিবেদন করার আগে সুপারশপ বা ফিক্সডপ্রাইসের দোকানগুলো ঘুরে কাঁচাবাজারে যেতে সাংবাদিকদের পরামর্শ দেন। পরে এর কারণও ব্যাখ্যা করেন তিনি।

এ বক্তব্যের মাধ্যমে সুপারশপগুলোকে ‘প্রমোট করছেন কি না’ এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এখানে কনফিউশনের কিছু নেই। ওখানে ট্যাগ লাগানো আছে। আপনি ছবি তুলে আমাকে পাঠাবেন। তখন কেউ বেশি দাম নিলে ভোক্তা অধিকার ব্যবস্থা নেবে। কারণ তারা আমার কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রমজানে যেসব পণ্য চলে যেমন চিনি, তেল, ডাল-তারা ফিক্সড প্রাইসে বিক্রি করবে। সো আই এম নট কনফিউজড। সম্ভবত অন্যভাবে শুনছেন।

“ট্যাগ লাগানো দোকানে যদি কাঁচাবাজারের চেয়ে বেশি মূল্য থাকে, তাহলে আপনি কমপেয়ার করে যেটা কম দামে পান সেটা কিনে নেন। কোনো অসুবিধা নেই। বাট আমি বলছি তারা আমার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করতেছে। আর যদি ওর চেয়েও কমে বিক্রি কররে তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ। আমি তো চাই ওর চেয়ে কমে কাঁচাবাজারে হোক। বিকজ ওর এসি খরচা নাই, কোনো কিছু নাই।“

এ বিষয়ে তিনি নিজেও অবাক হয়েছেন মন্তব্য করে বলেন, “যেখানে এসিওয়ালা সুপারমার্কেটে সবাইভাবে যে এখানে মনে হয় মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তরা কেনাকাটা করে। কিন্তু আজকে সুপার মার্কেটে দ্রব্যমূল্য...। সুপার মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন কালকে আমাকে একটা চিঠি দিয়েছে যে তারা রোজার মধ্যে সংশ্লিষ্ট কোনো পণ্য কম মূল্যে বিক্রি করবে। এটা আমি মনে করি যে একটা এক্সাম্পল হতে পারে।”

বাজার নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়ে টিটু বলেন, পণ্যের দাম বলার ক্ষেত্রে মানুষের মুখের কথা শুনে সেটাকে প্রচার না করে সুপার মার্কেটে পণ্যের গায়ে যেটা ট্যাগে লাগানো আছে সেটা যদি একটু হাইলাইট করেন। তাহলে মানুষও জানতে পারবে যে, সুপার মার্কেটে তো এই দাম, তাহলে কাঁচাবাজার থেকে কেন একই দামে কিনবেন তিনি।

“যদি একটা সুপার মার্কেটে ২৯ বা ৩০ টাকায় যদি আলু থাকে, তাহলে আমি কেন বার্গেইনিং করে ৩৫ টাকায় কিনব? ভোজ্যতেলের দাম তারা আমাদেরকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কমে দেবে বলতেছে। অন্যান্য জিনিসও তারা চেষ্টা করছে। তাদের অন্যান্য ইনসেনটিভগুলো যদি আপনারা নেন।“

তার ভাষ্য, নির্দিষ্ট মূল্যের দোকানগুলোতে পণ্যের ট্যাগে দাম লাগানো থাকে। সেখান থেকে একটা চিত্র পাওয়া যায়। কাঁচাবাজারে অনেক দামাদামি হয়। বিক্রেতা যেই দামটা চায় বা হাঁকায় সেটাই প্রচার হচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে দামে কেনাবেচা হচ্ছেতা কিন্তু আর উল্লেখ হচ্ছে না।

“সেজন্য আমি বলছি আপানারা যখনই যেই বাজার মনিটরিংয়ে যাবেন, দয়া করে ফিক্সড প্রাইসের দোকানগুলো একবার ঘুরে আসবেন। সেখান থেকে ছবি তুলে আপনি কাঁচাবাজারে যাবেন এবং প্রশ্ন করবেন যে, আপনি ডালের দাম ১২৫ টাকা চাচ্ছেন আর আমি তো ওখানে দেখে আসলাম ১১০ টাকা বা ১০৫ টাকা। কিন্তু কাঁচাবাজারে বা খুচরা বাজারে কোনো ট্যাগ কিন্তু লাগানো থাকে না। যার ফলে বার্গেনিং করা হয়। মুখের দামটাই প্রচার হয়। আপনারা আপনাদের দায়িত্বটুকু আপনাদের মতো করে পালন করবেন। আমার শুধু একটাই বিনীত অনুরোধ যে একাধিক বাজারের তুলনাটা করবেন।“

সরকার গঠনের দুই মাস পরও খুচরা বাজার নিয়ন্ত্রণে করতে পারছেন না। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এটা খুব ভ্যালিড একটা প্রশ্ন। পারতেছি না- কারণ হচ্ছে, সাপ্লাই চেইন নিয়ে কথা বলি- এটাও একটা ট্রলের ব্যাপার হয়ে গেছে। কারণ হইলো যেখানে যেখানে সাপোর্ট দরকার। কৃষকের পর্যায় থেকে ট্রাকে উঠে, হোলসেল হয়ে রিটেইল পর্যন্ত পৌঁছাতে এই জায়গাটা আমরা সম্পূর্ণ রূপে সিম্পলিফাই করতে পারছি না। আমি আপনাদের কায়েকজনের কাছে হেল্পও চাইছি। আপনারা সাপ্লাই চেইনটা ফলো করেন। তাহলে বুঝতে পারবেন যে আমার ফেইলরের বা শতভাগ স্বার্থক না হওয়ার কারণটা কী?

“অনেক কথাই আমি বললে সেটা ইয়ে হবে। সেজন্য ব্যাখ্যা করতে চাই না। আপনারা উৎসে যান। লেবু কত টাকায় ট্রাকে উঠতেছে। আর হাত ঘুরে কাঁচাবাজারে কত টাকায় এসে ল্যান্ড করতেছে। এইটা একটা নিউজ করেন। তাহলে আমার সীমাবদ্ধতা আপনারা বুঝে যাবেন।”

এই সমস্যা নিয়ে তো বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীরও কাজ করার কথা। তিনি কী করছেন? জানতে চাইলে টিটু বলেন, “আমি কাজ করতেছি। কিন্তু কৃষিপণ্য আরেকটা মন্ত্রণালয়ের। এটা আমার মন্ত্রণালয়ের না। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এটার দাম ঠিক করে দেওয়ার কথা। ঢাকায় এনে পৌঁছে দেওয়ার কথা। পরিবহন ব্যবস্থাটা আমার মন্ত্রণালয়ের আন্ডারে না। আমি দোষ চাপানোর জন্য বলছি না। আপানারা জানতে চাইলেন বিধায় বললাম। পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে তাদের সঙ্গে আমরা কাজ করছি। এটা অনেক দিন শক্তিশালী ছিল না। আমরা এটার শক্তিশালী করার ব্যবস্থা করছি।”

‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি, ভোক্তাদের স্বার্থে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করি’- এ শিরোনামকে সামনে রেখে শুক্রবার বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস পালিত হবে।

এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যেসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে সেটা ভোক্তা অধিকারের মাধ্যমেই করে থাকে। ভোক্তা অধিকার কার্যক্রম এখন উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। দাম নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার বিভিন্ন রকম কাজ করছে।

ভোক্তা অধিকারের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আমি কথা বলেছি। তারাও যেন উপজেলা পর্যায় থেকে যেসব পণ্য আসে সেগুলোর ওপর নজরদারি রাখে।

“ঢাকার প্রতিটি হোলসেল মার্কেট এখন আমাদের নজরদারির মধ্যে আছে। পাইকারি বিক্রেতাদেরকেও একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে। তারা কত দামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে সেই ভাউচারগুলো যেন দেয়। আমরা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা ভাউচার দেখাতে পারে না। কারণ, তারা রাস্তার পাইকারি বাজার থেকে কিনছে। সেজন্য আমি সেদিনও বলেছি যে, এদেরকেও একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে, একটা অনুশাসনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। দেখলাম যে এইটা নিয়েও অনেক ট্রলিং শুরু হইছে।”

তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকার থেকে অনেক রকম ভোক্তাবান্ধব কাজের মধ্যে ‘কনজ্যুমার কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ অন্যতম। ১৬১২১ নম্বরে অভিযোগ করলে সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেওয়া হচ্ছে। ভোক্তা অধিদপ্তর মনিটরিং সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে।

সরবরাহ ব্যবস্থার সমস্যার কথা উঠে আসে মন্ত্রীর বক্তব্যেও। তিনি বলেন, “আমি বারবার সাপ্লাই চেইনের কথা বলি। এটা নিয়েও দেখি ট্রলিং হচ্ছে। সাপ্লাই চেইন আগেও ছিল কিন্তু আমরা এটাকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। একটা সফটওয়্যার আগামীকাল চালু করব।

“কালকে আমার এলাকায় নাগরপুর বাজারে বেগুনের দাম পেয়েছে কেজি ১০ টাকা করে। তাহলে চিন্তা করেন সেই বেগুন ঢাকায় এনে আমরা কত টাকায় খাচ্ছি। সাপ্লাই চেইন মনিটরিংয়ের মাধ্যমে আমরা ট্রান্সপোর্টেশনটাও জোরদার করবো। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর আছে। সেটাকেও আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শক্তিশালী করব।“