এপ্রিলে রপ্তানি আয়ে ‘বড় ধাক্কা’

পাঁচ মাস পর প্রথমবারের মত বাংলাদেশের রপ্তানি আয় নেমে এসেছে ৪০০ কোটি ডলারের নিচে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2023, 07:24 AM
Updated : 3 May 2023, 07:24 AM

সদ্য সমাপ্ত এপ্রিল মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে এসেছে দুঃসংবাদ; এ খাতের আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এক ধাক্কায় কমে গেছে ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।

বুধবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এপ্রিল মাসের রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এ মাসে ৩৯৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যেখানে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের এপ্রিলে ৪৭৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

চলতি অর্থবছরের এপ্রিলে ৫০৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। সে হিসেবে আয় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম।

বিশ্ব অর্থনীতির টানাপোড়েনের মধ্যেও চলতি অর্থবছরের অধিকাংশ সময় রপ্তানি প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী ধারা বজায় ছিল। গত মার্চ মাসে এ খাতের আয় নেতিবাচক ধারায় ফিরে যায়; ওই মাসে ৪৬৪ কোটি ৩৯ লাখ ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়, যা ছিল আগের বছরের মার্চের চেয়ে ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম।

অবশ্য এপ্রিলে শেষে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের মোট রপ্তানি এখনও ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে।

এই সময়ে মোট ৪ হাজার ৫৬৭ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যদিও মোট ৪ হাজার ৭৩১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ছিল এই সময়ে। সেই হিসেবে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ পিছিয়ে আছে।

কোভিড মহামারী আঘাত হানার পর ২০২০ সালের এপ্রিলে রপ্তানি ৮৩ শতাংশ কমে গিয়েছিল। পরের বছর ৩১৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে এ খাত দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। একক মাসে প্রবৃদ্ধি দেখা যায় ৫০২ শতাংশ।

Also Read: চার মাস পর রপ্তানি আয়ে হোঁচট, কমল ২.৪৯%

Also Read: ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ৭.৮১ শতাংশ

Also Read: জানুয়ারিতেও রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে

Also Read: এক মাসের রেকর্ড রপ্তানি আয় দিয়েছে ডিসেম্বর

Also Read: রপ্তানি আয়ে ৫২ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক

২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মত পণ্য রপ্তানি থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয় আসে; মোট রপ্তানি হয় পাঁচ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ডলারের পণ্য, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। সেই রেকর্ডে ভর করে চলতি অর্থবছরে ৫৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।

গত নভেম্বর থেকে টানা চার মাস ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার আয় হয় রপ্তানি থেকে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এরপর জানুয়ারিতে ৫১৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ৪৬৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। মোট অংক ডিসেম্বরের তুলনায় কমলেও ওইদুই মাসে প্রবৃদ্ধি বজায় ছিল। কিন্তু মার্চ মাসে তাতে ছেদ পড়ে। এপ্রিলের ধাক্কা আরও বড় হল।

খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে প্রবৃদ্ধির খরা চলছে। পোশাক খাতে এতদিন উচ্চ প্রবৃদ্ধি থাকলেও এখন তা ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। সব মিলিয়ে এই মাসে ৩৩২ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

কেবল এপ্রিল মাসে ১৪৯ কোটি ডলারের ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১৭.৪৮ শতাংশ কম। নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১৮৩ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ কম।

রপ্তানিতে এক বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করা হোম টেক্সটাইল শিল্পের রপ্তানি আয় কমেছে ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ১০ মাসে এ খাত থেকে রপ্তানি হয়েছে ৯৪ কোটি ডলারের পণ্য, যদিও লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১৬ কোটি ডলারের।

বার্ষিক এক বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি হয় এমন পণ্যের মধ্যে ১০ মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৭৭ কোটি ডলারের। ফলে রপ্তানি পিছিয়ে গেছে ২০ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে ১০ মাসে এক বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হলেও, গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় তা ০ দশমিক ৫২ শতাংশ কম।

১০ মাসে মাত্র ৭৪ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানির মাধ্যমে এই খাতটিও আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ শতাংশ পিছিয়ে গেছে।

পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠনের নেতা, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এপ্রিল মাসে এমনটিই হওয়ার কথা ছিল। কারণ ঈদ ও অন্যান্য কারণে এই মাসে কর্মদিবস ছিল মাত্র ২০টি। এছাড়া গত কয়েক মাস ধরে রপ্তানির গতি কমে আসছিল। আমাদের ধারণা, আগামী কয়েক মাস ধরে এই নেতিবাচক ধারা বজায় থাকবে।”