রপ্তানি আয়ে ৫২ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক

বছরজুড়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় থাকায় দেশের পণ্য রপ্তানি খাত প্রথমবারের মত ৫২ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে; রপ্তানি আয়ে মোট প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2022, 12:39 PM
Updated : 3 July 2022, 05:15 PM

রোববার সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের পণ্য রপ্তানির প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এর মধ্যে দিয়ে সেবা ছাড়া শুধু পণ্য রপ্তানি থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের রেকর্ড হল।

এতে দেখা যায়, গত অর্থবছরের ১২ মাসে বাংলাদেশে থেকে পাঁচ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ এগিয়ে এবং আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি।

এর আগে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তিন হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির ওপর ভিত্তি করে পরের অর্থবছরের জন্য চার হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ আয়; বছরজুড়ে প্রবৃদ্ধিও অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

রপ্তানির সার্বিক পরিস্থিতি দেখে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পরিকল্পিতভাবে রপ্তানি বাড়ানোর যে প্রচেষ্টা ছিল এটা তারই সুফল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রপ্তানিখাতের ওপর অব্যাহত নজর রেখেছিলেন। কোভিড পরবর্তী সময়ে সার্বিক অবস্থাটা ভালো ছিল, সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা ছিল।

“আমাদের রপ্তানিটা বেড়েছে, নতুন নতুন অনেক আইটেম বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করছে। এবছর আশা করছি আরও ইমগ্রুভ করবে। আমরা সেবা ও পণ্য মিলিয়ে ৫১ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিলাম। সেটা এখন ৬০ বিলিয়নের ঘরে এসে থেমেছে।”

“এর মধ্যে পণ্য রপ্তানি থেকে এসেছে ৫২ বিলিয়ন আর সেবা রপ্তানি থেকে এসেছে ৮ বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি হয়েছে যেটা আসলেই একটা ভালো খবর। এবছর আমরা ৬৫ বিলিয়ন ডলারের একটা লক্ষ্য ঠিক করতে চাচ্ছি,” যোগ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

জুনে সর্বোচ্চ রপ্তানি

অর্থবছরের শেষ মাস জুনে এককমাস হিসেবে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত এ মাসে ৪৯০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৫ শতাংশ এবং আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি।

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জুনে ৩৫৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল; আর গত জুনের জন্য লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৬৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

এর আগে একক মাস হিসেবে সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে সর্বোচ্চ ৪৯০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার আয় এসেচিল। অর্থাৎ গত জুনে গত ডিসেম্বরের চেয়েও ৪ লাখ ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

রপ্তানির খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বরাবরের মতই তৈরি পোশাক খাত থেকে সবচেয়ে বেশি ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় এসেছে, যা মোট রপ্তানির ৮১ দশমিক ৮১ শতাংশ। পোশাক খাতে গত অর্থবছরের আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

এই প্রবদ্ধির ওপর ভর করে চলতি অর্থবছরে ৫০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন রপ্তানিকারকরা।

পোশাক খাত ছাড়াও বেশ কয়েকটি খাত এবার রপ্তানিতে এক বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছে।

হোম টেক্সটাইল খাত থেকে এবার রপ্তানি হয়েছে ১৬২ কোটি ১৯ লাখ ডলার, চামড়া ও চামড়া জাতীয় পণ্য রপ্তানিতে ৩২ দশমিক ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার পর সামগ্রিক রপ্তানি ১২৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার হয়েছে। কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ফলে মোট রপ্তানি ১১৬ কোটি ২২ লাখ ডলার হয়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১১২ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের, যদিও এ খাতে ৩ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বিকেএমইএর নির্বাহী সহ সভাপতি ও এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পোশাক খাতে টাকার অংকে প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি পোশাক রপ্তানির সংখ্যাগত প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে খাত অতটা লাভবান হয়নি।

“কারণ পোশাক শিল্পের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি বিবেচনায় পোশাকের রপ্তানিতে আরও প্রবৃদ্ধি হওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বিশ্ববাজার থেকে বাংলাদেশ সেই মূল্য আদায় করতে পারেনি।”

চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে পোশাক খাত থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় আসবে বলে আশা করেন তিনি। 

আরও পড়ুন-