এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আটকে রাখার ফলে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল চুক্তি লঙ্ঘন হচ্ছে বলে সতর্ক করেছ সংস্থাটি।
Published : 26 Apr 2024, 11:05 PM
বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কোম্পানির সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশে আটকে থাকার কথা জানিয়ে অবিলম্বে তা পরিশোধ করার তাগিদ দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ)।
এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আটকে রাখার ফলে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল চুক্তি লঙ্ঘন হচ্ছে বলেও সতর্ক করেছ সংস্থাটি।
আইএটিএ-এর এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সহ-সভাপতি ফিলিপ গোহ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, “ইজারা চুক্তি, খুচরা যন্ত্রাংশ ক্রয়, ওভারফ্লাইট ফি এবং জ্বালানির মূল্য পরিশোধের জন্য এয়ারলাইন্সগুলোর আয়ের এই অর্থ সময়মত নিজের দেশে নিতে পারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাওনা পরিশোধে বিলম্ব হলে তাতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে লিখিত আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন হয় এবং এয়ারলাইনগুলোর জন্য বিনিময় হারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।”
আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা আইএটিএ বিশ্বের ৩০০টি এয়ারলাইন্স নিয়ে গঠিত একটি বাণিজ্যিক সংস্থা। এই সংস্থার অন্তর্ভুক্ত ৩০০টি এয়ারলাইন্স বিশ্বের প্রায় ৮৪ শতাংশ আকাশপথের যাত্রী পরিবহন করে। সদস্য দেশ এবং এয়ারলাইন্সগুলোর বিমান চলাচল সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়তা এবং নীতিমালা ও মান নিয়ন্ত্রণে কাজ করে আইএটিএ।
বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের কাছে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর পাওনা ৭২০ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
এর মধ্যে বাংলাদেশের কাছে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর পাওনা ৩২৩ মিলিয়ন ডলার; বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। আর, পাকিস্তানের কাছে পাওনা ৩৯৯ মিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা।
বিবৃতিতে আইএটিএ বলেছে, এই বিপুল পরিমাণ দেনা পরিশোধ না করায় পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে ওঠেছে। আইএটিএ আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং চুক্তির বাধ্যবাধকতাগুলো মেনে চলার জন্য দুই দেশের সরকারকে অনুরোধ করেছে, যাতে এয়ারলাইনগুলো তাদের সেবা চালু রাখতে পারে।
ফিলিপ গোহ বলেন, “পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে অবিলম্বে আটকে রাখা অর্থ পরিশোধ করতে হবে, যাতে এয়ারলাইন্সগুলো দক্ষতার সাথে সেবা চালিয়ে যেতে পারে এবং পাওনাদার এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় থাকে।”
বিবৃতিতে আইএটিএ বলেছে, বাংলাদেশ মূলত ডলার সংকটের কারণে অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না। সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে এভিয়েশন খাতে আরও নজর দিতে বলা হচ্ছে। আইএটিএ-এর তরফ থেকেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানকে এয়ারলাইন্সের অর্থ নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমানে পাকিস্তানে বিদেশি দায় পরিশোধের জন্য নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং কর অব্যাহতির নথি জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা অপ্রয়োজনীয় বিলম্বের কারণ।
ফিলিপ গোহ আরও বলেন, “আমরা স্বীকার করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি মুদ্রা ব্যবহারে কৌশলী হওয়া দেশগুলোর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটি সরকারের জন্য একটা কঠিন চ্যালেঞ্জও বটে। তবে সময়মত এবং কার্যকর পদ্ধতিতে দেনা পরিশোধে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিমান সংযোগ হ্রাস ঠেকানো, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, বিদেশি বিনিয়োগ এবং রপ্তানির সম্ভাবনাকে ঠিক রাখার জন্যই এটি জরুরি। উভয় বাজারে এত বড় অঙ্কের অর্থ আটকে থাকায় জরুরি সমাধান প্রয়োজন।”
কীভাবে এই বিপুল দায় তৈরি হল এবং টাকা বকেয়া থাকার কী প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়তে পারে জানতে চাইলে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এবং বিমান পরিচালনা বোর্ডের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিদেশি যেসব এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করে, তাদের টিকেট বিক্রির মুনাফা বিভিন্ন ট্র্যাভেল এজেন্সি থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন স্বাপেক্ষে বিদেশে পাঠানো হয়। এটা প্রতি মাসে পাঠানোর কথা। কিন্তু গেল কয়েকবছর ধরে নিয়মিত বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন না পাওয়ায় এজেন্সিগুলো সঠিক সময়ে অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না। যার ফলে বিপুল এই দেনা।”
তিনি বলেন, এর প্রভাবে এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশে তাদের টিকেটের দাম বাড়িয়েছে। অনেকের অভিযোগ, অন্যান্য দেশের তুলনায় দেশে টিকিটের দাম বেশি। মূলত ক্ষতি পোষাণোর জন্য এয়ারলাইন্সগুলো টিকেটের দাম বাড়াচ্ছে, যাতে ডলারের মূল্য ওঠানামার সাথে তাদের পাওনা অর্থের সামঞ্জস্য থাকে।