মিলাররা দাম বাড়ানোর জন্য চাল মজুদ করেছিলেন। এখন আমদানির খবরে তারা চাল ছাড়তে শুরু করায় দাম কিছুটা কমেছে বলে মনে করছেন ক্রেতারা।
Published : 16 Jan 2025, 11:31 PM
কয়েক সপ্তাহ চড়া থাকার পর ‘আমদানির খবরে’ চালের দাম মানভেদে দুয়েক টাকা কমলেও তা আগের অবস্থায় ফেরেনি; আর পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় শীতকালীন সবজির দাম কমেছে ‘মোটামুটি’।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর নিকেতন ও মহাখালী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরায় মানভেদে নাজিরশাইল চালের কেজিতে দাম এখন ৭৮ থেকে ৮৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ৮০ থেকে ৯০ টাকা ছিল।
গত সপ্তাহে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হওয়া ‘স্বর্ণা’ মিলছে ৫৩ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে। কেজিতে দু-এক টাকা কমে ‘শম্পা’ বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৪ টাকা; ৭৮ থেকে ৮০ টাকায় মিলছে মিনিকেট।
কয়েক সপ্তাহ ধরে চড়ে থাকা চালের বাজারে স্থিতি ফেরাতে গত ৭ জানুয়ারি ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
এছাড়া গত ২৫ ডিসেম্বর ভারত থেকে আসে ২৪ হাজার ৬৯০ টন সিদ্ধ চাল। ১২ জানুয়ারি আসে ২৬ হাজার ৯৩৫ মেট্রিক টন চালের আরেকটি চালান।
নিকেতন কাঁচাবাজারের বিক্রেতা শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চালের দাম কেজিতে এক থেকে দুই টাকা কমেছে; আরও কমে আসবে। আমদানি করা চাল কিছু-কিছু বাজারে ঢুকেছে। এতে করে দাম কিছুটা কমেছে।”
মহাখালী কাঁচাবাজারের বিক্রেতা আব্দুল জব্বার বলেন, “আমদানির খবরে চালের দাম কিছুটা কমেছে। তবে আগের জায়গায় আসে নাই।
“মিলাররা দাম বাড়ানোর জন্য মজুদ করে রেখেছিল। এখন আমদানির খবরে তারা চাল ছাড়তে শুরু করেছে। দাম আরও কমতে পারে।”
এই বাজারে আসা ক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চালের দাম তো বাড়ার কথাই ছিল না। এখন ৫ থেকে ১০ টাকা কেজিতে বেড়ে এক-দুই টাকা কমলে তাতে তো খুব একটা লাভ হয় না।”
বাজারে শীতকালীন সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় স্বস্তিতে রয়েছেন ক্রেতারা।
মহাখালী এবং নিকেতন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতিকেজি শিম ২০ থেকে ৩৫ টাকা, আকৃতিভেদে প্রতিটি প্রতিটি ১৫ থেকে ২০ টাকা, বাঁধাকপি ২০ থেকে ২৫ টাকা ও লাউ মিলছে ৩০ থেকে ৬০ টাকায়।
দেশি পাকা টমেটো পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এর বাইরে গাজর প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা ১৫ থেকে ২০ টাকা, ক্ষীরা ৪০ টাকা ও শসা পাওয়া যাচ্ছে ৫০ টাকার মধ্যেই।
বেগুনের কেজি গত সপ্তাহের মত ৫০ থেকে ৬০ টাকায় আছে। এছাড়া করলা ৬০ থেকে ৭০, বরবটি ৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৩০ থেকে ৪০, ধুন্দুল ৫০ থেকে ৬০, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ ও ঝিঙা ৪০ থেকে ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
কাঁচামরিচের কেজি মিলছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। লেবুর হালি ২০ থেকে ৩০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, চাল কুমড়া প্রতিটি ৫০-৬০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে।
লাল শাক ১০ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, মূলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা এবং ডাটা শাক ২০ থেকে ৩০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
নিকেতন কাঁচাবাজারে আসা গৃহিণী সালমা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবজির দামটা কম আছে মোটামুটি। শীতের মাহাত্ম্য এটাই। শীতকাল দীর্ঘজীবী হোক।
“সত্যি বলতে সব কিছুর বাড়তি দামের মধ্যে সবজির দামটা আমাদের মত মধ্যবিত্তের জন্য একটু স্বস্তির।”
সরবরাহ বাড়ায় বাজারে আলুর দাম কমেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন আলু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।
পুরনো আলু ৫০ টাকা, বগুড়ার লাল আলু ৬০ টাকা ও শিলবিলাতি আলু ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা, মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পাতা পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আদা-রশুনের দাম আছে গত সপ্তাহের মতই। বৃহস্পতিবার আদা মানভেদে ১৪০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন ২২০ থেকে ২৪০, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, ভারতীয় মশুর ডাল ১১০ টাকা ও মুগ ডাল ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।