“কয়েক মাস ধরেই তো গরুর মাংস ৭৫০ টাকার মধ্যে ছিল। আজ হঠাৎ ৮০০ টাকা চাচ্ছে। একদিন মানুষ একটু কিনতে গেলেই দোকানদাররা দাম বাড়ায়া দেয়।”
Published : 14 Feb 2025, 06:53 PM
সাপ্তাহিক ছুটির দিন; সঙ্গে শবে বরাত- এই দুই উপলক্ষের ‘প্রভাবে’ রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোয় মাংস কিনতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হলো ভোক্তাদের।
মহাখালী ও নিকেতন বাজারের বিক্রেতা ও ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৭৫০ টাকার মধ্যে। কিন্তু শুক্রবার তা বিক্রি হয় ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়।
গেল সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকার মধ্যেই ছিল। শুক্রবার তা বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২১০ টাকায়।
দীর্ঘ দিন খাসির মাংসের দাম না বাড়লেও ‘শবে বরাতের বাজারে’ সেটা আর স্থির থাকেনি। গত সপ্তাহে ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া খাসির মাংস শুক্রবার কিনতে লাগে ১১৫০ থেকে ১২০০ টাকা।
নিকেতন কাঁচাবাজারে গরুর মাংস কিনতে আসা রিকশাচালক সজীব বলেন, “আমরা তো ডেইলি মাংস কিনতে পারি না। দুই-একদিন হঠাৎ কিনতে এলে দেখি দাম বেড়ে গেছে। শবে বরাতের দিন ভাবলাম একটু মাংস কিনি, দেখি দাম বেশি।
“কয়েক মাস ধরেই তো গরুর মাংস ৭৫০ টাকার মধ্যে ছিল। আজ হঠাৎ ৮০০ টাকা করে দাম চাচ্ছে। একদিন মানুষ একটু কিনতে গেলেই দোকানদাররা দাম বাড়ায়া দেয়।”
বাড়তি দামের কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা নুরুজ্জমান বলেন, “ঈদের আগের দিন বা শবে বরাতে একটু সামান্য দাম বাড়ে। চাহিদা বাড়লে তো দাম বাড়বেই। এটা তো নতুন কিছু না।”
মুরগির দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে নিকেতন কাঁচাবাজারের ‘রাজিব মুক্তা পোল্ট্রি দোকান’-এর বিক্রয়কর্মী সোহেল বলেন, “মুরগির দাম তো বাড়ে-কমে কয়েকদিন পরপর। সেভাবেই বেড়েছে।”
শবে বরাত উপলক্ষে দাম বেড়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেজন্য দাম বাড়ে নাই; আমাদের কেনাই বেশি।”
মহাখালী কাঁচাবাজারের মুরগি বিক্রেতা নূর হোসেন বলেন, “মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ করেই চলত। কাল মাল এনেছি বাড়তি দামে।”
তেলের সংকট কাটেনি, কমেনি চালের দাম
গেল দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে নতুন করে বোতলজাত সয়াবিন তেলের যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা কাটেনি।
বিক্রেতারা বলছেন, তারা তেলের ক্রয়াদেশ দিলেও পরিবেশক বা ডিলাররা ঠিকঠাক দিতে পারছে না। ফলে দোকানে তেল পর্যাপ্ত পাওয়া যাচ্ছে না।
নিকেতন কাঁচাবাজারের রিপা জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা ফারুক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাস খানেক ধরে আমি শুধু খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করি। মাঝেমধ্যে এক-দুই কার্টন পেলেও ফুরিয়ে যায়। দোকানে ডিসপ্লে করার মতো থাকে না।”
বাজারে তেল কিনতে আসা গৃহিণী আফরোজা বেগম বলেন, “সামনে রোজা- এজন্যই শুরু হয়েছে এই অবস্থা।”
এদিকে কয়েক মাস ধরে চড়া থাকা চালের বাজারে নতুন করে দাম বাড়েনি। শুক্রবার বাজারে প্রতিকেজি চিকন (মিনিকেট) চাল মানভেদে ৮২ থেকে ৮৮ টাকায় বিক্রি হয়।
আটাশ (মাঝারি সরু) ৬৫টাকা, পাইজাম ৭০ টাকা, আর মোটা চাল বিক্রি হয় ৫২ থেকে ৫৫ টাকায়।
চালের দাম নিয়ে জানতে চাইলে বিক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, “চালের দাম এখনও বাড়তি; কমেনি। সরকার তদারকি বাড়ালে দাম আগের জায়গায় যেত।”
সবজির বাজারে স্বস্তি রয়েছে আগের মতই। রোজার আগে দু-একটি বাদে অধিকাংশ সবজির দাম ‘নাগালেই’ আছে।
বাজারে এক কেজি আলু মিলছে ২০ টাকাতেও। গোল বেগুন পাওয়া যাচ্ছে ৬০ টাকায় আর লম্বা বেগুন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের কেজি ১০০ টাকার মধ্যেই। টমেটোয় লাগছে ৪০ টাকা।
শসার দাম বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে দেশি শসা ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাইব্রিড মিলছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়; ক্ষিরার কেজি ৫০।
গাজরের কেজি ৪০ টাকা; শিম মিলছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। কাঁচা কলার হালি ৩০ টাকা; আকৃতিভেদে লাউ মিলছে ৪০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে; চাল কুমড়ায় লাগছে ৫০ টাকার মত।
পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা আর মুলার কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা। চিচিঙ্গার কেজি ৮০ টাকা।
বরবটির কেজি ১০০ টাকা; ঢেঁড়শে লাগেছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। ধনেপাতার কেজি ১৮০ টাকা।
এছাড়া মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা, লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ পাতা ২০ থেকে ২৫ টাকা, ফুলকপি এবং পাতাকপি আকৃতিভেদে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় মিলছে।
স্বস্তি রয়েছে পেঁয়াজের বাজারেও। বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা, দেশি নতুন রসুন ১৫০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ২৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।