ঈদ বাজারে ই-কমার্সের ভাগ কতটা?

স্মার্টফোন ব্যবহারে পারদর্শী ও বয়সে তরুণদের মধ্যে অনলাইনে কেনাকাটার আগ্রহ তুলনামূলক বেশি। ঈদ বাজারেও অনলাইনে বিক্রি বাড়ছে বলে বিক্রেতাদের ভাষ্য।

রিফাত পারভীনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2024, 07:36 PM
Updated : 19 March 2024, 07:36 PM

দোকান ঘুরে জামাকাপড় কেনার চেয়ে ই-কমার্স সাইটগুলোতে ঢু মেরে কেনাকাটা করতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন নাফিসা নিধি। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা, তাই এবারের ঈদের কেনাকাটা অনলাইনেই সেরে ফেলতে চাইছেন তিনি।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের এই শিক্ষার্থী বলছেন, “ঘরে বসে অর্ডার করলে তিন দিনের মধ্যে পোশাক আসে। সেবার মানও আগের চেয়ে ভালো হয়েছে, দেখেশুনে নিলে ঠকার সম্ভাবনাও কম।”

ঈদ সামনে রেখে নিজের বা পরিবারের সদস্যদের জন্য বাজার ঘুরে দেখেশুনে পোশাক বা দরকারি জিনিসপত্র কেনা অনেকের জন্য ‘আনন্দের’ অভিজ্ঞতা। আবার রাজধানীর যানজট ঠেলে, নানা ঝক্কি ঝামেলা পেরিয়ে কেনাকাটার কথা ভাবলে অনেকের মনে ভর করে আতঙ্ক।

এই দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য স্বস্তির সুযোগ করে দিচ্ছে ই-কমার্স ওয়েবসাইট এবং ফেইসবুক নির্ভর বিক্রেতারা।

হাতে থাকা মোবাইল দিয়েই যে কোনো পোশাক ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইট বা ফেইসবুক পেইজ থেকে পছন্দের পণ্যের অর্ডার সেরে ফেলতে পারছেন তারা। সেই পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে বাসায়। সে কারণে ঈদ বাজারের ভিড়ে ঘাম ঝরিয়ে কেনাকাটার চেয়ে অনলাইন নির্ভরতা ক্রমশ বাড়ছে বলে বিক্রেতাদের ভাষ্য।

কেনাকাটায় এই অনলাইন নির্ভরতা বাড়ে মূলত ২০২০ সালে দেশে কোভিড মহামারীর সময় থেকে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি আর লকডাউনে মানুষের চলাচল যখন সীমিত, সেসময় মানুষ অনলাইনে কেনাকাটায় ঝুঁকতে থাকে। ই-কমার্সের ব্যবসা সেসময় বেড়ে গিয়েছিল কয়েক গুণ।

এরপর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে অর্থনৈতিক মন্দায় মানুষের পকেটে টান পড়লে গতবছর অনলাইনে কেনাকাটায় ভাটা পড়ার কথা বলছিলেন ফ্যাশন উদ্যোক্তা ও বিক্রেতারা। তবে এবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও রোজার ঈদ ঘিরে অনলাইনে বিক্রি বাড়ার সম্ভাবনা দেখছে ফ্যাশন হাউজগুলো।

অনলাইনে পণ্য বিক্রি করা ব্র্যান্ড বা কোম্পানিগুলোর সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর শোভন জানান, ই-ক্যাবের সদস্য আড়াই হাজার, কিন্তু দেশে ই-কমার্স সাইট আছে অন্তত ৩ হাজার।

ঈদের সময়ে অনলাইনেও যে কেনাকাটা অনেক বেড়ে যায়, তা জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এবার পণ্য ডেলিভারি প্রায় ৯ লাখে দাঁড়াতে পারে। সাধারণত সারা বছর যে পরিমাণ ডেলিভারি হয়, ঈদের আগে তা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।”

জাহাঙ্গীর শোভনের অনুমান বলছে, ঈদের বাজারে মোট যে বিক্রি হয়, এবার তার ২৫ শতাংশ হতে পারে ই-কমার্সের মাধ্যমে এবং এফ-কমার্সে (ফেইসবুক ভিত্তিক) হতে পারে ১৮ শতাংশ।

অনলাইনে ঈদ বাজার

দেশের পরিচিত সব পোশাক ব্র্যান্ডেরই ওয়েবসাইট আছে। সারাবছর অনলাইনে পণ্য বিক্রি করলেও বিশেষ উৎসব-অনুষ্ঠান ঘিরে থাকে তাদের বিশেষ প্রস্তুতি। এবারের রোজার ঈদ ঘিরেও সেই প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে ব্র্যান্ডগুলো।

সারা বছর মোট বিক্রির ৫ শতাংশ অনলাইনে হলেও ঈদে তা দ্বিগুণ হয়ে যায় পোশাক ব্র্যান্ড লা রিভের।

কোম্পানির প্রধান নির্বাহী মন্নুজান নার্গিস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঢাকায় তাদের শোরুম আছে ২০টি। তাদের হিসাব অনুযায়ী অনলাইনে বিক্রির পরিমাণ লা রিভের একটি শোরুমের মোট বিক্রির সমান। অন্যবারের চেয়ে বিক্রি এবার বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী।

মন্নুজান জানান, ঈদের সময়ে ঢাকা ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগীয় শহর থেকে তাদের অর্ডার আসে বেশি। অনলাইনে মোট বিক্রির অর্ধেকই ঢাকার বাইরে থেকে আসে।

প্রবাসীরাও অনলাইনে অর্ডার করেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, প্যারিস, ফ্রান্স, জার্মান থেকে বেশি অর্ডার আসে। দেশের বাইরে থেকে ১৫০ ডলারের বেশি অর্ডার করলে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি করেছে লা রিভের।

দেশের পরিচিত ফ্যাশন ব্র্যান্ড আড়ং শোরুম, ই-কমার্স ও ফেইসবুক পেইজে পণ্য কেনাবেচা করে। ঈদ ঘিরে তাদের ওয়েবসাইটও নতুন পোশাকে সাজানো হয়েছে। সেখানে শাড়ি, কুর্তা, সালোয়ার-কামিজ, ছেলেদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, গয়না, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।

আড়ং থেকে আগেও অনলাইনে কেনাকাটা করছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আসিফ আহমেদ। সময়ের টানাটানি থাকায় এবারের ঈদে অনলাইনেই কেনাকাটা সারার ইচ্ছা তার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আসিফ বলেন, “অফিস শেষে বাচ্চা নিয়ে শোরুম ঘোরার সময় পাচ্ছি না, তাই আড়ংয়ের অনলাইন পেইজ থেকেই এবার ঈদের কেনাকাটা সেরে নেব। এতে ভিড়ও এড়ানো যাবে।”

ফ্যাশন ব্র্যান্ড সারা লাইফস্টাইলের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজ সাজানো হয়েছে ঈদের নতুন পোশাকে। ওয়েবসাইটে ‘ঈদুল ফিতর-২৪’ নামে আলাদা ক্যাটাগরিও রাখা হয়েছে।

তারা মেয়েদের সিঙ্গেল জামা, থ্রি-পিস, শাড়ি, কুর্তি, টপস সংগ্রহে রেখেছে। ছেলেদের জন্য রয়েছে পাঞ্জাবি, ক্যাজুয়াল শার্ট, ফরমাল শার্ট, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, চিনো প্যান্ট, ডেনিম প্যান্ট ও পায়জামা।

কে ক্র্যাফটের উদ্যোক্তা খালিদ মাহমুদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতি বছরই অনলাইনের বাজার বড় হচ্ছে, ক্রেতারাও সুবিধা পাচ্ছে বেশি। ঈদের সময় কে ক্র্যাফটের একটি বড় শোরুমের বিক্রির সমান অর্ডার আসে অনলাইনে।”

কেবল জামাকাপড় নয়, জুতা, গয়না ও অন্যান্য ফ্যাশন পণ্যও বিক্রি করে কে ক্র্যাফট। দেশের বাইরে থেকেও পণ্য কেনাকাটার সুযোগ রয়েছে এ ফ্যাশন হাউজ থেকে।

খালেদ জানান, দেশের বাইরে থেকে ২০০ ডলারের বেশি অর্ডার করলে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি। আবার এমএফএস ও কিছু কার্ডে লেনদেনে ক্রেতাদের জন্য রয়েছে ছাড়।

ঈদ ঘিরে অঞ্জন’স, বিশ্বরঙ, রঙ বাংলাদেশ, দেশী দশের অন্য ব্র্যান্ড, ক্যাটস আই, রিচম্যান, ইয়েলো, কিউরিয়াস, এক্সটেসি, ক্লাব হাউজ, জেন্টেল পার্কসহ ‍পরিচিত ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর ফেইসবুক পেইজ ও ই-কমার্স সাইটে ঈদের সমাহার রেখেছে।

ফ্যাশন হাউজ ছাড়াও ডিল ডট কম, প্রিয় শপ, বাগডুম ডটকম, দারাজ, এখনি ডটকম, আজকের ডিল, হাটবাজার, উপহার বিডি নামে ই-কর্মাস সাইটগুলোতেও এবার ঈদের আমেজ লেগেছে রোজার শুরুতেই।

নামিদামি ফুটওয়্যার ব্র্যান্ডের নিজস্ব ওয়েবসাইট ও ই-কমার্স সাইটগুলোতে এখন ক্রেতারা জুতাও কিনতে পারেন। অনলাইন থেকে প্রায় নিয়মিতই জুতা কেনে নাবিব চৌধুরী।

তিনি বলেন, “সব সাইটকে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। পায়ের মাপ নিয়ে যেহেতু সমস্যা হতে পারে তাই নামিদামি ব্র্যান্ড ও ই-কমার্স সাইটগুলোই পছন্দ করি। ৩ বছর ধরে অনলাইনে জুতা কিনছি কিন্তু তেমন খারাপ অভিজ্ঞতা হয়নি।”

অন্যদিকে কনসালটেন্সি কোম্পানিতে চাকরি করা তানজিলা শাইরা বলেন, “অনলাইনে কেনাকাটা করলেও জুতা দোকানে গিয়ে কিনতেই পছন্দ করি। কারণ একবার অনলাইনে জুতা কেনার অভিজ্ঞতা ভালো নয়। জুতার সোল শক্ত হলেও পরিবর্তনের জন্য পেইজে আবার যোগাযোগ করা ঝামেলার কাজ। তাই আরাম না পেলেও জুতাটি ব্যবহার করেছি।”

ফুটওয়্যার ব্র্যান্ড অ্যাপেক্সের কাস্টমার সার্ভিস থেকে জানানো হয়, ঈদ ও অন্যান্য সময়ে অনলাইনে জুতা কিনলে ১৫ দিনের মধ্যে অ্যাপেক্সের যে কোনো শোরুমে গিয়ে সাইজ ও পছন্দ অনুযায়ী জুতা পরিবর্তন করা যাবে। তবে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। এই সুবিধা ছাড়ের জুতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।  

ক্রাফটসম্যান ফ্যাশন একটি অনলাইনভিত্তিক ব্র্যান্ড। জুতা, ব্যাগ, বেল্ট, মানিব্যাগের মতো পণ্য নিয়েই তাদের ব্যবসা। তবে ছেলে ও মেয়েদের ডিজাইনার জুতার জন্যই বেশি জনপ্রিয় অনলাইনভিত্তিক ব্র্যান্ডটি।

ক্রাফটসম্যান ফ্যাশনের ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমকে বলেন, “অনলাইনে এখন অনেকেই জুতা কিনতে আগ্রহী। কয়েক বছর আগেও পায়ে না পরে জুতা কেনার ট্রেন্ড ছিল না। এখন যদিও জনপ্রিয়তা বাড়ছে, কিন্তু অন্যান্য পণ্যের তুলনায় জুতা কেনার আগে ক্রেতারা বেশি ভাবেন। তাই ব্র্যান্ডগুলো এখন ফেরত ও পরিবর্তন পলিসি সহজ করেছে।”

ক্রাফটম্যান থেকে জুতা কেনার পর মাপ বা কোনো ধরনের সমস্যা হলে ৩ দিনের মধ্যে নতুন জুতা ডেলিভারি করা হয়। আবার পছন্দ না হলে জুতা ফেরতও দেওয়া যায়।   

ই-ক্যাবের নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর শোভন এক প্রশ্নের জবাবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনলাইনে পণ্য কেনাকাটা নিয়ে ক্রেতাদের কোনো অভিযোগ থাকলে ওয়েবসাইটগুলোকেই জানাতে হবে। আর যদি এভাবে সমাধান না মেলে তবে ক্রেতারা চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ জানাতে পারেন।”

ফেইসবুকে কেনাকাটা

মহামারীর সময় থেকে ফেইসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তাদের ব্যবসার পসার বেড়েছে অনেক।

ফেইসবুকে পেইজ খুলে নিজেদের পণ্যগুলো ব্যবহারকারীদের সামনে মেলে ধরেন এই উদ্যোক্তারা। সরাসরি যোগাযোগ করেন মেসেঞ্জারে। এরপর পণ্য পাঠিয়ে দেন গ্রাহকের গন্তব্যে।

হাতে কাজ করা বিভিন্ন ডিজাইনের পণ্য বেশ কয়েক বছর ধরেই ফেইসবুকে বিক্রি করছে ‘বিস্কুট ফ্যাক্টরি’। জুতা, গয়না, টিশার্ট, সানগ্লাসসহ সব পণ্যেই থাকে হাতের ছোঁয়া।

বিস্কুট ফ্যাক্টরির ডিজাইনার ও উদ্যোক্তা বিস্কুট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি সারা বছরই অনলাইনে বিক্রি করে থাকি। তবে ঈদের সময় পণ্যের বিক্রি বাড়ে। ক্রেতারা যেন তাদের বাজেটের মধ্যে কেনাকাটা করতে পারেন, তাই প্যাকেজ আকারে পণ্য ডিজাইন করা হয়েছে।”

নিজস্ব ডিজাইন ও উপকরণে তৈরি গয়না বিক্রি করে ‘গ্লুড টুগেদার’। প্রথমে ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে শুরু করলেও এখন দোকান রয়েছে তাদের।

উদ্যোক্তা ও গয়না ডিজাইনার মেহনাজ আহমেদ আদিবা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদের ব্যস্ততা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। প্রতিদিন ১৫টি পর্যন্ত গয়না ডেলিভারি করছি। সামনে আরো বাড়তে পারে।

“পণ্য কেনার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় না থাকলেও ঈদের সময়ে ২৪ ঘণ্টা অর্ডার নেওয়া হচ্ছে। পণ্যের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে হাতে তৈরি ঈদ কার্ড।”

গয়নার জন্য ফেইসবুক পেইজগুলোর ওপরই নির্ভর করেন নওশীন ঝুমা। পেশায় চিকিৎসক এই নারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দোকানের গয়না থেকে অনলাইনের গয়না অনেক বেশি সৃজনশীল হয়। আবার দিনের যে কোনো সময় অনলাইনে পণ্য দেখা যায়। যে সুবিধা দোকানের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না।”

অন্যদিকে রেজওয়ানা চৌধুরী সব পণ্য অনলাইনে কিনতে পছন্দ করেন না। ঈদের জন্য সালোয়ার কামিজ, ব্যাগ ও মেকআপ পণ্য কিনতে আগ্রহী তিনি। ই-কমার্স সাইটের চেয়ে ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমেই বেশি কেনাকাটা করেন।

“অনলাইনে সালোয়ার কামিজের অনেক বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা পাওয়া যায়। শপিংসেন্টারে এক সঙ্গে এত কালেকশন পাওয়া যায় না। তাছাড়া ফেইসবুক পেইজে লাইভ দেখে পোশাকের ডিটেইল খুব সহজেই বোঝা যায়। আবার পেইজে অর্ডার করাও অনেক সহজ,” বললেন এই নারী।

কেন অনলাইনে কেনাকাটা, কেন নয়

স্মার্টফোন ব্যবহারে পারদর্শী ও বয়সে তরুণদের মধ্যে অনলাইনে কেনাকাটার আগ্রহ তুলনামূলক বেশি। অনেকে আবার নিদিষ্ট কিছু পণ্য অনলাইনে এবং অন্য পণ্য দোকানে গিয়ে কিনতে পছন্দ করেন।

অলি আহাদ চাকরি করেন একটি আইটি ফার্মে। ঈদের জন্য পাঞ্জাবি, শার্ট, জুতা তিনি কখনোই অনলাইনে কেনেন না। তবে তিনি বিভিন্ন এক্সেসরিজ অনলাইন থেকে কেনেন পছন্দ হলে।

আহাদ বলেন, “পোশাকের ফেব্রিক, রঙ ও সাইজ মোবাইলে দেখে বোঝা যায় না। তাই মার্কেট ঘুরে পোশাক পরে তবেই কিনি। বেশ কয়েক বছর আগে অনলাইনে পাঞ্জাবি কিনে ঠকেছিলাম। তাই অনলাইন থেকে খুব বেশি কেনাকাটা করি না।”

মাইদা নিশা এবার ঈদের জন্য নিজের জামা ই-কমার্স থেকেই কিনেছেন। কিন্তু পণ্য ডেলিভারি পেতে সময় লাগার অভিযোগ আছে তার।

নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, “অনলাইন ও অফলাইন দুই মাধ্যমেই কেনাকাটায় কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। শপিং সেন্টারের ভিড় এড়াতে ও সময় বাঁচাতে নিজের জন্য অনলাইনে পোশাক কিনেছি। কিন্তু উপহার আর বাচ্চার পোশাক অনলাইনে কিনতে ভরসা পাচ্ছি না। বিশেষ করে বাচ্চার পোশাকের ফেব্রিক ও সাইজ অনলাইনে কিছু বোঝা সম্ভব নয়।”

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আদনান সাকিব ঈদের জন্য টিশার্ট, প্যান্ট, বেল্ট ও ফ্যাশন অনুষজ্ঞ কিনতে ই-কমার্স সাইটকে পছন্দ করেন। শুধুমাত্র পাঞ্জাবি কিনতেই শপিং মলে যাবেন তিনি।  

“ই-কমার্স সাইট থেকে পণ্য কেনার আগে সেলারের রেটিং ও পণ্যের রিভিউ দেখে অর্ডার করি। তাই এখন পর্যন্ত কখনো ঠকতে হয়নি। আবার অনলাইনে নানা রকম ছাড় থাকে। তাই অনলাইন কেনাকাটাই বেশি পছন্দ। তবে গত বছরের তুলনায় অনলাইন ও অফলাইন দুই মাধ্যমেই পোশাকের দাম বেশি মনে হচ্ছে”, বললেন এই তরুণ।

অনলাইনে একবার সালোয়ার কামিজ কিনেছিলেন নাজিজুন নাহার। কিন্তু পোশাকের ফেব্রিক ও সাইজ ঠিক না হওয়ায় দ্বিতীয়বার আর অনলাইনে কেনাকাটা করেননি।

উইলিস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের এই শিক্ষক বলেন, “অনলাইনে কেনাকাটায় তেমন অভ্যস্ত নই। ঈদের সময়ে দোকানগুলোতে ভিড় হলেও নিজের পছন্দমত পণ্য কেনা যায়।”