বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ৪ শতাংশ সুদে পাঁচ বছরের জন্য ঋণ হিসেবে বিপুল এ অর্থ চায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি।
Published : 23 Dec 2024, 12:30 AM
সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা নেওয়ার তালিকায় এবার নাম লেখাতে চায় জনতা ব্যাংক; এক সময় স্বনির্ভর ব্যাংকের কাতারে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত বড় ব্যাংকটি চেয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা।
‘দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার' জন্য ৪ শতাংশ সুদে পাঁচ বছরের জন্য বড় অঙ্কের এ টাকা ধার হিসেবে চেয়েছে ব্যাংকটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, জনতা ব্যাংকের ঋণের এ আবেদন পেলেও এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার চাওয়ার বিষয়ে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মজিবর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৪ শতাংশ সুদে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ চাওয়া হয়েছে। ব্যাংকের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে এই ঋণ ব্যবহার করা হবে।
“জনতা ব্যাংক এই প্রথম সাহায্য চাইল। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।“
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে বেশি সংকটের মধ্যে পড়েছে ব্যাংকটি। আগের সরকারের সময় ‘প্রভাব খাটিয়ে’ নেওয়া বেক্সিমকো ও এস আলম গ্রুপের বড় অঙ্কের ঋণ অনাদায়ী হয়ে পড়ায় তারল্য সংকটের মধ্যে দৈনন্দিন কাজ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকটি।
এমন প্রেক্ষাপটে সরকার পতনের পর নগদ অর্থের সংকটে পড়া শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোসহ আরও কয়েকটি ব্যাংককে যেভাবে সরকারের তরফ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে, সেই ধারাবাহিকতায় ঋণের আবেদন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি।
ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জনতা ব্যাংকের সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতা বেক্সিমকো গ্রুপ ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। তারা ব্যাংকটির মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ নিয়েছে। এর পরিমাণ ২৩ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা, যার বেশির ভাগ অর্থ পরিশোধ করেনি। এ কারণে চাপের মধ্যে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হওয়ায় এ ব্যবসায়িক গ্রুপের কোম্পানিগুলোও সংকটের মধ্যে পড়েছে। কর্মী ও শ্রমিকদের বেতন দেওয়া নিয়েও সংকটে পড়েছে ব্যবসায়িক গ্রুপটি।
বেক্সিমকো এসব কোম্পানির বেতন দেওয়ার জন্য আলাদা করে ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে জনতা ব্যাংক।
এজন্য এর আগে বর্তমানের বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যাংক কোম্পানি আইন থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটিকে আংশিক অব্যাহতি দেওয়া হয়। সরকারের বিশেষ পরামর্শে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ অব্যাহতি দেয়। ফলে খেলাপি হওয়া বেক্সিমকো গ্রুপকে আরও ঋণ দেওয়ার সুযোগ পায় ব্যাংকটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত সেপ্টেম্বরে জনতা ব্যাংকের আমানত দাঁড়ায় ১ লাখ ১১ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা।
ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৮ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিল ৬০ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৬১ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। এসব খেলাপির বিপরীতে ৪৪ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
কিন্তু তারল্যসংকটে ব্যাংকটি মাত্র ৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা সঞ্চিতি রাখতে পেরেছে। ফলে গত সেপ্টেম্বরে জনতা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা।
এর আগে গেল নভেম্বরে ৬ ব্যাংককে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়া গত সপ্তাহে গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১৩০০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা চেয়েছে পদ্মা ব্যাংক, যাদের ঘাড়ে বর্তমানে ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা আমানত ফেরত দেওয়ার দায় রয়েছে।
পুরনো খবর