দুই এনআইডির মামলায় সাবরিনার বিচার শুরুর আদেশ

ভুয়া কোভিড সনদ দিয়ে আলোচনায় আসা চিকিৎসক সাবরিনার দুটি এনআইডি পাওয়ায় ২০২০ সালে এ মামলা দায়ের করে নির্বাচন কমিশন।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2024, 08:29 AM
Updated : 12 Feb 2024, 08:29 AM

তথ্য গোপন করে দ্বিতীয় জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার মামলায় জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা শারমিনের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।

ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুব আহমেদ সোমবার এ মামলায় সাবরিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বলে আসামির আইনজীবী মো. ওসমান গনি আদালতপাড়ায় সাংবাদিকদের জানান।

তিনি বলেন, এদিন আদালতে উপস্থিত হয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন সাবরিনা। শুনানির পর বিচারক সেই আবেদন নাকচ করে দিয়ে অভিযোগ গঠন করেন।

কোভিড মহামারীর সময়ে ২০২০ সালের ৩০ অগাস্ট বাড্ডা থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন গুলশান থানা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ মমিন মিয়া। ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রিপন উদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে জেকেজি হেলথ কেয়ারের জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া এই চিকিৎসককে নিয়ে তদন্তে নেমে তার দুটি জাতীয় পরিচয়পত্রের সন্ধান পায় দুর্নীতি দমন কমিশন।

দুদকের পক্ষ থেকে তা চিঠি দিয়ে ইসিকে জানানো হলে সাবরিনার এনআইডি দুটি ‘ব্লক’ করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মমিন মিয়া।

মামলার এজাহার অনুযায়ী, সাবরিনা ২০০৯ সালে হালনাগাদের সময় মোহাম্মদপুর এলাকায় ভোটার হন। সেই এনআইডিতে তার নাম সাবরিনা শারমিন হোসেন, বাবার নাম সৈয়দ মুশাররফ হোসেন, মায়ের নাম কিশোয়ার জেসমীন, স্বামী আর এইচ হক, জন্ম তারিখ ২ ডিসেম্বর ১৯৭৮, পেশা সরকারি চাকরি এবং বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা পিসিকালচার হাউজিং সোসাইটি, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

তার দ্বিতীয় এনআইডির নিবন্ধন হয়েছে ২০১৬ সালে, সেখানে তার নাম সাবরিনা শারমিন হুসেন, বাবার নাম সৈয়দ মুশাররফ হুসেন, মায়ের নাম জেসমিন হুসেন, স্বামী আরিফুল চৌধুরী, জন্ম তারিখ ২ ডিসেম্বর ১৯৮৩, পেশা চিকিৎসক এবং বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা বাড্ডার আনোয়ারা ল্যান্ডমার্ক, ঢাকা।

২০১৫ সাল থেকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করে আসা ডা. সাবরিনা জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী। সে কারণে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী নামেই তিনি পরিচিত।

সরকারি নথিপত্রে নাম সাবরিনা শারমিন হুসাইন থাকলেও এই চিকিৎসক সাবরিনা আরিফ নামে নানা কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। আবার কর্মস্থলে তার কক্ষে নামফলকেও লেখা ছিল- ডা. সাবরীনা আরিফ।

মামলার এজাহারে ইসি জানায়, ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি ভোটার হওয়ার জন্য আগারগাঁওয়ে এনআইডি উইংয়ের প্রকল্প অফিসে আবেদন করে আঙ্গুলের ছাপ ও বায়োমেট্রিক তথ্য দেন সাবরিনা। নিয়ম অনুযায়ী তার তথ্য যাচাইয়ের জন্য গুলশান নির্বাচন অফিসকে জানানো হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সে বছর ২৭ এপ্রিল সাবরিনা গুলশান নির্বাচন কাযালয়ে উপস্থিত হন।

দলিল যাচাই-বাছাই করে তদন্ত প্রতিবেদনে তৎকালীন নির্বাচন অফিসার তাকে ‘ভোটার করা যেতে পারে’ বলে সুপারিশ করেন। এর ভিত্তিতে সেবার ভোটার হন সাবরিনা।

পরে মহামারীর সময়ে সাবরিনা গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার নামে দুটি এনআইডি থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে চিঠি দেয় দুদক। সে বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর মামলা করে ইসি।

এর আগে ২০২২ সালের ১৯ জুলাই কোভিডের জাল সনদ দেওয়ার মামলায় সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফুলসহ ছয়জনকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই মামলায় বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারামুক্ত আছেন তিনি।