গান, আবৃত্তি, নাচ ও আলোচনার মধ্য দিয়ে ঢাকার ছায়ানট মিলনায়তনে শুরু হয়েছে নজরুল উৎসব।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুরু হয় দুই দিনের এ আয়োজন।
'হে পার্থসারথি বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য শঙ্খ'- এই নৃত্যগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
উৎসবে একক কণ্ঠে নুসরাত জাহান রুনা গেয়ে শোনান 'এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায়', মৌসুমী সাহা শোনান 'তোমার বুকের ফুলদানিতে'।
কাজী মদিনা আবৃত্তি করেন 'সিন্ধুঃ তৃতীয় তরঙ্গ'। এরপর একক কণ্ঠে শহীদ কবির পলাশ শোনান 'ভীরু এ মনের কলি'।
'মোমের পুতুল মমীর দেশের মেয়ে' গানের সঙ্গে সম্মেলক নৃত্যগীত পরিবেশন করে ছায়ানটের ছোটদের দল।
পরে সৈয়দা সনজিদা জোহরা বীথিকা শোনান 'ওগো অন্তর্যামী ভক্তের তব', অন্তরা শরীফ শোনান 'আমি বেলপাতা জবা দেব না', স্বর্ণা নাগ শোনান 'মসজিদেরি পাশে আমার কবর দিও ভাই', লায়েকা বশির শোনান 'এখনো ওঠেনি চাঁদ'।
এছাড়া একক গান পরিবেশন করেন নাসিমা শাহীন ফ্যান্সী, মইদুল ইসলাম, প্রিয়াংকা গোপ, সঞ্চালী সেনগুপ্তা, শর্মিষ্ঠা দাশ, সালাউদ্দিন আহমেদ, রওশন আরা সোমা, শ্রাবন্তী ধর, মফিজুর রহমান, নন্দিতা দাশ দিশা, বিজন চন্দ্ৰ মিস্ত্রী।
সম্মেলক কণ্ঠে 'দেশ গৌড়-বিজয়ে দেবরাজ', 'আসিছেন হাবীবে খোদা' পরিবেশন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগ।
ছোটদের সম্মেলক কণ্ঠে 'জয় হোক জয় হোক' গানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের আয়োজন।
প্রথম দিনের আয়োজনে সূচনা বক্তব্যে ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী বলেন, "নজরুল যেমন প্রেম ও প্রকৃতির পূজারী, তেমন দ্রোহের কবি। তার গানে হিন্দুস্থানী রাগের পাশাপাশি আমরা লক্ষ্য করি কীর্তনাঙ্গ ও গজল কিংবা আঞ্চলিক লোকজ সুরের যথাযথ ব্যবহার। বাণী ও সুরের এই বৈচিত্র্য কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিভার সাক্ষ্য বহন করে।
“নজরুলের গানের বাণী ও সুর নিয়ে যে যথেচ্ছাচার চলছে, তার বিপরীতে ছায়ানট নজরুলের আদি সুরের সাধনা করে।"
অতীতের মতো নজরুলের সৃষ্টি আজও প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, "নজরুল রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব সম্বোধন ও তার স্নেহধন্য হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান আমলে তাকে রবীন্দ্রনাথের প্রতিদ্বন্দ্বী ও খণ্ডিত রূপে প্রকাশ করা হয়েছে। তার বিপরীতে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল উভয়ে হয়ে উঠেছেন বাঙালির স্বাধীকার অর্জনের অবলম্বন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় নজরুল ইসলামের গানে উজ্জীবিত হয়েছি।
"কাজী নজরুল ইসলাম রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে সঙ্গীতের প্রবেশ ঘটিয়েছিলেন। ধর্মের নামে অধর্ম ও নারীবিদ্বেষের বিরুদ্ধে কঠোর উচ্চারণ করেছেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে সাম্যের পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন।”
সারওয়ার আলী বলেন, "আজ যখন ধর্ম বিদ্বেষ সমাজকে বিভক্ত করে, ধনবৈষম্য সমাজে অস্থিরতা ও নৈতিক অবক্ষয়ের জন্ম দেয়, তখন নজরুল সঙ্গীত সর্বজনে শুভবুদ্ধি জাগ্রত করুক।"
প্রথম দিন যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন, তবলায় মৃত্যুঞ্জয় মজুমদার ও গৌতম সরকার। সেতারে ফিরোজ খান, এস্রাযে অসিত বিশ্বাস, মন্দিরায় প্রদীপ কুমার রায় ও কি বোর্ডে রবিন্স চৌধুরী।