গত ১০ জুন ঢাকায় সভা-সমাবেশ করার পর তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করে রিটকারী তরীকত ফেডারেশনের কয়েকজন নেতা।
Published : 19 Nov 2023, 08:49 PM
জামায়াতে ইসলামীর সভা-সমাবেশ বন্ধ ও তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন গ্রহণ না করে রিটকারীকে হাই কোর্টে যেতে বলেছে আপিল বিভাগ।
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন এবং দলটির মিছিল-মিটিং বন্ধ চাওয়ার পাশাপাশি আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি রোববার একসঙ্গে করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ।
আদালত জামায়াতের আপিল খারিজ করায় হাই কোর্টের রায়ই বহাল রয়েছে। সেই সঙ্গে অবমাননার আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছে আপিল বিভাগ।
একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে হাই কোর্ট রায় দেয়। এরপর তারা আপিল বিভাগে যায়।
এক দশক পর চলতি বছরের ১০ জুন দলটি ঢাকায় সভা-সমাবেশ করে। আপিল বিভাগে নিবন্ধনের মামলা চলমান থাকায় আদালত অবমাননার আবেদন করেন রিটকারী তরীকত ফেডারেশন নেতা রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ কয়েকজন।
গত ২৪ জুলাই তাদের পক্ষে এ আবেদন করেন তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
বিচারাধীন এ আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী যেন সভা-সমাবেশ, মিছিলসহ কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে না পারে, সেই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয় ওই আবেদনে।
আবেদনে বলা হয়, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত হাই কোর্টের রায় এখনও বহাল রয়েছে। রায় বহাল থাকা অবস্থায় গত ১০ জুন দলটি ঢাকায় সভা-সমাবেশ করেছে।
“উচ্চ আদালতের রায়ের পর দলটির এ ধরনের কর্মসূচি পালন বেআইনি। একইসঙ্গে উচ্চ আদালতের রায়ের লঙ্ঘন। কারণ রায়ে বলা হয়েছে, দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের পরিপন্থি। অতএব কোনোভাবেই দলটি সভা-সমাবেশ করার অনুমতি পেতে পারে না,” বলা হয় আবেদনে।
সভা-সমাবেশ করে নিবন্ধন দাবি করে জামায়াত নেতাদের বক্তব্য দেওয়া ‘আদালত অবমাননার শামিল’ বলেও দাবি করা হয় আবেদনে।
শুনানিকালে আবেদনকারীর আইনজীবী তানিয়া আমীরকে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এ আদেশ (নিবন্ধন বাতিল) দিয়েছে হাই কোর্ট; আপনারা সেই কোর্টে যান। যে কোর্টের আদেশ অমান্য করেছে, সে কোর্টেই যেতে হবে।”
আদালত থেকে বের হয়ে আইনজীবী তানিয়া আমীর বলেন, “নিবন্ধন বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের আপিল খারিজ হয়ে যাওয়ায় দলটির আর কোনো অস্তিত্ব থাকল না। তাই জামায়াত আজ থেকে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবে না। কোনো মিছিল মিটিং করতে পারবে না।
“যদি জামায়াত কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, তাহলে আমরা আদালত অবমাননার আবেদন নিয়ে আপিল বিভাগে যাব।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনে নির্বাচন কমিশন।
সে সময় ৩৮টি দলের সঙ্গে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী জামায়াতে ইসলামীও নিবন্ধিত হয়। আইন অনুযায়ী শুধু নিবন্ধিত দলগুলোই নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়।
জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে তরীকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে একটি রিট আবেদন করেন।
ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি হাই কোর্ট একটি রুল জারি করে। রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১)(বি)(২) ও ৯০(সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।
এরই মধ্যে নিবন্ধন বাঁচাতে দলীয় গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধন আনে জামায়াত। গঠনতন্ত্র থেকে ‘আল্লাহ প্রদত্ত ও রসুল প্রদর্শিত’ ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বাদ দিয়ে ‘গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বলা হয়।
রুলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ১ অগাস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের বেঞ্চ রায় দেয়।
সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক হওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয় ওই রায়ে।
ওই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন ওই বছরের ৫ অগাস্ট খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
পরে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। রোববার তাও খারিজ হয়ে গেল।
বার বার সময় দেওয়ার পরও জামায়াতের আইনজীবীরা আপিল শুনানিতে অংশ না নেওয়ায় আপিল বিভাগ আপিল খারিজ করে আদেশ দেয়।
রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর ও অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম।
জামায়াতের পক্ষে সময় প্রার্থনা করেন অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান।
সময় প্রার্থনা করলে আদালত বলে, “সময় আবেদন খারিজ করা হল এবং একই সঙ্গে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ডিডি [ডিসমিস ফর ডিফল্ট] করা হল।”
আরও পড়ুন
নিবন্ধন বাতিলের রায় বহাল, নির্বাচনে অযোগ্যই থাকল জামায়াত