নিপা ভাইরাসে মানিকগঞ্জের একজনের মৃত্যু, বছরের প্রথম

এ যাবৎকালে সবচেয়ে বেশি ৬৭ জন রোগী পাওয়া যায় ২০০৪ সালে, তাদের মধ্যে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2024, 01:04 PM
Updated : 28 Jan 2024, 01:04 PM

এ বছর নিপা ভাইরাসে প্রথম মৃত্যু দেখল বাংলাদেশ।

গত শনিবার মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম বাবুল হোসেন। তার বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পুটাইল ইউনিয়নের পুটাইল গ্রামে। 

মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ বছর দেশে এটাই প্রথম মৃত্যু বলে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

ডা. মোয়াজ্জেম বলেন, অসুস্থ অবস্থায় গত ১৬ জানুয়ারি মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি হন বাবুল হোসেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার পপুলার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

“২৪ তারিখে তার নিপা ভাইরাস পজিটিভ আসে। পপুলার হাসপাতাল থেকেই তার নমুনা পাঠানো হয়েছে আইইডিসিআরে। শনিবার পপুলার হাসপাতাল থেকে তাকে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওইদিনই সেখানে তিনি মারা যান।”

ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শনিবার ওই রোগীকে আমাদের এখানে আনা হয়েছিল। ভর্তি করা করার পর গতকালই মারা যান তিনি। আইইডিসিআরে তার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।”

জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান,আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের কাছে কিছু নমুনা এসেছে। সেগুলো আমরা পর্যালোচনা করে দেখছি, মৃত্যু নিপা ভাইরাসে হয়েছে কিনা।”

নিপা ভাইরাস ছড়ায় মূলত বাদুড়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এই সময়টাতেই খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। আর বাদুড় গাছে বাঁধা হাড়ি থেকে রস খাওয়ার চেষ্টা করে বলে ওই রসের সঙ্গে তাদের লালা মিশে যায়। সেই বাদুড় নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে এবং সেই রস খেলে মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এ ভাইরাস। আক্রান্ত মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে এ রোগ।

বাংলাদেশে মেহেরপুর জেলায় ২০০১ সালে প্রথম নিপা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সে বছর মোট আক্রান্ত ১৩ জনের মধ্যে ৯ জনই প্রাণ হারায়। এ যাবৎকালে সবচেয়ে বেশি ৬৭ জন রোগী পাওয়া যায় ২০০৪ সালে, তাদের মধ্যে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আইইডিসিআরের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সাল পর্যন্ত সারাদেশে ৩৩৯ জনের নিপা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে ২২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ এই রোগে আক্রান্ত হলে ৭০ দশমিক ৭৯ শতাংশ রোগী মারা যাচ্ছেন।

নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর ও মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। এক পর্যায়ে খিঁচুনিও দেখা দিতে পারে। মস্তিস্কে ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দেয়।

এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ৩৪টি জেলায় নিপা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। সিরাজগঞ্জ বাদে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সবগুলো জেলায় পাওয়া গেছে এ ভাইরাস। আইইডিসিআরের হিসাবে, নিপা ভাইরাসে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ জেলা রাজশাহী ও রাজবাড়ী।

২০১৫ সালের পর প্রতি বছরই নিপা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ জনের কম ছিল। তবে গত বছর শীত মৌসুমে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) ১৪ জন রোগী পাওয়া যায়। রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, পাবনা, নাটোর, রাজশাহী ও নরসিংদীতে পাওয়া যায় নিপা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী।

Also Read: নিপা ভাইরাস: সতর্কবার্তার মধ্যেও চলছে খেজুরের রসের প্রচার

Also Read: নিপা ভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কবার্তা