সিইসির ভাষায়, “নির্বাচন আয়োজন কঠিন কর্মযজ্ঞ। চাইলাম আর হয়ে গেল, এরকম নয়।”
Published : 14 Oct 2023, 11:32 AM
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল মনে করেন, ভোট যদি ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ হয়, তাহলেই তাকে ‘গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’ বলা যায়। আর ভোটার যদি নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, কোন দল এল না, সেটা তখন গুরুত্বপূর্ণ হবে না।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের দায়িত্ব পালনকালে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের ‘দলীয় চিন্তাভাবনার ঊর্ধ্বে থেকে’ দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
নির্বাচন সামনে রেখে শনিবার বিভাগীয় কমিশনার, উপ- মহা পুলিশ পরিদর্শক, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন সিইসি।
তিনি বলেন, “প্রশাসনে বা সরকারে পুলিশ ও নির্বাহী পরিষদের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। সরকার বলতে আমরা পুলিশ ও ডিসিকেই বুঝি। কাজেই আপনাদের চিত্তে ধারণ করতে হবে যে আপনারাই সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করছেন।”
নির্বাচন আয়োজনকে ‘কঠিন কর্মযজ্ঞ’ হিসেবে বর্ণনা করে সিইসি বলেন, “চাইলাম আর হয়ে গেল, এরকম নয়। যেহেতু নির্বাচনের দায়িত্ব আপনাদেরও, তা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।”
ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হলে তারা নির্বাচনে যাবে না। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলে আসছে, সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার থাকা অবস্থাতেই ভোট হবে।
রাজনীতির এই দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে কী হলে নির্বাচন ‘গ্রহণযোগ্য হবে’, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান এ অনুষ্ঠানেও ব্যাখ্যা করেন সিইসি হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, “গ্রহণযোগ্য হবার অর্থ নির্বাচনটা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। জনগণকে দেখতে হবে নির্বাচনটা ফেয়ার ছিল এবং নির্বিঘ্নে সবাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে। এটুকু যদি নিশ্চিত করা যায়, নির্বাচনে কে আসলো, কে আসলো না…; জনগণ যদি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তাহলেই নির্বাচনে একটি বড় সফলতা আসবে।”
প্রশাসন ও পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেন, “আমার দৃষ্টিতে আপনারাই হচ্ছেন নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ের বিশ্বস্ত সহায়তাকারী এবং আপনারাই আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আমাদের শপথ নেবার পর সহশ্রাধিক নির্বাচনে শতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে আন্তরিকতার সাথে রিটার্নিং অফিসারকে সহযোগিতা করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিটি নির্বাচন কোনো প্রকার সহিংসতা ছাড়াই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
"অতীত নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করা আমি পছন্দ করি না। তবে অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে চলুন আমরা সকলে মিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের এমন উদাহরণ সৃষ্টি করি, যা অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।"
অন্যদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো.আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান, ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
রাশেদা সুলতানা বলেন, "সুন্দর, সুষ্ঠুভাবে যাতে কাজ করতে পারেন এজন্যই প্রশিক্ষণ জরুরি মনে করেছি। আমরা সবাই জানি যতই আইন জানি না করি যেন, যেহেতু পাঁচ বছর পরপর ভোট হয়। তাই প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। দু'দিনের কোর্সে আইনগুলো সম্পর্কে ধারণা নেবেন। তাই এটি ধারণ করে, লালন করে মাঠে প্রয়োগ করবেন।
আনিছুর রহমান বলেন, "আমরা শুধু আমাদের দেখছি না। বহির্বিশ্বও দেখছে। কাজেই প্রত্যকেরই শপথ নিয়ে নামতে হবে যে আমি আমার দায়িত্বটা সুষ্ঠু সুন্দরভাবে পালন করব। সেক্ষেত্রে হয়ত বাধা আসতে পারে, তা অতিক্রম করার জন্য ডিসি, এসপিরা স্ব স্ব উদ্যোগে সমাধান নিতে হবে। আশা করি নভেম্বরের কোনো এক সময় তফসিল হবে।"
মো. আলমগীর বলেন, "আইনে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। কিছু কনফিউশন থাকলে জেনে নেবেন। রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার কাদের করা হবে এখনো ঠিক হয়নি। এটা তফসিল ঘোষণা যখন, তখনই কেবল জানা যাবে। কিন্তু দায়িত্ব পালন সবাইকেই করতে হবে।”