বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক হতে পারে বছরের প্রথমার্ধেই

নেপাল ও ভুটানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা দেশে আনার উদ্যোগ নিয়ে কাজ চলছে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2023, 06:33 PM
Updated : 24 Jan 2023, 06:33 PM

চলতি বছরের প্রথমার্ধে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

মঙ্গলবার ঢাকায় প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এ কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “পানি খাতে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কিছু ‘অসম্পূর্ণ কাজ বা ইস্যু’ থাকলেও অগ্রগতি হচ্ছে।

“প্রায় এক দশক পরে জেআরসি বৈঠক হয়েছে এবং এই বছরের প্রথমার্ধে আরেক দফা জেআরসি বৈঠক করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। যদিও প্রত্যাশা ছিল প্রথম প্রান্তিকে এটা করার।”

এক যুগ পর গত বছরের ২৫ অগাস্ট দিল্লিতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে জেআরসির মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়।

ওই বৈঠকে কুশিয়ারা নদীর অন্তর্বর্তী পানিবণ্টনের ওপর সমঝোতা স্মারকের বিষয়বস্তু চূড়ান্ত করে উভয় দেশ। যার আলোকে পরের মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টনের ওই সমঝোতা স্মারক সই হয়।

পাশাপাশি ২০১৯ সালের সমঝোতা স্মারকের আলোকে ফেনী নদীর যে অংশ থেকে ত্রিপুরার সাব্রুমের জন্য পানি নেওয়া হবে, তার স্থান নির্ধারণ ও নকশাও চূড়ান্ত করা হয় ওই বৈঠকে।

ওই বৈঠকে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে তখন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকা এ চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার অনুরোধ বাংলাদেশ আবারও জানিয়েছে।

ভারত এ চুক্তি বাস্তবায়ন করতে ‘সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের প্রাপ্য পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের উপায় বের করতে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সম্মত হয়েছে উভয়পক্ষ।

রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত ‘স্ট্রেংদেনিং বাংলাদেশ’স ফরেন রিলেশন উইথ নেইবারস ইন দ্য ইভলভিং গ্লোবাল অর্ডার’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথি শাহরিয়ার আলম প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন।

‘ভালো প্রতিবেশী’ হিসাবে যোগাযোগ, বাণিজ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোতে অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, “পানিবণ্টন নিয়ে সমস্যার ক্ষেত্রে সরকার কেবল ভারতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না। আমরা যখন প্রতিবেশির কথা বলি, তখন আলোচনাটা বিস্তৃত পরিসরে হওয়া দরকার।

“কেননা, কিছু নদীর উৎপত্তি চীন থেকে, কিছু ভুটান থেকে আর কিছুর উৎপত্তি হয়েছে অন্যান্য দেশে। বিস্তৃত পরিসরে আলোচনার জন্য আমাদের দিক থেকেও কিছু উদ্ভাবনের দরকার। কী করা যায়, আমরা সেটা দেখব। পাশাপাশি বর্তমান অগ্রগতিকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করব।”

কেবল ভারতের মধ্যে নিবদ্ধ না রেখে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ক্ষেত্রের সহযোগিতাকে অন্যান্য দেশেও বিস্তৃত করার অগ্রগতির বিষয়ও তুলে ধরেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। বলেন, “বিদ্যুৎ খাতে নেপাল ও ভুটানে উৎপাদন করে জলবিদ্যুৎ আনার বিষয়ে কাজ চলছে।”

‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- এই পররাষ্ট্র নীতি ঠিক রেখে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক বিস্তৃত করার চেষ্টা সরকার করছে উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, “ভালো প্রতিবেশি হিসাবে আমাদের অঞ্চলে সম্পর্ককে গভীর ও বিস্তৃত করার কাজ আমরা অব্যাহত রাখব। আমরা চাই, আমাদের প্রতিবেশীরা সেভাবে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করবেন এবং একই রকমভাবে কাজ করবেন।”

অনুষ্ঠানে চারটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ টি এম রকিবুল হক, বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবীর ও জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো এম আশিকুর রহমান।

বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন।