বাংলা একাডেমির উপর ‘আমলাতন্ত্রের হস্তক্ষেপে’ লেখক-শিল্পীদের উদ্বেগ

আবুল মনসুরকে সংস্কৃতি সচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবিও তুলেছেন তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2023, 01:15 PM
Updated : 26 Jan 2023, 01:15 PM

বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিবের ‘হস্তক্ষেপের’ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন লেখক, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তারা মো. আবুল মনসুরকে সংস্কৃতি সচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন।

কবি শাহেদ কায়েসের মাধ্যমে বিবৃতিটি সংবাদ মাধ্যমে আসে। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন- মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, শামীম আজাদ, হাফিজ রশিদ খান, ফেরদৌস নাহার, খালেদ হোসাইন, শামীম রেজা, শোয়াইব জিবরান, রাজীব নূর, হেনরি স্বপন, শামীম শাহান, শাহেদ কায়েস, কাজল কানন, আহমেদ শিপলু, সাকিরা পারভীন, অতনু তিয়াস, অরবিন্দ চক্রবর্তী, হামিম কামাল, লোপা মমতাজ, শারমিনুর নাহার, শরাফত হোসেন।

বরাবর একুশে বইমেলা বাংলা একাডেমি আয়োজন করলেও এবার ব্যানার ও আমন্ত্রণপত্রে আয়োজক হিসেবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নাম দেওয়ার নির্দেশনা দেন সচিব আবুল মনসুর। তার ওই নির্দেশনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া আসে লেখকদের মধ্য থেকে। এরপর সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, মেলা আয়োজন আগের মতোই হবে।

লেখক, শিল্পীদের বিবৃতিতে বাংলা একাডেমি পরিচালনার আইন তুলে ধরে বলা হয়, এক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে বাংলা একাডেমির পর্ষদ নিতে পারে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব একাডেমির হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।

Also Read: একুশে বইমেলার আয়োজক কে? দ্বন্দ্বে সংস্কৃতি সচিব ও বাংলা একাডেমি

বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের সঙ্গে সচিবের আচরণের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা সংবাদমাধ্যম সূত্রে জেনেছি, সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর বাংলা একাডেমিতে গিয়ে একাডেমির কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকি দিয়েছেন, বইমেলাকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে নিতে চেয়েছেন। একাডেমির কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন- ‘কীসের স্বায়ত্তশাসন! আপনারা সবাই মন্ত্রণালয়ের অধীন।

“তার এই অসৌজন্যমূলক আচরণে আমরা স্তম্ভিত, মর্মাহত। সচিব কার্যত মহান সংসদে পাসকৃত আইন লঙ্ঘন করেছেন। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে এই সচিবকে অপসারণ করা হোক। শিল্প-সাহিত্যে আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ চলবে না।”

এদিকে বাংলা একাডেমিতে মন্ত্রণালয়ের ‘হস্তক্ষেপে’ ক্ষোভ প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার ফেইসবুকে পোস্ট লিখেছেন একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ।

তিনি লিখেছেন, “সচিবদের কখনও একুশের আয়োজন তদারকি করতে দেখিনি। এটা একান্তই কাউন্সিল এবং মহাপরিচালকের এখতিয়ারে। আমন্ত্রণপত্রে মন্ত্রণালয়ের নাম বা লোগো থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না।

“একুশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের সরকার প্রধান, প্রধান অতিথি হিসেবে আসবেন, সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি। মহাপরিচালক স্বাগত ভাষণ দেবেন। মন্ত্রী মহোদয় বিশেষ অতিথি থাকবেন, এই ছিল নিয়ম আমার মেয়াদে ১৯৯১-১৯৯৫ পর্যন্ত। সচিবরা মঞ্চে স্থান পেয়েছেন এর পর থেকে।”

এর আগে বুধবার আরেকটি ফেইসবুক পোস্টে হারুন-উর-রশিদ লেখেন, “আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি, এ ব্যাপারে একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সঙ্গে কথা বলে এই আমলা মহোদয়কে নিবৃ্ত্ত করতে।

“আমি সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা, কর্মচারি, প্রকাশক সমিতির সদস্যবৃন্দ এক কথায় সকলকে ধৈর্য ধারনের অনুরোধ জানাচ্ছি। একজন সাবেক মহাপরিচালক ও সভাপতি হিসাবে আমার দায়িত্ববোধ থেকেই আমি এ আবেদন জানাচ্ছি। আশা করি, এ আগুন জ্বলে উঠার আগেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সদয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”