সুপার সাইক্লোন ‘হচ্ছে না’ মোখা

সুপার সাইক্লোন না হলেও মোখার ধ্বংস ক্ষমতা কম হবে, এমন ভাবার কোনো সুযোগ নেই বলে সতর্ক করছেন আবহাওয়াবিদরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2023, 11:21 AM
Updated : 13 May 2023, 11:21 AM

সামুদ্রিক ঝড় মোখা এরই মধ্যে প্রবল শক্তিশালী হয়ে উঠলেও এর ‘সুপার সাইক্লোনে’ রূপ নেওয়ার শঙ্কা দেখছেন না আবহাওয়াবিদরা।

সামুদ্রিক ঝড়গুলোর শক্তির বিচারে করে যে শ্রেণীভেদ আবহাওয়া বিজ্ঞানে করা হয়ে থাকে, তার সর্বোচ্চ ধাপে রয়েছে ‘সুপার সাইক্লোন’।

যখন কোনো ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের বেগ ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার ছাড়ায়, তখনই তাকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়।

এই পর্যন্ত যত তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে বঙ্গোপসাগরের ঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার ছাড়াতে পারে বলে ধারণা পাওয়া গেছে।

সুপার সাইক্লোন না হলেও এর ধ্বংস ক্ষমতা কম হবে, এমন ভাবার কোনো সুযোগ নেই বলে সতর্ক করছেন আবহাওয়াবিদরা।

এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে শনিবার দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, “এটি (মোখা) সিডরের মতোই শক্তিশালী।

“প্রায় সিডরের সমতুল্য গতিবেগ নিয়ে সে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। তবে পার্থক্য হলো সিডর বাংলাদেশের মাঝ বরাবর দিয়ে গিয়েছিল, মোখা পাশ দিয়ে যাচ্ছে।”

২০০৭ সালে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় সিডর। তাতে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন। তারপর আরও অনেক ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের মানুষ দেখলেও তত ক্ষতি আর হয়নি।

বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে থাকা ঘূর্ণিঝড় রোববার দুপুর নাগাদ বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হানতে যাচ্ছে।

কক্সবাজার উপকূলের ছয়শ কিলোমিটার দূরে থাকা ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে এখন বাতাসের একটানা গতিবেগ সর্বোচ্চ ১৭০ কিলোমিটার; যা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৯০ কিলোমিটারে উঠছে।

পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার দুপুরে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, “ঘূর্ণিঝড়টি নিয়ে যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল যে এটি সুপার সাইক্লোন হতে পারে, আমরা পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পেরেছি যে এটি সুপার সাইক্লোন হওয়ার শঙ্কা নেই।

“সুপার সাইক্লোন হতে হলে ২২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় গতিবেগ হতে হবে। এর মধ্যে এখন বাতাসের গতিবেগ আছে ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার। এখন এটা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বা সিভিয়ার সাইক্লোন।”

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, “অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার তীব্রতার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ দেখছি। কিন্তু ল্যান্ডে উঠার সময় বা উঠলে পরে দ্রুত কমে যায়। তখন হয়ত সিভিয়াল সাইক্লোন থাকতে পারে বা এর কমবেশি হতে পারে। ওই রকম দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বাতাসের গতি ১০০-১৫০ কিলোমিটার থাকতে পারে।”

বাতাসের গতি

  • ঘূর্ণিঝড়: ৬২-৮৮ কিলোমিটার/ঘণ্টা

  • তীব্র ঘূর্ণিঝড়: ৮৯-১১৭ কিলোমিটার/ঘণ্টা

  • হারিকেনের গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়: ১১৮-২১৯ কিলোমিটার/ঘণ্টা

  • সুপার সাইক্লোন: ২২০ কিলোমিটার/ঘণ্টা বা তার বেশি

বাংলাদেশের আহাওয়া বিভাগ ‘অতি প্রবল’ বললেও ভারতের আহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, মোখা এরইমধ্যে ‘চরম প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ হয়ে উঠেছে।

রোববার উপকূলে আঘাত হানার আগে এই ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি আরও বাড়াবে বলে ভারতের আবহাওয়া বিভাগের বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ সবচেয়ে বাড়বে শনিবার রাতে। তখন ঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১৯০-২০০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠছে।

তবে এরপর বাতাসের তীব্রতা কমে আসার আভাস দিচ্ছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ। তারা বলছে, ঝড়টি যখন উপকূলে আসবে, তখন বাতাসের শক্তি কমে এটি ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, সাগরে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় থাকলেও স্থলভাগে উঠার সময় মোখার গতি কিছুটা কম থাকবে।

“তখন হয়ত সিভিয়ার সাইক্লোন থাকতে পারে বা এর কমবেশি হতে পারে। ওই রকম দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বাতাসের গতি ১০০-১৫০ কিলোমিটার থাকতে পারে।”

ঘূর্ণিঝড় মোখার ব্যাস ৫০০ কিলোমিটারের বেশি হওয়ায় এর অগ্রভাগের প্রভাব অনেক এলাকায় পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

“শনিবার শেষ রাতের দিকে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ উপকূল স্পর্শ করবে; সা্ই‌ক্লোনের মোস্ট অব দ্য পার্ট অতিক্রমের সম্ভাবনা রোববার বিকালে।”

বাংলাদেশের কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনকেই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক মো. আসাদুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে।

“কিন্তু এটা যখন আছড়ে তীরে পড়বে, এটার ক্লাউড মাস্ক বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়বে, যার প্রভাব সিলেট পর্যন্ত চলে যাবে, তাই সেখানেও প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।”

এর সঙ্গে পাহাড় ধসের শঙ্কাও বাড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, “একটানা আট ঘণ্টার বেশি প্রবল বৃষ্টি হলে পাহাড় ধ্বসের আশংকা থাকে।”

কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমি ধস হতে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।