“সকল সাক্ষীদের আমরা পাব না, আর সব সাক্ষীর সাক্ষ্য দরকারও নেই,” বলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
Published : 02 Jan 2024, 10:03 PM
সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচারে গতি পেয়েছে; মঙ্গলবারই সাতজনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
এদিন দুপুর ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছয় পোশাক কর্মী এবং নিহত এক পোশাক কর্মীর স্বামী সাক্ষ্য দেন।
বিচারক এ এই এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া আগামী ১১ জানুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্যের তারিখ রেখেছেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল সমাদ্দার জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এ মামলায় সাক্ষীর সংখ্যা ৫৯৪। মঙ্গলবার সাতজনসহ ৫৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
এদিন সাক্ষ্য দেন, সীমা রানী দাস, বিজয় চন্দ্র শীল, আব্দুল কাদের, আনারুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, মিল্টন দাস ও রুবেল।
সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য প্রত্যেকে এক হাজার টাকা রাহা (যাতায়াত ও দুপুরের খাবার) খরচ দেওয়া হয় ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইডের তহবিল থেকে। সাক্ষীরা ঘটনার সময় রানা প্লাজার পাশের ইথার গার্মেন্টস ও নিউ ওয়েব স্টাইলে কাজ করতেন।
এদিন আসামি সোহেল রানাকে আদালতে হাজির করা হয়। কয়েকজন আসামির অনুপস্থিতির কারণে সময় চায় আসামিপক্ষ। ফৌজদারি কার্যবিধি ও সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী, অভিযুক্তদের সামনে সাক্ষ্য নিতে হয়, তাদের বিরুদ্ধে বা পক্ষে কে কী সাক্ষ্য দিলো তা শোনাতে হয়।
কিন্তু সামাদসহ কয়েকজন আসামির অনুপস্থিতির কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০(ক) ধারার বিধান অনুযায়ী আসামিদের আদালতে হাজিরা থেকে রেহাই দিয়ে কেবল তাদের কৌঁসুলি হাজির থাকলেই সাক্ষ্য নেওয়া যাবে বলে দরখাস্ত জমা দেওয়া হয়।
এ প্রস্তাবে বাধা দেন রাষ্ট্রপক্ষ। আসামিপক্ষের আইনীজীবী ফারুক আহাম্মদসহ কয়েকজনের সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদে জড়ান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল সমাদ্দার।
দেড় বছরের মধ্যে বিচার শেষের আশা
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলা উচ্চ আদালতের আদেশে প্রায় ছয় বছর স্থগিত থাকার পর ২০২২ সালে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। তবে ইমারত বিধি না মেনে ভবন তৈরির মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত রয়েছে।
রানা প্লাজা ধসের পরপর বেশ কয়েকটি মামলা হলেও এ দুটিই মূল মামলা। দুই মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানা কারাগারে থাকলে অধিকাংশ আসামি জামিনে বা পলাতক রয়েছেন।
মামলার মূল আসামি সোহেল রানা গত বছরের ৬ এপ্রিল হাই কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন। তবে আপিল বিভাগ সেই জামিন স্থগিত করে দেওয়ায় এখনো মুক্তি পাননি তিনি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল সমাদ্দারের ভাষ্য, অবকাশের কারণে ডিসেম্বরে আদালত বসেনি। তার আগে নভেম্বরের ১৬, ১৭ ও ৩০ নভেম্বরে সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। মাসে তিনটি করে তারিখ রাখা হবে সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ১০ তলা রানা প্লাজা ভবন ধসে পড়ে। ওই ভবনে থাকা কয়েকটি পোশাক কারখানার ৫ হাজারের মতো শ্রমিক তার নিচে চাপা পড়েন।
কয়েক দিনের উদ্ধার তৎপরতায় ১ হাজার ১৩৬ জনের লাশ তুলে আনা হয়। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক আহত ও পঙ্গু হন।
ঘটনার পাঁচদিন পর ২৯ এপ্রিল ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে সোহেল রানাকে যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
মামলা দায়েরের দুই বছরের বেশি সময় পর ২০১৫ সালের ১ জুন তদন্ত শেষে দুটি অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর।
এর একটিতে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগে ভবন মালিক সোহেল রানা, তার বাবা-মা এবং তৎকালীন সাভার পৌরসভার মেয়র ও কমিশনারসহ ৪১ জনকে আসামি করা হয়। আর ইমারত বিধি না মেনে রানা প্লাজা নির্মাণের অভিযোগে অপর অভিযোগপত্রে সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়।
দুই অভিযোগপত্রে মোট আসামি ছিলেন ৪২ জন। এর মধ্যে সোহেল রানাসহ ১৭ জন দুটি মামলারই আসামি। আসামিদের মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকল সাক্ষীদের আমরা পাব না। আর সব সাক্ষীর সাক্ষ্য দরকারও নেই। সামনের দেড় বছরের মধ্যে মামলার বিচার শেষ করতে চেষ্টা থাকবে। দেখা যাক কতদূর সফল হই।”
হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণে গতি
ঢাকার জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া এবং রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি বিমল সমাদ্দারের উদ্যোগে এ মামলা গতি ফিরে পায়।
এর আগে অভিযোগ উঠেছিল, কয়েকজন আসামির আবেদনে উচ্চ আদালত থেকে দেওয়া স্থগিতাদেশের কপি অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে জজ আদালতে আসছে না, দিনের পর দিন তা পড়ে থাকছে।
২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকার তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান ৪১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে হত্যা মামলার বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন।
এ মামলায় অভিযুক্ত ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন কেবল ভবন মালিক সোহেল রানা। আসামিদের মধ্যে রানার বাবা আব্দুল খালেক ওরফে কলু খালেক, আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন এরইমধ্যে মারা গেছেন।
অভিযোগ গঠনের পরপর সাভার পৌরসভার তৎকালীন মেয়র রেফায়েত উল্লাহ এবং তৎকালীন কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী খানসহ আটজন মামলা বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। তাদের আবেদনে হাই কোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করে।
উচ্চ আদালতের ওই স্থগিতাদেশে আটকে যায় মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া। পরে মোহাম্মদ আলী খান বাদে অন্য আসামিদের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়।
অভিযোগ গঠনের সাড়ে পাঁচ বছর পর ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার আদালতে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।