অনুসরণ নয়, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দেবে: প্রধানমন্ত্রী

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব যাতে সমাজে আরও বিভাজন সৃষ্টি না করে সে বিষয়টি নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন সরকার প্রধান।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2023, 04:23 PM
Updated : 15 June 2023, 04:23 PM

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (ফোরআইআর) সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি যেন মানবতাকে আঘাত করার জন্য ব্যবহৃত না হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকর সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নিতে হবে।

বাসস জানায়, বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ‘নিউ ইকোনমি অ্যান্ড সোসাইটি ইন স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে এই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব যাতে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি না করে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন সরকার প্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সরঞ্জামগুলোকে যেন আমাদের মানবতাকে আঘাত বা ক্ষুন্ন করে এমন কাজে নিয়োজিত করা না হয়

“আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, ফোরআইআর আমাদের সমাজের মধ্যে আরও বিভাজন তৈরি করবে না। এই উদ্দেশ্যে আমাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকর সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে।”

তার সরকার দেশের তরুণদের নিয়ে এই পদক্ষেপ শুরু করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমাদের ছেলে-মেয়েরা শুধু ফোরআইআর-কে অনুসরণ করবে না, বরং প্রকৃতপক্ষে এর নেতৃত্ব দেবে।

“দেশের শিক্ষার্থীরা রোবোটিকসে যে ধরনের উদ্ভাবনী কাজ করছে। আমরা সারাদেশে যে উদ্ভাবন মেলার আয়োজন করে আসছি, সেখানেও তাদের মধ্যে দারুণ উৎসাহ দেখেছি।”

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অবশ্যই ডব্লিউইএফ- এর সঙ্গে একটি স্বাধীন ফোরআইআর কেন্দ্রকে স্বাগত জানাবে।

সরকার ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে ফোরআইআর- এর জন্য যথাযথ আইন, নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির জন্য কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস, ন্যানোটেকনোলজি ইত্যাদি বিষয়ে পৃথক জাতীয় কর্ম-কৌশল তৈরি করেছি। এ লক্ষ্যে সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি, ন্যানোটেকনোলজি এবং অন্যান্য বিষয়ে বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট স্থাপন করছে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের নেওয়া স্মার্ট গভর্নেন্স বিষয়টিও আলোচনায় এনে বলেন, “ভবিষ্যতে রাজনৈতিক নেতাদের বিকাশের জন্য আমরা স্মার্ট লিডারশিপ একাডেমিও চালু করেছি।

“তাই বাংলাদেশ একটি গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট তৈরির বিষয়ে জাতিসংঘের কাজে আগ্রহী। আমরা আশা করি যে, এই গ্লোবাল কমপ্যাক্টে ডিজিটাল ও সীমান্ত প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ও উৎপাদনশীল ব্যবহারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে।”

এ সময় সাইবার-আক্রমণ, বিভ্রান্তিকর তথ্য ও অন্যান্য অপকর্মের বিরুদ্ধে সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখার উপর জোর দেন শেখ হাসিনা।

‘মহামারীতে ডিজিটাল কাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহার’

কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতিতে ‘ব্লেন্ডেড শিক্ষার অপার সম্ভাবনা’ সরকারের চোখ খুলে দিয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা মহামারীর সময়ে দেশব্যাপী ডিজিটাল কাঠামোর সম্পূর্ণ সুবিধা গ্রহণ করেছি। আমরা শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনলাইনে চালু করেছি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাজ কমবেশি নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে গিয়েছে।

“সরকার সারাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে দৈনিক লেকচার সেশন সম্প্রচারের ব্যবস্থা করে সংসদ টিভি চ্যানেলকে একটি শিক্ষা চ্যানেলে পরিণত করেছে।”

শেখ হাসিনা আরও বলেন, সব পাঠ্যপুস্তক অনলাইনে আপলোড করে বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটি শিক্ষার বিষয়বস্তু এবং মডেল ক্লাস লেকচার আপলোড করার জন্য ‘মুক্তপথ’ নামে একটি অ্যাপ চালু করেছে তার সরকার।

“আমরা শিক্ষকদের অনলাইন শিক্ষার পদ্ধতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের অভিযোজন করার ব্যবস্থা করেছি,” যোগ করেন তিনি।