সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে লেখা কমিটির তালিকা সংসদের রেকর্ডরুমে সংরক্ষণের ঘোষণা দেন স্পিকার।
Published : 04 Feb 2024, 11:35 PM
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের দ্বিতীয় বৈঠকে ৫০টি সংসদীয় কমিটির মধ্যে ১২টি সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি সংসদ সম্পর্কিত এবং বাকিগুলো মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
রোববার গঠন হওয়া কমিটিগুলোর মধ্যে কার্যউপদেষ্টা কমিটি ও সংসদ কমিটি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর মনোনয়নে গঠন করা হয়।
সংসদ নেতার অনুমতি নিয়ে চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বাকি ১০টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রস্তাব করেন। পরে তা কণ্ঠ ভোটে পাস হয়।
এদিনের বৈঠকে স্পিকার বলেন, সংসদের দ্বিতীয় বৈঠকের মধ্যে সব স্থায়ী কমিটি গঠন সংসদকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর স্বহাতে লেখা কমিটির তালিকা সংসদের রেকর্ডরুমে সংরক্ষণ করা হবে।
কমিটির নাম প্রস্তাবের আগে চিফ হুইপ বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ৫০টি কমিটির সবগুলোই নিজে হাতে লিখে তৈরি করে দিয়েছেন। সংসদ চাইলে একদিনেই সবগুলো কমিটি গঠন করা সম্ভব হবে।
কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শেষে স্পিকার বলেন, “দ্বাদশ সংসদ অধিবেশনের প্রথম অধিবেশনের দ্বিতীয় বৈঠকে সকল সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।”
কার্য উপদেষ্টা কমিটি
স্পিকার শিরীন শারমিন কার্য উপদেষ্টা কমিটির নাম ঘোষণা করেন।
সভাপতি - স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী নিজেই।
সদস্য - সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, রাশেদ খান মেনন, গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের, আনিসুল হক, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, শামসুল হক টুকু, দীপু মনি, নূর-ই-আলম চৌধুরী, এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন।
সংসদ কমিটি
সভাপতি – চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী (মাদারীপুর-১)।
সদস্য - র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩), ইকবালুর রহিম (দিনাজপুর-৩), আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন (জয়পুরহাট-২), আবু জাহির (হবিগঞ্জ-৩), আশেক উল্লাহ রফিক (কক্সবাজার-২), কাজী নাবিল আহমেদ (যশোর-৩), ছানোয়ার হোসেন (টাঙ্গাইল-৫), সাজ্জাদুল হাসান (নেত্রকোনা-৪), এস এম শাহজাদা (পটুয়াখালী-৩) ও এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান (কুড়িগ্রাম-১)।
সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি
সভাপতি - ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ (জাতীয় পার্টি)।
সদস্য - কুমিল্লা-১ আহম মুস্তাফা কামাল, দিনাজপুর-৫ মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা-২ কামরুল ইসলাম, জয়পুরহাট-২ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ ফয়জুর রহমান, কিশোরগঞ্জ-৩ মজিবুল হক, মানিকগঞ্জ-৩ জাহিদ মালেক, নওগাঁ-৩ সুরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, জামালপুর-১ নূর মোহাম্মদ, গাজীপুর-৫ আখতারউজ্জামান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ এস এ কে একরামুজ্জামান।
সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি
সভাপতি - জামালপুর-৫ আবুল কালাম আজাদ।
সদস্য - নোয়াখালী-২ মোরশেদ আলম, নেত্রকোনা-২ আশরাফ আলী খান খসরু, কক্সবাজার-১ সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, ফেনী-১ আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, লালমনিরহাট-২ নুরুজ্জামান আহমেদ, নাটোর-৪ সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী ও নরসিংদী-২ আনোয়ারুল আশরাফ খান।
অনুমিত হিসাব কমিটি
সভাপতি - ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম।
সদস্য - মাদারীপুর-১ নূর-ই-আলম চৌধুরী, ঢাকা-১ সালমান ফজলুর রহমান, কুষ্টিয়া-৩ মাহবুব-উল আলম হানিফ, খুলনা-৪ মো. রশীদুজ্জামান, নরসিংদী-১ মো. নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা-৭ প্রাণ গোপাল দত্ত, রাজশাহী-৫ আব্দুল ওয়াদুদ ও রাজশাহী-৬ শাহরিয়ার আলম।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি
সভাপতি - সুনামগঞ্জ-৪ মোহাম্মদ সাদিক।
সদস্য - ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী (ফরহাদ হোসেন), মাদারীপুর-১ নূর-ই-আলম চৌধুরী, মাগুরা-২ বীরেন সিদকার, ময়মনসিংহ-২ শরীফ আহমেদ, চট্টগ্রাম-১২ মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, ফরিদপুর-২ শাহদাব আকবর, রাজশাহী-৩ আসাদুজ্জামান আসাদ ও গাইবান্ধা-২ শাহ সারোয়ার কবীর।
সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটি
সভাপতি - সুনামগঞ্জ-৫ মহিবুর রহমান মানিক।
সদস্য - কুমিল্লা-১১ মুজিবুল হক, চাদঁপুর-৫ রফিকুল ইসলাম, ঢাকা-১৫ কামাল আহমেদ মজুমদার, চাদঁপুর-৪ শফিকুর রহমান, রাজশাহী-১ ওমর ফারুক চৌধুরী ও কুড়িগ্রাম-১ কে এম এম মোস্তাফিজুর রহমান।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি
সভাপতি - নারায়ণগঞ্জ-১ গোলাম দস্তগীর গাজী।
সদস্য - ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী (জাহাঙ্গীর কবির নানক), ঝিনাইদহ-৪ আনোয়ারুল আজিম আনার, নরসিংদী-২ আনোয়ারুল আশরাফ খান, সিরাজগঞ্জ-৫ আব্দুল মোমিন মন্ডল, ঢাকা-১১ ওয়াকিল উদ্দিন, টাঙ্গাইল-৭ খান আহমেদ শুভ, বগুড়া-৬ রাগিবুল আহসান রিপু ও ঝিনাইদহ-২ মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।
বেসামিরক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি
সভাপতি - নেত্রকোনা-৪ সাজ্জাদুল হাসান।
সদস্য - ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী (মুহম্মদ ফারুক খান), কক্সবাজার-২ আশেকুল্লাহ রফিক, লক্ষ্মীপুর-১ আনোয়ার হোসেন খান, বাগেরহাট-২ শেখ তন্ময়, চট্টগ্রাম-১০ মহিউদ্দিন বাচ্চু, মৌলভীবাজার-২ শফিউল আলম চৌধুরী ও ঢাকা-১৯ খসরু চৌধুরী।
শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি
সভাপতি - ঝালকাঠী-২ আমির হোসেন আমু।
সদস্য - ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী/ প্রতিমন্ত্রী (নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন), ঢাকা-১৫ কামাল আহমেদ মজুমদার, জামালপুর-৩ মির্জা আজম, নারায়ণগঞ্জ-৪ শামীম ওসমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আবদুল ওদুদ, টাঙ্গাইল-৪ আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ময়মনসিংহ-৪ মুহিতুর রহমান, ময়মনসিংহ-৭ এবিএম আনিসুজ্জামান।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি
সভাপতি - সিরাজগঞ্জ-৪ শফিকুল ইসলাম।
সদস্য-ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী (তাজুল ইসলাম), বরিশাল-১ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, ঢাকা-৬ সাঈদ খোকন, টাঙ্গাইল-৫ ছানোয়ার হোসেন, লালমনিরহাট-৩ মতিয়ার রহমান, কুষ্টিয়া-১ রেজাউল হক চৌধুরী, নোয়াখালী-৬ মোহাম্মদ আলী এবং আরও একজন সংসদ সদস্য রয়েছেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি
সভাপতি - মাদারীপুর-২ শাজাহান খান।
সদস্য - ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী (সাধন চন্দ্র মজুমদার), পাবনা-৩ মকবুল হোসেন, ভোলা-৪ আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, বগুড়া-৭ মোস্তফা আলম, রংপুর-২ আবুল কালাম মো. আহসানুল আলম, খুলনা-৩ এস এম কামাল হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ এস এ কে একরামুজ্জামান, খান মো. বগুড়া-৩ সাইফুল্লাহ আল মেহেদি।
সাধারণ আলোচনা শুরু
দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনের যাত্রাকালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের দেওয়া ভাষণের ওপর এদিন ধন্যবাদ প্রস্তাব আনা হয় সংসদে।
চিফ হুইপ এ প্রস্তাব আনলে সমর্থন জানান হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। পরে ওই ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়।
গত মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) যাত্রা শুরু করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ।
ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর প্রথম দিনের আলোচনায় আটজন সংসদ সদস্য অংশ নেন।
আলোচনায় সরকারি দলের সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান বলেন, কানাডার আদালত সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিএনপিকে অ্যাখায়িত করেছে।
“আমরা একাধিকবার বলেছি জঙ্গি সংগঠন যতদিন রাজনীতিতে বিচরণ করবে ততদিনই বাংলাদেশের ভোগান্তি হবে। এ সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল করা হোক, নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক।”
প্রত্যাশা পূরণ ও দেশের কল্যাণে এমপিদের কাজ করার তাগিদ স্পিকারের
নৈরাজ্যের রাজনীতি ছেড়ে কল্যাণের পথে আসার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
সরকারি দলের সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল কঠিনতম, চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন। বিএনপি-জামায়াত এই নির্বাচন বানচাল করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করেছিল। সাংবিধানিক শূন্যতা হতো এটাই ছিল তাদের লক্ষ্য।”
তারেক রহমানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, লন্ডনে বসে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্টু হবে। এর মধ্য দিয়ে যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে তিনি তাদের স্বাগত জানাবেন। প্রধানমন্ত্রী তার কথা রেখেছেন।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের মডেল এখন সারা বিশ্বে রোল মডেল।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ৭ জানুয়ারি তার নির্বাচনি এলাকায় অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন পরিশ্রম করে নির্বাচনের মাঠ যথাসম্ভব নিরপেক্ষ রেখেছিলেন।
তিনি বলেন, দুর্নীতি এখন জাতীয় সমস্যা। এককভাবে কেউ এজন্য দায়ী নন। সম্মিলিতভাবে চেষ্টা না করলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। দোষারোপ করে সমস্যা সমাধান হবে না।
দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করার প্রস্তাব করেন তিনি।