মন্ত্রী বলেছিলেন, পিটার হাস তার কাছে জানতে চান, ২৮ অক্টোবর ঢাকার প্রবেশপথ বন্ধ করা হবে কি না। পরে দূতাবাস বিবৃতি দিয়ে জানায়, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
Published : 23 Oct 2023, 08:54 PM
এবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, রোববার সচিবালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বৈঠকে ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সেই বৈঠক নিয়ে মন্ত্রী ও ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ভিন্ন বক্তব্যের পর সোমবার এই বিজ্ঞপ্তি দেয় মন্ত্রণালয়।
তবে যে বক্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক, সেই ‘সড়ক বন্ধের বিষয়ে’ আলোচনা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি এতে। মন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূতের মধ্যে কথোপকথনের বিস্তারিত তুলেও ধরা হয়নি।
মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “অত্যন্ত সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত সৌজন্য সাক্ষাতে আসন্ন নির্বাচন, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ, চলমান দুর্গাপূজা, মিয়ানমার হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিষয় এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় মান্যবর রাষ্ট্রদূত উল্লিখিত বিষয়সমূহ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ও মতামত জানতে চেয়েছেন।
“সৌজন্য সাক্ষাতের পর মাননীয় মন্ত্রী মিডিয়া ব্রিফিং করেন। মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের প্রেক্ষাপটে পূর্বাপর আলোচনার মর্মার্থ এবং তথ্যের ভিত্তিতে মাননীয় মন্ত্রী আলোচনা বহির্ভূতও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।”
তবে বৈঠকে আগামী শনিবার বিএনপির সমাবেশের দিন রাস্তা বন্ধ হওয়া নিয়ে রাষ্ট্রদূত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন কি না, সে বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে কিছু বলা হয়নি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছিলেন
রোববার সেই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বৈঠকে তিনি (হাস) জানতে চেয়েছেন বিএনপি যে একটি বিরাট কর্মসূচি দিয়েছে সেখানে অনেক লোক নিয়ে আসবে, তোমরা রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেবে কি না কিংবা তোমরা অন্য কিছু করবা কি না।”
জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ঢাকা আসা তো সবারই প্রয়োজন, একটা রোগীর ঢাকা আসা প্রয়োজন, বিদেশে যেতে হলে ঢাকায় আসা প্রয়োজন। সবকিছু তো ঢাকাকেন্দ্রিক। কাজেই আসা-যাওয়া বন্ধ করার কোনো প্রশ্নই আসে না।
“তারা (বিএনপির নেতাকর্মী) আসবে তারা যাবে, সেখানে আমরা কোনো বাধা দেব না কিংবা আমরা সেটার কোনো চিন্তাও করছি না। আমরা শুধু এটুকুই বলব, তারা যাতে কোনো ভায়োলেন্স লিপ্ত না হয়, চলাচলের জায়গাটি তারা যাতে সচল রাখে। এটুকুই আমাদের রিকোয়েস্ট, সেটা আমরা তাকে জানিয়েও দিয়েছি।”
যা বলেছে দূতাবাস
মন্ত্রীর এই বক্তব্য আলোড়ন তুললে রাতে প্রতিক্রিয়া জানায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার এক বিবৃতিতে বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বৈঠকে ২৮ অক্টোবর ঢাকার রাস্তা বন্ধের বিষয়ে আলোচনা হয়নি।
“শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও রাজনৈতিক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপবিহীন অংশগ্রহণের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছেন রাষ্ট্রদূত হাস।”
২৮ অক্টোবর কী হতে যাচ্ছে
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি আগামী ২৮ অক্টোবরের এ সমাবেশের ঘোষণা দেয় গত ১৮ অক্টোবর।
কর্মসূচির ডাক দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সেদিন থেকে তাদের আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা’ হবে।
এরপর আওয়ামী লীগ নেতারাও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে থাকেন। বিএনপির কর্মসূচির দিন জমায়েতের ঘোষণা এসেছে ক্ষমতাসীন দলের তরফেও। বলা হয়েছে, সেখানেও হবে ‘মহাযাত্রা’।
বিএনপিকে ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বরের বিভাগীয় সমাবেশের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সমাবেশটি বিএনপি করতে চেয়েছিল নয়া পল্টনে, পরে নানা ঘটনার পর হয় সায়েদাবাদের গোলাপবাগ মাঠে।
২৮ অক্টোবরের সমাবেশ নিয়ে রাজনৈতিক বাদানুবাদ ও উত্তেজনার মধ্যে রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনেকটা নমনীয় বক্তব্য রাখেন। ২৮ অক্টোবর নেতা-কর্মীদেরকে সড়কে বসে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, সেদিন সমাবেশ শেষে নেতা-কর্মীরা যার যার অবস্থানে ফিরে যাবেন এবং পরে কর্মসূচির অপেক্ষায় থাকবেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ‘রাস্তা বন্ধ’ নিয়ে আলোচনা হয়নি: যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস
২৮ অক্টোবর সড়ক বন্ধ? হাসের প্রশ্নে কামালের জবাব, ‘ওরা যেন সহিংসতা না করে’