প্রায় ২০-৩০ জন গাড়ি ঘেরাও করে, সঙ্গে কটুক্তি। তখন জানালা খুলে পুলিশের খোঁজ করতেই মারধর শুরু করে। চালক ও গানম্যানকেও বাদ রাখেনি, বলছিলেন তিনি।
Published : 02 Nov 2022, 11:25 PM
ঢাকার নয়া পল্টনের কাছে সড়কে হামলার শিকার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এজন্য বিএনপিকে দায়ী করে দলটির সভা-সমাবেশে ‘নিষেধাজ্ঞা’ চেয়েছেন।
বুধবার বিকালে হামলার ঘণ্টা কয়েক পর রাতে পল্টন থানায় সাংবাদিকদের কাছে তিনি ওই সময়কার ঘটনা ও আক্রমণকারীদের আক্রোশের বর্ণনা দেন।
তিনি বলেন, “এখন তারা (বিএনপি) দাবি করছে তাদের কর্মসূচি হবে শান্তিপ্রিয়। কী ধরনের শান্তিপ্রিয় তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ তো আমি আজকেই দেখলাম। এরপরে আমার দাবি তাদের এই মিটিং আর চলতে দেওয়া ঠিক হবে না।“
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “কারণ আজকে আমাকে আক্রমণ করেছে, কালকে তো আরও অনেককেই আক্রমণ করতে পারে। আরও অনেকেই আছেন তাদের লিস্টে। তারা নির্বাচনের আগে যে তিন মাস জ্বালাও-পোড়াও করেছিল সে কথা কিন্তু আমরা ভুলে যাইনি।”
হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষার পর অবসরপ্রাপ্ত এ বিচারক পূর্ব নির্ধারিত বেসরকারি একটি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেখান থেকে ফিরে রাতে তিনি পল্টন থানায় আসেন।
পরে এ ঘটনায় বিচারপতির গানম্যান কনস্টেবল রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে পল্টন মামলা দায়ের করেন।
এতে ৪০-৫০ জন অজ্ঞাতনামা বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান এ থানার ওসি সালাহউদ্দীন মিয়া।
বিএনপির একটি মিছিল থেকে এ হামলা হয় বলে অভিযোগ এসেছে। হামলার নিন্দা জানিয়ে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির বিবৃতিতেও বিএনপিকে দায়ী করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে বিএনপির কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি।
গুরুত্বপূর্ণ অনেক মামলার রায়দানকারী বিচারপতি মানিক দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারকের দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৬ সালে অবসর নেন। তিনি এখন ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিতে সক্রিয় রয়েছেন।
রাত নয়টার দিকে থানায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হামলার সেই কয়েক মিনিট তুলে ধরার সময় তিনি জানান, ২০-৩০ জনের একটি জমায়েত প্রথমে তার গাড়ি ঘিরে ধরে আক্রমণের উদ্যোত হলে এক পর্যায়ে নিরুপায় বোধ করেছিলেন।
বিকালে ওই সড়ক ধরে তিনি বেসরকারি টেলিভিশন একুশে টিভিতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। গাড়িটি যখন পল্টন থানার সামনে তখন তিনি সামনে ‘বিএনপি-জামায়াতের’ জমায়েত দেখতে পান।
তিনি বলেন, “আমি ভাবলাম সামনে জমায়েত এখন যেতে পারব কি না। দেখলাম কিছুক্ষণ পরেই জমায়েত যারা নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা মাইকে ঘোষণা দিচ্ছেন যে সব গাড়ি নির্বিঘ্নে যেতে পারবে। কাউকেই থামান হবে না। ঘোষণা শুনে আমরা আশ্বস্ত হয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছিলাম।
“সামনে দেখলাম একটা পুলিশের গাড়ি। আমার গানম্যান ছিল পুলিশের। সেই গাড়িতে থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে আমার গানম্যান গিয়ে কথা বলল। তারা (পুলিশ) বলল আপনারা আসেন, অসুবিধা হবে না।”
এর পরপরই আচমকা হামলার শিকার হন অবসরপ্রাপ্ত এ বিচারক। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু কিছুক্ষণ এগোনোর পর কয়েকজন চেঁচিয়ে উঠল ‘এই যে মাইনক্যা যায়’। ধরো একে। তখন প্রায় ২০-৩০ জন মানুষ আমার গাড়ি ঘেরাও করে ফেলল। আমি তো নিরুপায়। তখন আমার সঙ্গে পুলিশও (গানম্যান) নেই।
“এখন কী হবে এজন্য আমি জানালা খুলে পুলিশের খোঁজ করতে গেলাম তখুনি তারা দরজা খুলে আমাকে মারধর শুরু করল। আমার নাকে, মুখে, হাতে, আমার পুরো মুখমণ্ডলে তারা কয়েকজন বেধড়ক ঘুষি মারা শুরু করল। এবং তাদের স্লোগান ‘এই আওয়ামী দালাল মানিককে এখনি শেষ কর’।“
বিকাল সাড়ে চারটার দিকের এ ঘটনায় শুধু তার ওপর হামলা করেই দুর্বৃত্তরা থেমে থাকেনি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার ড্রাইভারকেও মারল, এর মধ্যেই আমার গানম্যান যখন ফিরে এল তাকেও মারল। লাথি দিয়ে, লাঠি দিয়ে বাড়ি মেরে গাড়ির তারা ক্ষতি করেছে। এখন এই হল অবস্থা।”
হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার বিষয়ে বিচারপতি মানিক বলেন, “ডিএমপি কমিশনার সাহেব আমাকে ফোন করেছেন। তিনি বলেছেন, হয়ত সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আক্রমণকারীদের চেনা যাবে। উনি আশ্বাস দিয়েছেন সেটি তিনি করবেন।”
এর আগে হামলার পরপরই একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, “তিনি (বিচারপতি মানিক) যখন গাড়িতে নয়া পল্টনের রাস্তা ধরে যাচ্ছিলেন, তখন বিএনপির সমাবেশ থেকে তার নাম ধরে আপত্তিকর স্লোগান দেওয়া হয় এবং তার উপর শারীরিকভাবে হামলা করা হয়। একই সঙ্গে বিএনপির সন্ত্রাসীরা তার গাড়ি ভাঙচুর করে এবং গাড়ির ড্রাইভারকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।”
এর ঘটনার পর সন্ধ্যায় পল্টন থানার ওসি সালাহউদ্দীন মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, “ওনার গানম্যান রফিক থানায় এসে জানিয়েছে, একটি মিছিল থেকে তাদের গাড়িতে হামলা হয়েছে। উনি একটা প্রোগ্রামে আছেন। সেখান থেকে থানায় আসার কথা রয়েছে তার।”
রফিক পুলিশকে বলেছেন, বিকাল ৪টা থেকে সোয়া ৪টার দিকে এই ঘটনাটি ঘটে। বিএনপির একটি মিছিল থেকে এ হামলা হয়।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় রয়েছে।