“আমি সুস্থ বাচ্চা দিয়ে গেছি, আইসা লাশ পাইলাম। শুনছি ডে কেয়ারে ও বালতির পানিতে পড়ে গেছিল,” বলছিলেন শিশুটির মা।
Published : 20 Dec 2023, 07:10 PM
রাজধানীর আজিমপুরে সরকারি ‘মধ্যবিত্ত ডে কেয়ার সেন্টারে’ ১১ মাসের এক শিশুর মৃত্যুর পর পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন তার বাবা-মা।
শিশুটির মা ইসমাত আরা বলছেন, “আমি সুস্থ বাচ্চা দিয়ে গেছি, আইসা লাশ পাইলাম। শুনছি ডে কেয়ারে ও বালতির পানিতে পড়ে গেছিল।”
বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লালবাগ থানার ওসি খন্দকার হেলাল উদ্দিন।
সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে ঢাকা শহরে ছয়টি মধ্যবিত্ত ও আটটি নিম্নবিত্ত ডে-কেয়ার সেন্টার পরিচালিত হয়। শিশুর মৃত্যুর খবর পেয়ে যোগাযোগ করা হলে আজিমপুর মধ্যবিত্ত ডে কেয়ার সেন্টারের ডে কেয়ার অফিসার রেজিনা ওয়ালি বলেন, “একটা বাচ্চা মারা গেছে।”
কীভাবে শিশুটির মৃত্যু হল জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার এখানে ডিডি স্যার, সচিব স্যাররা আছেন। তারা বিষয়টি দেখছেন।”
শিশুটি কীভাবে মারা গেল তা ডে কেয়ার সংশ্লিষ্ট কেউ স্পষ্ট করে বলছেন না। পুলিশ বলছে, শিশুটির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে, ময়নাতদন্তে বোঝা যাবে কী করে তার মৃত্যু হল।
আজিমপুর ডে কেয়ার সেন্টারে মারা যাওয়া শিশুটির নাম উম্মে আলিফা। তার মা ইসমাত আরা আজিমপুরে ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে চাকরি করেন। শিশুটির বাবা আলামিন তালুকদার একটি কোম্পানিতে প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার। তারা লালবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।
শিশুটির মা ইসমাত জানান, দুজনেই কর্মজীবী হওয়ায় তারা তাদের ২ বছর তিন মাস বয়সী ছেলে আরাবিয়া এবং ১১ মাসের উম্মে আলিফাকে আজিমপুরের সরকারি ওই ডে কেয়ার সেন্টারে রেখে কাজে যান। বিকেলে এসে শিশুদের নিয়ে বাসায় ফেরেন।
ইসমাত আরা বলেন, প্রতিদিনের মত বুধবার সকালে তার সুস্থ দুই সন্তানকে ডে কেয়ার সেন্টারে রেখে কর্মস্থলে যান তিনি। দুপুরে ডে কেয়ার থেকে ফোন করে তাকে জানানো হয়, তার ছোট মেয়ে ১১ মাসের আলিফা অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তাকে তারা হাসপাতালে নিচ্ছেন।
খবর পেয়ে দ্রুত আজিমপুর ডে কেয়ার সেন্টারের উদ্দেশে রওনা হন এই মা। পথেই দেখতে পান, তার মেয়েকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের দিকে যাচ্ছেন ডে কেয়ারের লোকজন। পরে তিনি তাদের গাড়িতে করেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান।
সেখানে প্রথমে জরুরি বিভাগে শিশুটিকে নেওয়া হয়। দুপুর ২টার দিকে শিশুটিকে হাসপাতালের শিশু বিভাগে নেওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসকরা পরীক্ষার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ইসমাত আরার অভিযোগ, বাচ্চার মৃত্যুর পর পর ডে কেয়ারের লোকজন ‘কেটে পড়ে’। তিনি বলেন, “এই মৃত্যুর দায় ডে কেয়ার সেন্টারের।”
ডে কেয়ারের বিরুদ্ধ অবহেলার অভিযোগ তুলে ইসমাত আরা বলেন, “মাস খানেক আগেও ডে কেয়ারের স্টাফদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ করেছিলাম। আমার ছেলের পিঠে কামড়ের দাগ ছিল, কীভাবে হয়েছে তা তারা বলতে পারে না।”
খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে আসেন শিশুটির বাবা আল আমিন। তিনি বলেন, “ডে কেয়ারে সন্তানদের রেখে যাই নিরাপত্তায় থাকবে, সার্বক্ষণিক টেককেয়ারে থাকবে এজন্য। তারা আমার সন্তানকে হত্যা করেছে। তা না হলে যারা হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল, তারাও পালিয়ে গেল কেন?”
মৃত্যুর খবর শুনে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতনরা হাসপাতালে ছুটে যান। তবে কীভাবে শিশুটি মারা গেছে এ প্রশ্নের উত্তর ডে কেয়ার সংশ্লিষ্ট কারো কাছে পাওয়া যায়নি।
তবে শিশুটাকে নিয়ে আসা লোকজন হাসপাতালে বলাবলি করেছিলেন, শিশুটি বিছানা থেকে পড়ে গিয়েছিল; তার মাথায় আঘাত ছিল।
আজিমপুর সরকারি ডে কেয়ারে শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ শুনে লালবাগ থানার ওসি খন্দকার হেলাল উদ্দিন ঢাকা মেডিকেলে যান। সেখানে তিনি বলেন, “আমরা শিশুটির পরিবারের অভিযোগ শুনে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। শিশুটির দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।”