Published : 22 Jul 2023, 07:10 PM
জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে রাজধানীর হাজারীবাগের জমি ব্যবসায়ী মো. এখলাছকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যা করান ট্যানারি মালিক মনির হোসেন ওরফে কোম্পানি মনির। এছাড়া এখলাছের দ্বিতীয় স্ত্রীকে ঘিরেও মনিরের সঙ্গে তার মনোমালিন্য ছিল।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ট্যানারি মালিক মনির হোসেন ওরফে কোম্পানি মনিরসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর এমনটাই জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা অন্যরা হলেন- মনির হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারী ঝন্টু মোল্লা, মো. এসাহাক, আব্দুর রহমান ওরফে কাল্লু ও মো. ফয়সাল।
শনিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে এক সংবাদ সম্মেলনে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের ঘটনা তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ভূমি ব্যবসায়ী এখলাছের সঙ্গে কোম্পানি মনিরের পুরনো যোগাযোগ। এখলাছকে দিয়ে বিভিন্ন সময় জমি দখল ও বেচাকেনা করিয়েছেন মনির। কামরাঙ্গীরচরে একটি দাগে তাদের পাশপাশি জমি রয়েছে। সেখানে এখলাছের জমি আছে ৪০ শতাংশ।
“ওই জমি সরকার অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং অধিগ্রহণ মূল্য বাবদ ৯০ কোটি টাকা পাস হয়েছে। এখান থেকে মনিরের প্রাপ্য ৩৫ কোটি টাকা। কিন্তু এখলাছ পুরো টাকাটা তাকে দেওয়ার আবেদন করে। আবার মনিরও পুরো টাকাটা একাই গ্রাস করতে চেষ্টা-তদ্বির করতে থাকেন। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসক পুরো টাকাটাই আটকে দেন। এতে মনির ভাবতে থাকেন ৯০ কোটি দূরের কথা তার ভাগের ৩৫ কোটি টাকাই পাচ্ছেন না।”
এছাড়া এখলাছের দ্বিতীয় স্ত্রী বিথীকে ঘিরেও তাদের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয় জানিয়ে হারুন বলেন, “বিথীর সঙ্গে এখলাসের সঙ্গে বিয়েটা মনিরই দিয়েছিলেন। বিয়ের পরে এখলাস জানতে পারেন, মনিরের সঙ্গে বিথীর একটা সম্পর্ক আগে থেকেই ছিল, যা বিয়ের পরেও বহাল আছে। এটা নিয়েও মনিরের সঙ্গে এখলাছের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এসব নিয়ে এখলাছকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মনির।”
মনির যেভাবে এখলাছকে হত্যার পরিকল্পনা করেন, তার বিস্তারিত তুলে ধরে হারুন অর রশীদ বলেন, “কয়েকমাস আগে তিনি (মনির) ওমরা করতে যাওয়ার আগে ‘কাজ’ সমাধা করতে ভাড়াটে খুনিদের নির্দেশ দিয়ে যান। তবে তারা এখলাছকে খুন করতে ব্যর্থ হলে ঈদের আগে নিজের ব্যক্তিগত সহকারী ঝন্টু মোল্লাকে ২০ লাখ টাকা দিয়ে এখলাছকে হত্যার নির্দেশ দেন।
“ঝণ্টু ১১ লাখ টাকায় কিলার ফয়সাল আর কাল্লুকে ভাড়া করেন। আর হত্যার ঘটনা সমন্বয় করেন এসাহাক। পরে ঈদুল আজহার আগের রাতে এখলাছকে হাজারীবাগ থানাধীন একটি টেইলার্সের ভেতরে নিয়ে হত্যা করা হয়। ঈদের দিন কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মনির ওরফে কোম্পানি মনিরের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। ঢাকায় আসার পর একসময় তিনি হাজারীবাগের ট্যানারিতে দৈনিক ২০ টাকা মজুরিতে চামড়া পরিষ্কারের কাজ করতেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ওই এলাকার সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দীন পিন্টুর পৃষ্ঠপোষকতায় তার উত্থান শুরু হয়।
তার অস্ত্রের যোগানদাতা ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন। কাঁচা চামড়ার পাশাপাশি ভূমি দখল ও ভূমি ব্যবসায় নেমে পড়েন মনির।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, এখন মনির অন্তত ছয়টি ট্যানারির মালিক।
হারুন বলেন, ২০০২ সালে বেঁড়িবাধ এলাকায় সিকদার পেট্রোল পাম্পের সামনে রুহুল আমিন নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার মামলায় মনিরকে আসামি করা হলেও তখনকার সংসদ সদস্যের সহায়তায় সেই মামলা থেকে রেহাই পান তিনি।
পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৫ সালে ইমনের বাহিনী দিয়ে গুন্ডা জসীম নামের আরেক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ ওঠে মনিরের বিরুদ্ধে। সেই মামলা থেকেও পরে মুক্ত হন তিনি।