যমুনা ‘ছোট করার’ পরিকল্পনার সব নথি চাইল হাই কোর্ট

পাউবোর পরিকল্পনা বলছে, বর্ষা মৌসুমে যমুনা নদী কোথাও কোথাও ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত হচ্ছে; এত চওড়া নদীর প্রয়োজন নেই, এটিকে সাড়ে ৬ কিলোমিটারে নামিয়ে আনা হবে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2023, 01:46 PM
Updated : 28 May 2023, 01:46 PM

যমুনা নদী ‘ছোট করার’ প্রকল্পের নথি তলব করেছে হাই কোর্ট; আগামী ১১ জুনের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) এসব নথি আদালতে জমা দিতে হবে।

জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মোহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।

মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ -এইচআরপিবির পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন আইনজীবী এই রিট আবেদন করেন।

আদালতে রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘যমুনা নদী ছোট করার চিন্তা’ শিরোনামে একটি দৈনিকে প্রকাশিত গত ১১ মার্চের প্রতিবেদন যুক্ত করে এ মাসের প্রথম সপ্তাহে জনস্বার্থে এ রিট আবেদন করা হয়।

তিনি বলেন, “যমুনা নদী ছোট করার প্রকল্প নেওয়ার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ -এর বিধি ২ অনুসারে অসদাচরণ করেছেন। তাই বিধি ৩ অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয় আবেদনে। সেই সঙ্গে রুল চেয়েছি।”

গত ২১ মে হাই কোর্ট প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের তালিকা চায়। সেই সঙ্গে প্রকল্পটি চূড়ান্ত করা হয়েছে কিনা এবং প্রকাশিত প্রতিবেদনটির সত্যতা কতটুকু, তা জানতে চায় আদালত।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ এসব তথ্য জানাতে সময় চাইলে হাই কোর্ট প্রকল্পের নথি তলব করে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা কীভাবে অসদাচরণ করেছেন, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ -এর ২ বিধিতে অসদাচরণের সংজ্ঞা দেওয়া আছে।

“সে সংজ্ঞা অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীরা সরকারের নির্দেশ অমান্য করলে অসদাচরণ হয়। আর কোনো কর্মচারীর অসদাচরণ প্রমাণ হলে বিধি ৩ অনুসারে সে কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।”

এ আইনজীবী বলেন, “নদী খনন করে প্রবাহ ঠিক রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে, একনেকের সিদ্ধান্তও আছে। আরেকটা সিদ্ধান্ত আছে নদী-খাল-জলাশয় দখল করে কোনো প্রকল্প নেওয়া যাবে না। ফলে যেসব কর্মকর্তারা এই প্রকল্প নিয়েছেন তারা সরকারের সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন। এটা অসদাচরণ। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।”

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা নদীকে ছোট করার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা অনুসারে দেশের দুটি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে গ্রোয়েন বাঁধ দিয়ে নদী ছোট করা হবে।

পাউবোর এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে যমুনা নদী চওড়া হচ্ছে। নদী কোথাও কোথাও ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত হচ্ছে। এতে নদীভাঙন বাড়ছে।

পাউবো মনে করে, এত চওড়া নদীর প্রয়োজন নেই। এটি সঙ্কুচিত করে সাড়ে ৬ কিলোমিটারে নামিয়ে আনা হবে। যমুনা নদী ছোট করলে দুটি সুফল পাওয়ার কথা বলছে তারা। একটি হলো, নদীর ভাঙন কমবে। অন্যটি বিপুল পরিমাণে ভূমি পুনরুদ্ধার করা যাবে।